ভোটের লড়াইটা তার শরীরের সঙ্গেও

বোরহান উদ্দিন
| আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:৩৭ | প্রকাশিত : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৭:২৫

এক পায়ে শক্তি নেই। সেটা জন্ম থেকেই। তো কী হয়েছে? তার কোনো কাজ কখনো আটকে থাকেনি। এমনটি সুস্থ মানুষ যা করে না, তিনি এমনটিও করেছেন বহুবার। এবার তিনি আছেন ভোটের লড়াইয়ে।

ঢাকা-১৯ (সাভার) আসনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন তাদের একজন ইদ্রিস আলী। এক পা আর ক্র্যাচে ভর করেই চলছে তার প্রচার। মার্কা হারিকেন। প্রার্থী জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) এর।

এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ফাইভ পেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় থেকে আইন ও বিচার বিভাগ থেকে ¯œাতক শেষ করেছেন। এবার প্রথমবারের মতো দাঁড়িয়েছেন ভোটে। জয়ের স্বপ্ন নয়, তিনি একটা ঝাঁকি দিতে চান।

প্রতীক পাওয়ার পর থেকে নিজের নিজের মত করে প্রচার প্রচার চালাচ্ছেন ইদ্রিস আলী। জানিয়েছেন সবাই তাকে সহানুভূতির সঙ্গে দেখেন।

ইদ্রিস বলেন, ‘দেশের প্রথম কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে এবার ভিন্ন কিছু করে দেশকে দেখাতে চাই। আমি হারলে আমি নিজে হারব, আমি জিতলে তরুণরাই জিতবে।’

প্রতিবন্ধীদের ভিক্ষা করতে দেখলে তার খারাপ লাগে। তাই তাদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে ‘ভিক্ষা নয়, শিক্ষা চাই’ নামের একটি আন্দোলন কর্মসূচিও পালন করেন ইদ্রিস। জানান, তার একটা স্লোগান আছে, ‘বি বিগার নট বেগার’।

ভোটে কী আশা করছেন- এমন প্রশ্নে ইদ্রিস বলেন, ‘জয় পরাজয় থাকবেই। কিন্তু আমি সবসময় প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করে যেতে চাই। সেক্ষেত্রে সংসদে কাজ করার সুযোগ পেলে অবশ্যই সৌভাগ্যবান মনে করবো। একজন প্রতিবন্ধী মানুষকেও যাতে ভিক্ষা করতে না হয় সেই স্বপ্ন দেখি।’

‘আমার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া এটা একটি সামাজিক আন্দোলন। ইতিমধ্যে আমার ইচ্ছা শক্তির কথা শুনে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে পরিচিত ২০ থেকে ২৫ জন স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এটা মনে করি এক ধরনের সফলতা।’

সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হলে সর্বনি¤œ বয়স হতে হয় ২৫। ইদ্রিস এবারই ভোটে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা পেয়েছেন। মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের দিনে তার বয়স ছিল ২৫ বছর দুই মাস ১০দিন। এবার তার চেয়ে কম বয়সী কেউ ভোটে নেই।

ইদ্রিস অনেক জেদী। তিনি সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে চান। ঘুরেছেন দেশের প্রতিটি জেলা। যা নিয়ে শারীরিকভাবে সক্ষম অনেকে ঈর্ষা করতে পারেন।

নির্বাচনে ইদ্রিসের স্লোগান ‘অ্যাবিলিটি ডিজএবিলিটি ডিপেন্ডস অন মেন্টালিটি’। মানে প্রতিবন্ধত্ব আছে কি নেই এটি নির্ভর করে মানসিকতার ওপর।

ইদ্রিস আলীর জন্ম ১৯৯৩ সালে মাগুরাতে। বাবা মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড়। এক পা সরু হওয়ায় সেটায় ভর করে চলতে পারেন না। তাই সব সময়ের ভরসা ক্র্যাচ।

চলতি বছর তিনি প্রতিবন্ধী মানুষদের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কাজের জন্য ‘এশিয়া ইনস্পিরেশন’ পুরস্কারঅর্জন করেন। গত ৩০ নভেম্বর শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোতে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের নেতাদের উপস্থিতিতে তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। তিনি প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়কও।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করা এই মানুষটি ‘আমিই চ্যাম্পিয়ন’ নামের একটি বই লিখেছেন। ১৪ বছর বয়সে তিনি পবিত্র কোরআনের হাফেজ হন।

ক্র্যাচে ভর করে জয় করেছেন এক হাজার ২০ ফুট উচ্চতার চন্দ্রনাথ পাহাড়। ২১ কিলোমিটার দৌড় প্রতিযোগিতা ঢাকা হাফ ম্যারাথন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল থেকে গাজীপুরের নুহাশপল্লী পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার একদিনে হেঁটেছেন ইদ্রিস আলী।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :