পঞ্চগড়ে ভর্তি কোচিং বাণিজ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা

প্রকাশ | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:০০

সফিকুল আলম, পঞ্চগড়

পঞ্চগড়ে এবারও ভর্তি কোচিং বাণিজ্য করেছেন দুই সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। প্রাইভেট কোচিং নীতিমালা উপেক্ষা করে তারা প্রায় ২০ দিন পড়িয়েই হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এতে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বিদ্যালয় দুটির ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনেক অভিভাবক।

গতকাল শেষ হয়েছে পঞ্চগড় বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা। দুই শিফটে ২৪০টি করে আসনের এ বছর ভর্তির ফরম পূরণ করেছে যথাক্রমে ৮৭৪ জন ছাত্রী ও এক হাজার ১২১ জন ছাত্র। গত ২৬ নভেম্বর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকেই বিদ্যালয় দুটির প্রায় ১৫ জন শিক্ষকের কাছে ভর্তি কোচিং করেছে তাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম তার বাসায় পালাক্রমে সারাদিন দুইশরও বেশি শিক্ষার্থীকে ভর্তি কোচিং করান। আবু তালেবসহ প্রতিষ্ঠানটির আরও একাধিক শিক্ষক এবং বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকও তাদের বাসা বা ভাড়াকৃত বাড়িতে প্রকাশ্যেই কোচিং বাণিজ্যে মেতেছিলেন।

পরীক্ষা শেষে গতকাল অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন, ওই শিক্ষকদের কাছে পড়ালে ভর্তির সুযোগ হতে পারে- এমন ধারণা করে প্রতি বছর প্রতারিত হচ্ছেন অধিকাংশ অভিভাবক। এবার তারাও প্রতারিত হলেন। কারণ প্রশ্নপত্র মিলিয়ে দেখা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় পঞ্চম শ্রেণির বই থেকেই প্রশ্ন করা হয়েছে। আর ভর্তি কোচিং বাণিজ্যে জড়িত এসব শিক্ষক স্ব স্ব ক্লাসে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বই পড়ান।

তাদের অভিযোগ, প্রায় ২০ দিন পড়ানোর বিনিময়ে প্রতিজনের কাছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে। এভাবে ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে একেকজন শিক্ষক হাতিয়ে নিয়েছেন ৫-৭ লাখ টাকা।

পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি ভর্তি কোচিং করাতে চাইনি। কিন্তু অভিভাবকদের অনুরোধে তাদের সন্তানদের পড়াতে হয়েছে। অনেকেই পড়ান, আমিও কয়েকজনকে কোচিং করাই। তবে তিন হাজার করে টাকা নেওয়ার তথ্য সঠিক নয়।’

পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেখা রানী দেবী বলেন, ‘প্রাইভেট কোচিং নীতিমালা অনুসারে স্কুলে কারও কোচিং করানোর সুযোগ নেই। বাইরে কোনো শিক্ষক কি করছেন, সেটা কীভাবে বলা সম্ভব? চিকিৎসকরাও তো চাকরির বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। অন্য এলাকার শিক্ষকরাও এমন কোচিং করান। আমরা কাকে কি বলব?’

পঞ্চগড় বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জোবায়ের ইসলাম বাদল বলেন, ‘ভর্তি কোচিং করানো আমাদের কাজ নয়। কারা এমন কোচিং করেছেন, এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। তাদের বিষয়ে আপনাদেরও দেখার দায়িত্ব রয়েছে।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) গোলাম আজম বলেন, ‘সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেসব শিক্ষক ভর্তি কোচিং করিয়েছেন, তাদের আসলে নীতি-আদর্শ বলে কিছু নেই। কোন শিক্ষক এমন কোচিং করাচ্ছেন, আমাদের জানাও নেই। প্রয়োজনে এমন শিক্ষকদের তালিকা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’