প্লাস্টিক আবর্জনায় বিপন্ন মেরু অঞ্চল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:৩৪

পরিবেশ দূষণের সমস্যা উত্তর মেরু এলাকার সমুদ্রের নিচেও পৌঁছে গেছে। মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা মাছের শরীরে প্রবেশ করে মানুষের খাদ্য শৃঙ্খলেও প্রবেশ করছে। গবেষকরা তথ্য সংগ্রহ করে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে চাইছেন। সম্প্রতি গবেষকরা উত্তর মেরুর তুষারের নিচে অভিনব জীববৈচিত্র্য আবিষ্কার করেছেন। সেখানে ছোট চিংড়ির পাশাপাশি সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে প্রবালও পাওয়া গেছে। কিন্তু সেই পরিবেশ বিশাল হুমকির মুখে রয়েছে।

জার্মানির আলফ্রেড-ভেগেনার ইনস্টিটিউটের এক গবেষক দল সেই এলাকার কিছুটা দক্ষিণে প্লাস্টিক জঞ্জাল ও অন্যান্য আবর্জনার ছবি তুলেছেন। খবর ডয়চে ভেলের।

গত ১৫ বছর ধরে মেলানি ব্যার্গমান মেরু এলাকার সমুদ্রে আবর্জনার দিকে নজর রাখছেন। সেসব দেখে মন খারাপ হওয়াই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে, জেলেদের ব্যবহৃত জালের প্রান্ত। এটাও প্লাস্টিক আবর্জনার উদাহরণ। এমনকি আড়াই কিলোমিটার গভীরে সমুদ্রের তলদেশেও প্লাস্টিকের এমন অনেক অংশ দেখা যায়।’

গবেষকরা ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে তাদের পরীক্ষার ক্ষেত্রের নাম রেখেছেন ‘বাড়ির বাগান’। ১৯৯৯ সাল থেকে সেখানে দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ চালানো হচ্ছে। মেলানি ব্যার্গমান ও তার সহকর্মীরা প্রায় প্রতি বছরই সেখানে যান। ওশেন ফ্লোর অবজারভেশন সিস্টেম কাজে লাগিয়ে তারা সমুদ্রের তলদেশের ছবি তোলেন। লম্বা এক তারের মাধ্যমে তলদেশ থেকে এক মিটার উচ্চতায় ক্যামেরা চালিয়ে গোটা সময় জুড়ে উচ্চমানের ছবি তোলা হয়।

গবেষকরা বিভিন্ন বছরে তোলা ছবি তুলনা করে দেখেছেন। ফলাফল সত্যি বড় বেদনাদায়ক। ব্যার্গমান বলেন, ‘উত্তরের স্টেশনে জঞ্জাল প্রায় ২০ গুণ বেড়ে গেছে। একটি ফুটবল মাঠের সমান এলাকায় আগে যেখানে আড়াইটি অংশ পাওয়া যেত, এখন তা বেড়ে ৬০ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাও জনবসতি থেকে এত দূরের মেরু এলাকায়।’

মেরু এলাকার সমুদ্রের তলদেশ এখন গোটা বিশ্বের সবচেয়ে নোংরা সামুদ্রিক এলাকাগুলির অন্যতম। ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে এর তুলনা করা যায়, যেখানে জঞ্জালের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। ব্যার্গমান বলেন, ‘আমি অবশ্যই হতাশ হয়েছি। সমুদ্রের তলদেশের সুন্দর জগত নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ছবিগুলি দেখলে শুধু আবর্জনা চোখে পড়ে। কেইবা এমনটা চায়!’ মেরু সাগরে এমন উচ্চ মাত্রার দূষণের একটি সম্ভাব্য কারণ অবশ্যই সামুদ্রিক স্রোত। গাল্ফ স্ট্রিম বা উপসাগরীয় প্রবাহ দক্ষিণের অঞ্চলগুলি থেকে জঞ্জাল উত্তরে বয়ে আনে এবং পানির গভীরে ঠেলে দেয়।

এভাবে এখানে আবর্জনার স্তূপ সৃষ্টি হচ্ছে। মেরু সাগর গোটা বিশ্বের আবর্জনার পাহাড় হয়ে উঠছে। খালি চোখে দেখা যায়, এমন প্লাস্টিক জঞ্জাল এই সমস্যার একটা অংশমাত্র। সূর্যালোক ও সমুদ্রের সংস্পর্শে এসে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিকের ক্ষয় হয়। তখন মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা সৃষ্টি হয়। গত কয়েক বছর ধরে গবেষকরা বারবার সমুদ্রের তলদেশের নমুনা সংগ্রহ করে তার মধ্যেমাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ পরীক্ষা করেছেন। চলতি বছর পরীক্ষা চালিয়ে আরো দুঃসংবাদের আশঙ্কা করছেন তারা।

ব্যার্গমান বলেন, ‘উত্তর মেরু মহাসাগরের আড়াই কিলোমিটার গভীরে তলদেশ থেকে এই নমুনা সংগ্রহ করেছি। এবার তার মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বিশ্লেষণ করবো। গত বছরে একই ধরনের নমুনার মধ্যে আমরা প্রায় এক থেকে দেড় হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা শনাক্ত করেছিলাম। সেই মাত্রা যথেষ্ট বেশি।’

অতীতে গবেষকরা দূষণের মাত্রা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না। বিশ্লেষণের জন্য উপযুক্ত পদ্ধতিরও অভাব ছিল। এখন তলদেশের মাটির মধ্য থেকে প্রত্যেকটি কণা আলাদা করে ফিল্টার করা সম্ভব। এমনকি কালো ও লাল কণা গুনে তার ছবি তোলাও সম্ভব। সেই দৃশ্য অবশ্য মোটেই সুখকর নয়। মেরু গবেষক ব্যার্গমান বলেন, ‘মাটির মধ্যে অতি ক্ষুদ্র কণা ঢুকে গেছে। সেগুলি কোনোদিন আলাদা করতে পারব না। এসব খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করবে এবং সমুদ্রের তলদেশ প্লাস্টিকে ভরে যাবে।’

গবেষকরা বেশিরভাগ সামুদ্রিক প্রাণীর শরীরেও প্লাস্টিক শনাক্ত করেছেন। প্রায়ই সেগুলি তাদের শরীরে সংক্রমণ ও বিষক্রিয়া ঘটায়। তার ফলে শুধু প্রাণীদেরই ক্ষতি হয় না। মেলানি ব্যার্গমান বলেন, আজকাল মাছ, শামুক বা চিংড়ি খেলে ধরে নিতে হবে যে, সঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিকও পেটে ঢুকছে। অর্থাৎ সমুদ্রের মধ্যে জঞ্জাল শুধু মেরু অঞ্চলের প্রাণিজগতের সমস্যা নয়। এমন পরিবেশ-বিপর্যয় আমাদের সবার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।

(ঢাকাটাইমস/১৯ডিসেম্বর/এসআই)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

তীব্র গরমে বিশ্বব্যাপী বছরে ১৯ হাজার শ্রমজীবীর মৃত্যু

গাজা ইস্যুতে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো 

ফের দফায় দফায় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল তাইওয়ান

ইরানে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিজেরাই ধ্বংস করে ইসরায়েল!

মালদ্বীপে সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর দল

পাকিস্তান সফরে ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি 

ব্যর্থতার দায় নিয়ে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা প্রধানের পদত্যাগ 

২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করলো কলকাতা হাইকোর্ট

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান তুরস্কের

সিরিয়ায় মার্কিন ঘাঁটিতে ইরাকি সশস্ত্র গোষ্ঠীর রকেট হামলা  

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :