নির্বাচনের আগেও কমিটি না পেয়ে ছাত্রলীগে ক্ষোভ

এন এইচ সাজ্জাদ
| আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:৫১ | প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:৩৪

ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব দায়িত্ব নিয়েছেন প্রায় পাঁচ মাস। এর মধ্যেও ক্ষমতাসীন দলের ভাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠনটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনকালীন সমন্বয় কমিটি করেছে তারা। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করায় নেতাকর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েছে ছাত্রলীগ। তবে শীর্ষ নেতৃত্ব বলছে, নির্বাচনের পরেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে।

গেল ৪ ডিসেম্বর হঠাৎ করে এক বর্ধিত সভায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ঘোষনা দেন ‘১০ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে’। সেই সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুল কাদের ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক উপস্থিত ছিলেন।

তার আগের ৩ ডিসেম্বর দেশের ৮টি বিভাগে নির্বাচনকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করার জন্য ছাত্রলীগের ১৬ নেতাকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যেখানে ‘সমন্বয়ক’ হিসেবে রাখা হয়নি সদ্য বিদায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) হল শাখা ছাত্রলীগের কোন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে।

ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে এ প্রতিবেদককে বলেন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সেদিন সভায় দেশের ৬৪টি জেলা ইউনিটের প্রধানরা (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পূনাঙ্গ কমিটি ঘোষনার জন্য একটা তারিখ (১০ই ডিসেম্বর) ঘোষনা করল কিন্তু সেই তারিখে আর কমিটি ঘোষনা হল না। ফলে তৃনমূলের নেতৃবৃন্দরা হতাশ হলো। তাদের কাছে ছাত্রলীগ সম্পর্কে একটা খারাপ বার্তা গেল, যা কাম্য নয়।’

তবে তেমন কোনো ঘোষনা দেননি দাবি করেছেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি নির্বাচনের পরে করব। আমি বলেছিলাম ১০ই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনকালীন সমন্বয় কমিটি দেওয়া হবে, পূণাঙ্গ কমিটি নয়।’

কিন্তু সেদিনের বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন বলছেন, সভাপতি সেদিন পূর্নাঙ্গ কমিটির কথা বলেছিলেন। আর সেটা সবাই জানে। নির্বাচনকালীন সমন্বয় কমিটির কোনো প্রসঙ্গ সেখানে ছিল না। সমন্বয় কমিটি নিয়েও তাদের মধ্যে ছড়িয়েছে ক্ষোভ। তাদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়, শিবির-ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ও বেশি বয়সের ‘অনেককেই’ এই কমিটিতে রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিক ছাত্রলীগের এক নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভাগীয় উপ-কমিটিগুলোতে রাজনীতিতে ছিল না এমন নেতাকর্মীকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ছদ্মবেশী দুয়েকজনকে দায়িত্ব দেয়া নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

বেশি আলোচনা হচ্ছে ‘জহির আহমেদ খান’ নামে ছাত্রলীগের এক নেতাকে সিলেট বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে। কারণ জহিরের ভাই গুলজার খান হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। বর্তমানে যুবদলের একটি শক্তিশালী বলয়ের নেতৃত্ব দেন তিনি। এছাড়া গুলজার হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি জি কে গউছের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।

সাবেক কয়েকজন নেতা বলছেন, নেতাকর্মীরা পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রত্যাশা করাটা স্বাভাবিক। নির্বাচনের আগে কমিটি দিলে পদধারীরা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দিত। এখন কমিটি না হওয়ায় তারা হতাশ। অনেকেরই কোন পদ-পদবী নেই, ফলে নির্বাচনের আগেই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ চাইলেই পূর্নাঙ্গ কমিটি দিতে পারত’।

এদিকে ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ একটি গ্রুপ সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের (সোহাগ-জাকির) সাথে রাজনীতি করা নেতাকর্মীদের পূর্নাঙ্গ কমিটি থেকে বাদ দিতেই কমিটি দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে আসছেন। তাদের দাবি, ত্যাগী ও আগের কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের রাজনীতি করা নেতাকর্মীদের বাদ দিতেই ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে ঘোষণা দিয়েও কমিটি দেয়া হয়নি।

তাহলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে নাগাদ দেয়া হবে জানতে চাইলে গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘এখন সারাদেশে নির্বাচনী আমেজ। আমরা আগেও একবার বলেছিলাম, নির্বাচনের পরে কমিটি পূর্নাঙ্গ করা হবে।’

গত ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষিত হয়।এরও আড়াই মাস আগে সংগঠনটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :