সাতক্ষীরায় জামায়াতের দুই প্রার্থী কারাগারে, বিএনপি ‘ঘরে’

বেলাল হোসাইন
 | প্রকাশিত : ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:৪৩

সাতক্ষীরার চারটি সংসদীয় আসনে নৌকার পক্ষে জমজমাট প্রচার চললেও প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-জামায়াতের তেমন কোনো আওয়াজ নেই। বিএনপি জেলার দুটি আসন জামায়াতকে ছেড়ে দিয়ে যাদের প্রার্থী করেছে, তারা নাশকতার বহু মামলার আসামি। আর এরই মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপির দুই প্রার্থীর পক্ষেও প্রচার চোখে পড়ে না সেভাবে।

চারটি আসনের তিনটিতে আছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। একটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টিকে। এই প্রার্থীও লড়ছেন নৌকা নিয়ে। আর বিএনপি জামায়াতকে যে দুটি আসন দিয়েছে, তারাও পেয়েছেন ধানের শীষ। ফলে চারটি আসনেই নৌকা ও ধানের শীষেই হবে লড়াই।

অবশ্য একটি আসনে নৌকার পাশাপাশি মহাজোটের দুই শরিক জাতীয় পার্টি ও বিকল্পধারার একজন করে শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন।

চারটি আসনেই জনসমাগমস্থলে চোখে পড়ছে নৌকার পোস্টার, লিফলেটে ছেয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকা।

জেলা বিএনপির সভাপতি রহমত উল্লাহ পলাশের অভিযোগ, তারা মাঠে নামছেন না, এমন নয়, তাদের নামতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদের প্রচার মাইক ভাঙচুর করা হচ্ছে, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা-১

তালা ও কলারোয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এই সংসদীয় আসনে মোট প্রার্থী সাতজন। নৌকা নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, ধানের শীষ নিয়ে বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব, লাঙ্গল নিয়ে জাতীয় পার্টির সৈয়দ দিদার বখত, কাস্তে নিয়ে সিপিবির আজিজুর রহমান, হাতপাখা নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের এফ এম আছাদুল হক, আম নিয়ে এনপিপির আব্দুর রশিদ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা এস এম মুজিবর রহমান।

এখানে নৌকা, ধানের শীষ ও লাঙ্গলের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের একাংশের সমর্থন পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থীও লড়াইয়ে থাকতে পারেন।

ভোটের হিসাব যা-ই হোক, প্রচারে এগিয়ে আওয়ামী লীগ। মাঝে মাঝে জাতীয় পার্টির মাইকিং শোনা গেলেও অন্য কারও প্রচার নেই।

জেলা ছাত্রসমাজের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হোসেনের অভিযোগ, গত ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তাদের প্রার্থীর প্রচারে হামলা হয়েছে।

২০০১ সালে শেখ হাসিনা সাতক্ষীরায় গেলে তার ওপর হামলার মামলায় আসামি বিএনপির প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিব। এ ছাড়া নাশকতার ১৭টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে, ফলে তিনিও নেই প্রচারে।

বিএনপির নেতা আলতাফ হোসেন ও মৎস্যজীবী দলের নেতা আমান হত্যা মামলার আসামি হাবিব। জেলা বিএনপির বড় একটি অংশই তার সঙ্গে নেই। তারপরও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।

হাবিবের দাবি, তার নামে থাকা অধিকাংশ মামলাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার। প্রায় সব কয়টি মামলায় এখন জামিনে আছেন তিনি। প্রচারে নামতে পারছেন না আওয়ামী লীগ ও পুলিশের বাধার কারণে।

গত ১৪ ডিসেম্বর কলারোয়া উপজেলা সদরে গণসংযোগের সময় তাদের ওপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা করে বলেও অভিযোগ বিএনপির প্রার্থীর। এ ঘটনায় উল্টো তিনিসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।

২০১৩ ও ২০১৪ সালে নজিরবিহীন নাশকতা হয় এই নির্বাচনী এলাকায়। জামায়াত-শিবিরের তা-বের স্মৃতি এখনো তাজা। আর সে সময় ভুক্তভোগী হাজারো মানুষ এবার নৌকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

সাতক্ষীরা-২

সদর আসনে প্রার্থী পাঁচজন। নৌকা নিয়ে লড়ছেন আওয়ামী লীগের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, ধানের শীষে জামায়াতের আব্দুল খালেক। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির মাতলুব হোসেন লিয়ন (লাঙ্গল), বামগণতান্ত্রিক জোটের নিত্যানন্দ সরকার, এনপিপির জুলফিকার আলী ও ইসলামী আন্দোলনরে রবিউল ইসলাম আছেন ভোটে।

এখানে নৌকার পক্ষে দিনভর চলছে গণসংযোগ, পথসভা। মাঝেমধ্যে লাঙ্গলের দু-একটি গণসংযোগের খবর পাওয়া গেলেও জামায়াতের কোনো প্রকাশ্য তৎপরতা নেই।

গত ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা লক্ষ করা গেলেও বর্তমানে তারা নিষ্ক্রিয়।

শুরু থেকেই আত্মগোপনে থাকা জামায়াতের প্রার্থী স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ভোট চেয়েছেন। বাকি সব তৎপরতা চলছে গোপনে।

জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান জানান, তাদের প্রার্থী খালেকের বিরুদ্ধে ৩৮টি মামলার আসামি। গত ২৬ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এখনো বের হতে পারেননি। গত ২৯ নভেম্বর লিখিতভাবে সাতক্ষীরার রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘আমাদের ধারণা ছিল এবার সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কিন্তু ধানের শীষের পোস্টার ছেঁড়া, তাদের মাঠে নামতে না দেওয়া এবং পুলিশি হয়রানির কারণে তাদের সে গতি নষ্ট হয়েছে।’

তবে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুন-উর রশিদ বলেন, ‘জামায়াত নেতা কারাগারে থাকলেও তার কর্মীরা বসে নেই। বিশেষ করে মহিলা কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গোপনে ভোট প্রার্থনা করছেন।’

গত ১০ বছরে সাতক্ষীরায় মেডিকেল কলেজ, বাইপাস সড়ক, আধুনিক সদর হাসপাতাল হয়েছে। আর এই বিষয়গুলোই তুলে ধরছে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

সাতক্ষীরা-৩

আশাশুনি, দেবহাটা ও কালীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীই পেশায় চিকিৎসক। নৌকা নিয়ে লড়ছেন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হক। আর ধানের শীষ নিয়ে লড়ছেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শহীদুল আলম।

জামায়াতের শক্তিশালী এলাকা হিসেবে পরিচিত আসনটিতে রুহুল হক ২০০৮ সালে এই আসনে জিতে টানা দুবারের সংসদ সদস্য। তবে এবার জামায়াতকে না ছেড়ে চিকিৎসকের মোকাবেলায় আরেক চিকিৎসকের ওপর ভরসা করেছে বিএনপি।

রুহুল হকের ছেলে জিয়াউল হক সুমন ঢাকা টাইমসকে জানান, তারা ভোটারদের বলছেন উন্নয়ন ও শান্তির কথা। আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশের চিত্রের স্বপ্নও দেখাচ্ছেন। ‘তারুণ্যের প্রথম ভোট, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হোক’- এই প্রচার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নির্বাচনী এলাকায়।

বিএনপির প্রার্থীও এখানে সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। আর রোগী দেখার কারণেই ব্যাপকভাবে পরিচিত। তিনি রুহুল হককে বেশ ভালোভাবেই চ্যালেঞ্জ করবেন- এটা স্পষ্ট।

তবে রুহুল হকের তুলনায় শহীদুল আলমের প্রচার কম। কারণ জানতে চাইলে তিনি সরকারি দলের বাধা ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের অভিযোগ করেছেন।

গত ১৯ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে শহীদুল বলেন, ১৮ ডিসেম্বর রাতে তার নির্বাচনী কার্যালয় থেকে প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েও কোনো ফল পাননি।

সাতক্ষীরা- ৪

শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসনে এবার দ্বিমুখী নাকি ত্রিমুখী-চতুর্মুখী লড়াই হবে, এ নিয়েই চলছে আলোচনা।

এস এম জগলুল হায়দার লড়ছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। জাতায়াতের গাজী নজরুল ইসলাম লড়ছেন ধানের শীষ নিয়ে। লাঙ্গল নিয়ে লড়ছেন জাতীয় পার্টির আবদুস সাত্তার মোড়ল আর কুলা নিয়ে বিকল্পধারার এইচ এম গোলাম রেজা।

গোলাম রেজা ২০০৮ সালে লাঙ্গল নিয়ে হারান বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী গাজী নজরুল ইসলামকে।

নৌকার পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা নির্বাচনী এলাকা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন জগলুল হায়দার।

গত ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে নিজ বাড়ি থেকে আটক হন জামায়াত নেতা গাজী নজরুল। তার বিরুদ্ধে নাশকতার ৩০টির মতো মামলা আছে।

বিকল্পধারার প্রার্থী এইচ এম গোলাম রেজাও তার প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করছেন। তার দাবি, গত ১৯ ডিসেম্বর রাতে তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :