ফরিদপুর-৩ আসনে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
| আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:৫১ | প্রকাশিত : ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:২২
নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখছেন ফরিদপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী খন্দকার মোশাররফ হোসেন

ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে মুখর নৌকার স্লোগানে। অথচ দেড় দশক আগেও ভিন্ন ছিল দৃশ্যপট। পিছিয়ে ছিল ক্ষমতাসীন দল। কিন্তু ২০০৮ সালে আসনটি নিজের করে নেওয়ার পর পরিস্থিতি পুরোপরি পাল্টে দেন ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তার হাতের ছোঁয়ায় বদলে গেছে সব। উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা এলাকা এখন আধুনিক নগর। প্রভাব পড়েছে জনসমর্থনেও।

তিন সপ্তাহের প্রচারে খন্দকার মোশাররফের প্রতিটি পথসভায় উপচে পড়েছে জনতা। সেই তুলনায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর জমায়েতগুলো ছিল একেবারেই ছোট। নৌকার প্রার্থীর হাত ধরে বিএনপি ছেড়ে এসেছেন বহু নেতাকর্মী।

এই আসনে গত এক দশকে যে উন্নয়ন হয়েছে স্বাধীনতার পর ৩৭ বছরে তা করতে পারেনি কেউ। আর এই দিন বদলের রূপকার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এসব কাজে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন সাধারণ মানুষের হৃদয়ে।

পদ্মার ভাঙন থেকে বাঁচতে শহর রক্ষা বাঁধ, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নÑবাকি নেই কিছুই। তৈরি হয়েছে ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ। আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। নিরাপত্তা ফিরেছে জনজীবনে। এক সময়ের ত্রাসের নগরী ফরিদপুর এখন নিরাপদ জনপদ।

১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জিতে মন্ত্রী হয়েও এলাকার উন্নয়নে বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসূফ কী করেছেন, সেটা বলতে পারেন না তার ভক্তরাও। এবারের নির্বাচনে দুই মন্ত্রীর কাজের তুলনা যখন উঠে এসেছে, তখন কামাল ইউসুফ বেকায়দায়।

২০০৮ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের মধ্য দিয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংসদ সদস্য হন। দিনবদলের যাত্রা হয়েছিল তখনই। প্রথমবার সংসদ সদস্য হওয়ার পর স্থান পান মন্ত্রিসভাতেও। শুরুতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য হলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি।

দুই দফা মন্ত্রিত্বের শুরু থেকেই ফরিদপুরবাসীকে দেওয়া উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি রাখতে নিরলস কাজ করে যান কর্মবীর খন্দকার মোশাররফ হোসেন। পদ্মার ভাঙনে যখন বিলীন হতে বসেছিল ফরিদপুরের নদীকূলের মানুষ, তখন ত্রাণকর্তা হয়ে পাশে দাঁড়ালেন তিনি। বাঁধ দিয়ে ভাঙন ঠেকালেন। হাজারো মানুষের আশ্রয় বাঁচালেন। রক্ষা করলেন ফরিদপুর শহর।

স্থানীয়রা বলছেন, সাধারণ মানুষের ভাগ্যান্নোয়নে খন্দকার মোশাররফ ফরিদপুরের মানুষের জন্য আশীর্বাদ। যিনি কথায় নয়, কাজে বিশ^াসী। ৩০ ডিসেম্বর নৌকায় ভোট দিয়ে জনগণ অন্তপ্রাণ এই মানুষটিকে আবারও জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদে পাঠাতে চান তারা। শহরের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, পাড়া-মহল্লা, অলিগলি, দোকানপাটে শুরু নৌকার জয়গান। গানে গানে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে চলছে প্রচারণা।

যোগাযোগ ব্যবস্থায় গত ১০ বছরের উন্নয়ন বিস্ময়কর। শুধু ফরিদপুর সদর নয়, পদ্মার ওপারের মানুষের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নাগরিক সেবাকেন্দ্র, শহরের শোভা বর্ধন, এমনকি সুস্থ বিনোদন নিশ্চিতের জন্য উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে নিয়েছেন তার প্রাণের ফরিদপুরকে।

প্রশাসনিক গুরুত্ব বাড়াতে পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনের মর্যাদায় উন্নীত হতে যাচ্ছে ফরিদপুর। ‘পদ্মা’ নামে যে বিভাগ ঘোষণা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র, তার কেন্দ্র হবে ফরিদপুর। উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এমন এক টুকরো জমিও খুঁজে পাওয়া যাবে না ফরিদপুরে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য খন্দকার মোশাররফ উন্নয়নের পাশাপাশি এলাকাকে করেছেন নিরাপদ। এককালে সন্ত্রাসের জনপদে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা এখন বেশ উন্নত।

বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে এই অঞ্চলে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন-রাহাজানির যে মচ্ছব ছিলÑগত ১০ বছরে ধুয়ে-মুছে সব বিদায় হয়েছে।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ আসনে বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল মানবতাবিরোধী অপরাধী আলী আহসান মুজাহিদকে। ভরাডুবি হয় তার। বিপুল ভোটে জিতে সংসদ সদস্য হন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ২০১৪ সালে নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ফরিদপুরের মানুষের জন্য আশীর্বাদ। তিনি গত ১০ বছরে এই অঞ্চলের উন্নয়নে যা করেছেন অতীতের কোনো সরকার কয়েক দশকেও তা পারেনি। জেলায় আওয়ামী লীগের ঘাঁটিকে মজবুত করা এবং দলকে সুসংগঠিত করার পেছনেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি ফরিদপুর-৩ আসনে বিকল্পহীন।’

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মৃধা বলেন, ‘ফরিদপুর-৩ আসনের মানুষ সব সময়ই উন্নয়নবঞ্চিত ছিল। দিনের পর দিন পদ্মা নদীর ভাঙনে কত মানুষের সংসার বিলীন হয়েছে। কেউ তাদের দিকে ফিরেও তাকাননি। খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এই অঞ্চলের মানুষের দুঃখ ঘুচেছে। উন্নয়নে দিন বদল হয়েছে।’

কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মোল্যা বলেন, ‘খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিকল্পহীন নেতা। তিনি আমাদের আস্থা এবং ভরসার আশ্রয়। আমাদের অভিভাবক। ফরিদপুরবাসী তার কাছে চিরঋণী।’

এক দশকে উন্নয়নের চিত্র

কয়েকশ কোটি টাকা ব্যয়ে ফরিদপুর শহরের সিঅ্যান্ডবি ঘাট এলাকা থেকে চরভদ্রাসনের হাজিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত পদ্মার তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ হয়েছে। চিকিৎসাসেবার মান উন্নয়নে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে।

বন্ধ থাকা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পুনরায় আধুনিকায়নের মাধ্যমে সচল করা হয়েছে; শহরের শোভা বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা দূর করতে খনন করা হয়েছে কুমার নদ।

টেপাখোলায় সোহরাওয়ার্দী সরোবরের সংস্কার ও আধুনিকায়নে ব্যয় হয়েছে ২৬ কোটি টাকা; শহরতলীর লক্ষ্মীপুর চুনাঘাটা এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে মেরিন একাডেমি, শহরের বায়তুল আমানে গড়ে তোলা হয়েছে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ।

টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, রাজেন্দ্র কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও আবাসিক সংকট নিরসন, শহরের রাস্তা সম্প্রসারণ, পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের সাহিত্য সংরক্ষণে জাদুঘর ও সংগ্রহশালা নির্মাণ, শিশু ও শিল্পকলা একাডেমির আধুনিকায়ন, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠা, শহরের কমলাপুর এলাকায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, গোয়ালচামটে শেখ রাসেল শিশু পার্ক নির্মাণ হয়েছে।

শিল্প-কলকারখানা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিতে ধুলদী এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বিভিন্ন উপজেলায় নির্মিত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স; খেলাধুলার মান উন্নয়নে আধুনিক মানের শেখ জামাল স্টেডিয়াম, ফরিদপুরের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র তিতুমীর বাজারকে জরাজীর্ণ অবস্থা থেকে মুক্ত করে বহুতল কমপ্লেক্স ভবনে রূপান্তর করেছেন।

এ ছাড়া চরের ভূমিহীন মানুষের জন্য স্থায়ীভাবে জমি বরাদ্দ, গৃহনির্মাণ, গবাদিপশু প্রদান, নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিতে সৌরবিদ্যুৎ দিয়েছেন চরের ঘরে ঘরে। পদ্মা নদীর ওপর আলিয়াবাদ ও ডিক্রিরচর ইউনিয়ন এলাকায় তিনটি ব্রিজ নির্মাণকাজ প্রায় শেষ দিকে। সেতু তিনটি নির্মাণ হলে চরবাসীর জীবনব্যবস্থায় অর্থনৈতিক মুক্তির পথ খুলে যাবে।

নারী উন্নয়নেও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অভাবি মানুষকে প্রতি মাসেই নানা বিপর্যয়ে নগদ অর্থ, ঢেউটিন, সেলাই মেশিনসহ সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছেন। নারী নির্যাতন বন্ধেও পুরো জেলায় নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ।

নারীর কর্মসংস্থানের উন্নয়নে এলজিইডিসহ বিভিন্ন বিভাগে কর্মসংস্থানের পথ তৈরিসহ নি¤œ আয়ের নারীদের আর্থিক উন্নয়নে নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বিধবা ভাতা, মাতৃশিশু ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় মনোনিবেশ করতে দেয়া হচ্ছে শিক্ষাবৃত্তি।

‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’সহ অতিদরিদ্রদের জন্য স্থায়ী বাসস্থান প্রকল্পসহ উন্নয়নের নানা প্রকল্প গ্রহণ করে ফরিদপুরকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

এর বাইরে বাইপাস সড়ক, মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য নির্মাণসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে শহরকে ভিন্ন আঙ্গিকে গড়ে তোলা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যাত্রী ছাউনি নির্মাণ হয়েছে। ফরিদপুর পৌরসভাকে আধুনিকায়ন করে সেবার মহাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। সদর উপজেলা পরিষদে একটি আধুনিক কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণকাজও শেষের পথে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল

মন্দিরে আগুন ও দুই শ্রমিক পিটিয়ে হত্যায় বিএনপির উদ্বেগ, তদন্ত কমিটি গঠন

প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এদেশে আইনের প্রয়োগ হয়: রিজভী

দেশি-বিদেশি চক্র নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত করছে: ওবায়দুল কাদের

প্রতিমা পোড়ানোর মিথ্যা অভিযোগে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে: ছাত্রশিবির সভাপতি

আল্লামা ইকবালের ৮৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে মুসলিম লীগের আলোচনা সভা

সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদ জানাল রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন

ভারতীয় পণ্য বর্জন চলবে: ফারুক

যুবদলের নতুন কমিটির দাবিতে সাবেক নেতাদের  মিছিল 

খুলনায় গির্জায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিএনপি নেতা বকুলের সহায়তা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :