অবৈধ বিয়ে ঠেকাতে ডিভাইস উদ্ভাবন করল দুই তরুণ

মেহেদি জামান লিজন
 | প্রকাশিত : ০৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:২৮

অনেকেই আগের বিয়ের তথ্য গোপন করে আবার বিয়ে করেন। এতে করে কনেপক্ষ প্রতারিত হয়। কনের জীবনও শঙ্কার মুখে পড়ে। এমন একটা ডিভাইস যদি থাকত, যেটি কেউ আগে বিয়ে করেছে কি না, সেটা জানিয়ে দেবে, তাহলে এ ধরনের অবৈধ বিয়ে ঠেকানো যেত।

এমনই একটি ডিভাইস তৈরি করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী- ‘ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মো. আলমাস হোসাইন শাজা ও মো. ইউসুফ জামিল রনি। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সম্পর্কিত ডিভাইস তৈরিতে তাদের সহযোগিতা করেছেন ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার মো. মাইন উদ্দিন।

ডিভাইসটির নাম ‘বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম ফর প্রিভেন্টিং ইললিগ্যাল ম্যারেজ’। এটি দিয়ে কেউ একাধিক বিয়ে করেছেন কি না সেটা শনাক্ত করা যাবে।

এই অবস্থায় ডিভাইসটি কনে পক্ষকে সহায়তা করবে। বর আগে বিয়ে করেছে কি না, সেটা জানিয়ে দেবে।

ডিভাইসটির উদ্ভাবনকারীরা জানান, শহরে কাজের সন্ধানে আসা কর্মজীবী মেয়েরা অন্য কোনো এলাকার ছেলের প্রকৃত পরিচয় বা পরিবারের বিষয়ে তাৎক্ষণিক খোঁজখবর না নিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। অনেক সময় দেখা যায়, ছেলে পূর্বে বিবাহিত ছিল। এমনকি সন্তানও ছিল। এভাবে প্রতারণার ফাঁদে অনেক মেয়ের জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। এ ছাড়াও বয়স বাড়িয়ে ভুয়া জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে বাল্যবিবাহের সংস্কৃতি আমাদের সমাজে রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধানে ডিভাইসটি কাজে দেবে।

মো. আলমাস হোসাইন শাজা বলেন, ডিভাইসটি উদ্ভাবন করতে বন্ধু জামাল রনিকে সঙ্গে নিয়ে বহু মানুষের কাছে গেছি ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে। এরপর বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার মো. মাইন উদ্দিন স্যারের সহযোগিতা এটি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হই।

যেভাবে কাজ করে এই ডিভাইসের সহ-উদ্ভাবক মো. ইউসুফ জামিল রনি বলেন, আমাদের সিস্টেমে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানের ভিত্তিতে বিয়ে নিবন্ধন, বর-কনের পূর্বোক্ত বৈবাহিক অবস্থা ও সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি সহজেই জানা যাবে। পাশাপাশি জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী বর-কনের প্রকৃত বয়স ক্যালকুলেশন করা যাবে।

ছেলেদের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২১ বছর এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের নিচে কেউ ইচ্ছে করলেও এই ডিভাইসের মাধ্যমে বিয়ে করতে পারবে না। সাক্ষীদের ছবিসহ সংশ্লিষ্ট সবার তথ্য ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে ডাটাবেজ সিস্টেমে সংরক্ষিত থাকবে। নিবন্ধিত কাজী ব্যতিরকে অন্যকেউ ডিভাইসটি ব্যবহারও করতে পারবে না। আর এক্ষেত্রে কাজীর অবর্তমানেও যে কোনো সময় যে কোনো স্থান থেকে নিবন্ধিত কাজীর মাধ্যমে যেকোনো বিয়ের তথ্যাদি ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা জন্মনিবন্ধন নম্বরের মাধ্যমে সহজেই জানা যাবে।

মো. ইউসুফ জামিল রনি আরও বলেন, বিবাহ নিবন্ধন ফি-এর বিষয়ে আমরা অনেকেই অবগত নই। এক্ষেত্রে কাজী ফি ধার্য করেন। যা পরিশোধ করতে বর-কনে পক্ষ বাধ্য থাকে। কিন্তু আমাদের সিস্টেমে দেনমোহরের ওপর সরকার নির্ধারিত পার্সেন্টেজ অনুযায়ী কত টাকা নিবন্ধন ফি আসে, তা স্পষ্ট ক্যালকুলেশন করা থাকবে। তাতে নিবন্ধন ফি নিয়ে বিব্রত হওয়ার কিছু থাকবে না। এ ছাড়াও মোট দেনমোহরের পরিমাণ, পরিশোধিত দেনমোহর ও বকেয়া দেনমোহরের পরিমাণ আমাদের সিস্টেমে সংরক্ষিত থাকবে, যা যে কোনো মুহূর্তে ইচ্ছে হলেই জানা যাবে।

ডিভাইসের খরচাপাতি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানের জন্য ১০ হাজার ২০০ টাকা দামের একটি ডিভাইস ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়াও ডিভাইসটি পরিচালনার জন্য একটি কম্পিউটার প্রয়োজন। এ ছাড়াও আর কোনো খরচ নেই। শিগগিরই উদ্ভাবকরা ডিভাইসের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনার জন্য অ্যাপ তৈরির কাজে হাত দিচ্ছেন। যেটা তৈরি হলে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম রেজিস্ট্রেশনের ন্যায় নির্ধারিত ট্যাবে সিস্টেমটি ব্যবহার করা যাবে। এতে করে খরচ অনেকাংশে কমে আসবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ডিভাইসটির উদ্ভাবকরা জানান, শুরুতে এটি অফলাইনে রয়েছে। কেননা, এটি প্রোটোটাইপ বা ডেমো পর্যায়ে রয়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের সেন্ট্রাল সার্ভারে সংযুক্তি করণের মাধ্যমে সারাদেশে একযোগে এর সেবা দেওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কাজীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে সিস্টেমের বিষয়ে অবগত করে নিতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/৩জানুয়ারি/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :