রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

তথ্য দিতে শিক্ষকদের অনীহায় নামমাত্র বার্ষিক প্রতিবেদন!

সালমান শাকিল, রাবি
| আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৪১ | প্রকাশিত : ০৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৩৪

নিয়মিত প্রকাশের চেষ্টা হলেও শিক্ষকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হওয়ায় তথ্যবিভ্রাট থেকেই যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে। প্রকাশিত তথ্য মিলছে না ব্যক্তিগত তথ্যের সঙ্গে। নেই অর্থনৈতিক হিসাব, শিক্ষকদের গবেষণার বিস্তারিত তথ্যও।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ^বিদ্যালয়ের দলিল হলেও তা প্রতিনিধিত্ব করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানকে। এটিকে ‘নামমাত্র প্রতিবেদন’ প্রকাশ হিসেবেও মনে করছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের। এর আগে ২০১৬ সালে ২০১৪-২০১৫, ২০১৩ সালের জুনে ২০০৯-২০১০ এবং ২০১০ সালের এপ্রিলে ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব। নেই শিক্ষকদের ধারাবাহিক গবেষণার তথ্যও।

বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য দুটি ধাপে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার বিপরীতে শিক্ষকরা কখন গবেষণাপত্র জমা দিয়েছেন বা এখনো কতজন দেননি, সেসব তথ্যও নেই প্রতিবেদনে।

বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, কলা অনুষদের দুই শতাধিক শিক্ষকের মাত্র ১৬ শতাংশের গবেষণা আছে। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শতাধিক শিক্ষকের মধ্যে গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে মাত্র চারটি।

তবে অনুষদগুলোর শিক্ষকদের দাবি, অনেকে গবেষণা করছেন। তবে সেগুলো জমা দেওয়া হচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক শাহ আজম বলেন, ‘বছরে একাধিক গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে, এমন তথ্যও আমাদের কাছে আছে। কিন্তু অনেক শিক্ষক জমা দেন না। ফলে তথ্যগুলো বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় না।’

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফজলুল হক বলেন, ‘আমার দেখা অনেক শিক্ষক আছেন, যারা নিয়মিত গবেষণা করেন। বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য যে সঠিক, সেটি নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।’

তার অভিযোগ, প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য বিশ^বিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করে না।

এদিকে এবারও বিপত্তি বেধেছে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের প্রতিবেদনে প্রকাশের লক্ষ্যে গত বছরের জুলাই মাসে তথ্য দিতে বিভাগে বিভাগে নোটিশ দেওয়া হলেও এখনো তথ্য দিচ্ছে কিছু বিভাগ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনও হয় যে, চার-পাঁচবার নোটিশ দেওয়ার পর তথ্য পাওয়া যায়। সর্বশেষ যে তথ্য পাওয়া যায়, সেসব দিয়েই বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ কমিটি। শিক্ষকরা না দেওয়ায় তাই কমিটিও সঠিক তথ্য দিতে পারে না।

আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম বলেন, ‘বিভাগগুলোতে অনেক সভা-সেমিনার হয়। শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমে যুক্ত থাকে। বার্ষিক প্রতিবেদন যেহেতু দলিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করে, সেহেতু এসব তথ্যও যেতে পারে।’ প্রতিবেদন প্রকাশ কমিটির সদস্যসচিব সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার দায়িত্ব বিভাগগুলো যেসব তথ্য দেয়, সেগুলো নিয়ে আসা ও সম্পাদনা করা। একাডেমিক কোনো বিষয়ে মন্তব্য করার এখতিয়ার আমার নেই।’

কমিটির সভাপতি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘আমরা নিয়মিত ও তথ্যবহুল প্রকাশের চেষ্টা করছি। তবে বিভাগে বিভাগে তথ্য চেয়ে চার-পাঁচবার নোটিশ করা হলেও অনেক বিভাগই দেয় না। ফলে সর্বশেষ যেসব তথ্য পাওয়া যায়, সেসব দিয়েই প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’ এদিকে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক প্রতিবেদন চলতি জানুয়ারি মাসেই সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন উপ-উপাচার্য।

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :