২০২৩ সালে জাহাজ ভিড়বে মাতারবাড়ি বন্দরে

প্রকাশ | ০৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৪৩

মহিউদ্দিন মাহী

মাতারবাড়িতে নির্মাণ করা হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর। এটি হওয়ার কথা ছিল সোনাদিয়ায়। আঞ্চলিক ও ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত চীনের সহায়তায় সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে সংশয় থাকায় সেটি চলে গেছে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে। এখানে রয়েছে ভূপ্রাকৃতিক অবকাঠামো সুবিধাও।

আর এখন প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্পটিতে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে জাপান। জাইকার অর্থায়নে জাপানের কাশিমা ও নিগাতা (পূর্ব) বন্দরের আদলে নির্মিত হবে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর।

বহুমুখী সুবিধাসম্পন্ন সমুদ্রবন্দরটি ২০২৩ সালে চালু হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যেই প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। যাবতীয় প্রস্তুতি শেষে আগামী ২০২০ সালের আগস্টের মধ্যে বন্দরের মূল অবকাঠামো নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করবে কর্তৃপক্ষ।

এটি দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। পোর্ট, শিপিং খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পথে মাইলফলক হবে নতুন এই সমুদ্রবন্দর।

প্রকল্প সূত্র জানায়, মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জাহাজ ভেড়ার চ্যানেল ও টার্মিনাল ঘিরে এই সমুদ্রবন্দরের প্রাথমিক অবকাঠামো তৈরি হয়ে গেছে। এই বাণিজ্যিক বন্দরে প্রথম পর্যায়ে দুটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। সেখানে ৩২০ থেকে ৩৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৬ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের গভীরতা) আট হাজার টিইইউএস কনটেইনারবাহী বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। নোঙর করবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লাবাহী জাহাজও।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রকল্পটির ফিজিবিলিটি স্টাডি, দুটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং এবং একটি এপ্রাইজল মিশন শেষ হয়েছে। এখন চলছে ডিজাইন তৈরি ও প্রকৌশলগত কাজ।’

‘অর্থায়নের ব্যাপারে জাইকার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। এখন সরকারের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাব-লোন চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। চুক্তির ভিত্তিতে পাওয়া অর্থ দিয়ে এই বন্দরের পরামর্শক নিয়োগ থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।’

সূত্র বলছে, প্রথম পর্যায়ে ৪৬০ ফুট দৈর্ঘ্যরে কনটেইনার জেটি এবং ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ করা হবে। ওই জেটিতে ১৬ মিটার গভীরতার জন্য মাদার ভেসেল ভেড়ার সুযোগ থাকায় একসঙ্গে আট হাজার কনটেইনারবাহী জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারবে। একটি জাহাজেই চট্টগ্রাম বন্দরের দ্বিগুণের চেয়েও বেশি কনটেইনার হ্যান্ডেলিং সম্ভব হবে।

ফলে এখান থেকে ফিডার ভেসেলের মাধ্যমে দেশের অন্যান্য বন্দরে কনটেইনার পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর মাতারবাড়ি বন্দরে আরো একাধিক জেটি নির্মাণের পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে। ফলে কনটেইনারসহ অন্যান্য কার্গোর পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে বন্দরের আয়তন বৃদ্ধিও সম্ভব হবে। মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে সড়ক ও রেলপথ সংযোগেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।