নব দিগন্তের সূচনা হোক

প্রকাশ | ০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:০৬

সিরাজুম সালেকীন

ফের আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশের অগ্রযাত্রায় নব দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে। আশাতীত ‘চমক’ নিয়ে সদ্য শপথ নেওয়া নতুন মন্ত্রিসভা দেশের ও মানুষের কল্যাণে আরও যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। সরকারের নানামুখী উন্নয়ন ও সেবামূলক কর্মকা-ের সুফল জনগণ যেন পায়, তার জন্য মন্ত্রীদের কাছে প্রত্যাশাও অনেক। আর তারুণ্যে ভরপুর এই মন্ত্রিসভা তা পূরণ করতে পারবে।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের শপথের পর দেশের তিন বিশিষ্টজন ঢাকা টাইমসের কাছে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা হলেন কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ হাসান আজিজুল হক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের আ ব ম ফারুক।

প্রাথমিক থেকে উচ্চ, শিক্ষার মান নিয়ে ভাবতে হবে

হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘শিক্ষা খাতে দেশের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। নতুন মন্ত্রীর কাছে প্রথম থেকেই ভালো কিছু যেন দিতে পারেন, সে প্রত্যাশা থাকবে। মনে করি, তিনি উচ্চশিক্ষাসহ সব বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করবেন। এ ছাড়া মন্ত্রী যেন ছোট-বড় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘুরে ঘুরে খতিয়ে দেখেন এবং সবকিছু নিয়ে যেন পদক্ষেপ নেন।’

বিগত সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর সমালোচনা সৃষ্টি করা কিছু বক্তব্যের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘ঘুষ নেন কম কম নেন, এসব কথা বলে তো মন্ত্রিত্ব চলে না। শিক্ষার ব্যাপারে নতুন নতুন উদ্ভাবনী সৃষ্টি, উদ্ভাবনী চিন্তা এসব সিলেবাসে আনা দরকার। আর এসবের জন্য শিক্ষকদের ট্রেনিং দিতে হবে। ক্লাসে কী পড়ানো হবে, এসব নিয়ে কাজ করতে হবে। আমার মনে হয়, আগের শিক্ষামন্ত্রীর চেয়ে অনেকটা ভালো হবেন বর্তমান মন্ত্রী।’

‘বলা হয়ে থাকে, ৮০ শতাংশ শিশু পাঠশালায় যাচ্ছে। কিন্তু উচ্চশিক্ষার দিকে তাকালে সেটা শুকিয়ে সামান্য হয়ে যায়, ম্লান হয় সব অর্জন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে গ্র্যাজুয়েট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এতে উচ্চশিক্ষার হার বাড়ছে। কিন্তু তারা কর্মক্ষেত্র খুঁজে পাচ্ছে না। এখনকার শিক্ষিতদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয় সবকিছুতেই তাদের ঘাটতি। বিশেষ করে, জ্ঞান ও তথ্যগত ঘাটতি লক্ষণীয়।’

এই শিক্ষাবিদ সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মাদরাসাশিক্ষাকে আরও যুগোপযোগী ও আধুনিক করতে নতুন সরকার ভূমিকা রাখবে বলেও আশাবাদী।

স্বাস্থ্য খাতে সেবার পাশাপাশি ওষুধেও নজর দিতে হবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ‘নতুন মন্ত্রিসভা তারুণ্যের জয়। প্রধানমন্ত্রী তরুণদের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এটা প্রশংসনীয় দিক। সরকার দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি করেছে। আশা করব, যেসব জায়গায় এখনো তৈরি হয়নি, তা দ্রুত নির্মাণ করা হবে। এসব স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে মানুষ যেন সহজেই ভালো চিকিৎসা পায়, সে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

‘একই সঙ্গে কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সগুলোতে সেবার পাশাপাশি ওষুধের সরবরাহ যেন আরও বাড়ানো হয়, সেটা প্রত্যাশা থাকবে নতুন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর কাছে। এ ছাড়া ওষুধ সেক্টরে নকল ও ভেজাল সরবরাহ আরও কমিয়ে আনতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী পদক্ষেপ নেবেন বলে প্রত্যাশা থাকল।’

ওষুধশিল্পের কাঁচামাল দেশের চাহিদা মিটিয়ে যেন রপ্তানি করা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে উল্লেখ করে এই ওষুধ প্রযুক্তিবিদ বলেন, ‘এটা সম্ভব হলে দেশের ওষুধের মান ও পরিমাণ সবই বাড়বে। ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার যেন নিশ্চিত হয়, সেই বিষয়টিও লক্ষ রাখতে হবে। ওষুধনীতির মধ্যে যে মডেল ফার্মেসি ও কমিউনিটি ফার্মেসির কথা বলা হয়েছিল, সেটা যেন বেগবান করা হয়, তাতে জোর দিতে হবে।’

পরিবহন খাতে সেবা, নিরাপত্তা সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের (এআরআই) পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘পরিবহন সেক্টরের সর্বপ্রথম নিরাপত্তা গুরুত্বসহকারে দেখা দরকার। সড়ক নিরাপত্তার ফলাফল দেখতে হলে চালকের ট্রেনিং এবং ডিজিটাল ইকুইপমেন্ট (আধুনিক যন্ত্রপ্রাতি) মহাসড়কগুলোতে বসাতে হবে। তবে চালকদের নজরদারিতে আনার ব্যবস্থা আমাদের আছে। সেটা বতর্মান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সম্ভব। সরকার এসব বিষয়কে গুরুত্ব দেবে বলে আশা করি। এর ফলে ব্যাপক উন্নয়নের সুফলও পাবে জনগণ।’

‘এ ছাড়া শহরের মধ্যে যে দুর্ঘটনা ঘটে, তার জন্য চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং প্রশিক্ষণালয় চালু করার দরকার। বিশেষ করে, সরকারি মালিকানাধীন পরিবহন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় জোর দিতে হবে।’

রাজধানী ও বড় শহরে সুশৃঙ্খল সরকারি মালিকানাধীন সিঙ্গেল কোম্পানির আওতায় বাস পরিবহন চালু করার উদ্যোগ নেওয়ায় জোর দিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এটি করার জন্য বেশি টাকার দরকার নেই। তা করা গেলে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার সুবিধা বাড়বে। আর এসব সুফল সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেবে। আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যেই এগুলো করা সম্ভব। সে সক্ষমতা আমাদের সরকারের রয়েছে, যদি এটা করা সম্ভব হয়, ফলাফল এক বছরের মধ্যে পাওয়া যাবে।’