ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন মমতা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১৯:৩৫

ভারতের আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপিকে হারাতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে একজোট হয়েছে জাতীয় ও আঞ্চলিক দলগুলো। কংগ্রেসের পরেই এই জোটে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল কংগ্রেস। এই জোট নির্বাচনে জয়লাভ করলে কে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন তা ঠিক হয়নি। তবে সেখানে বারবার উঠে এসেছে মমতার নাম। তবে সংসদে যত আসনই দখলে থাক, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন? হ্যাঁ এবং না-এর পাল্লা সমান ভারি।

১৯ জানুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক মহলের প্রত্যাশা, দেশজুড়ে বিজেপিবিরোধী মহাজোট গড়ার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী, তার একটা চেহারা দেখা যাবে এই সমাবেশে। গত কয়েক মাসে একাধিক আঞ্চলিক দলের নেতা কলকাতায় এসে মমতার সঙ্গে দেখা করেছেন। তার মধ্যে রয়েছেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও, জম্মু-কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লাহ।

গত বছর আগস্টে দিল্লিতে কংগ্রেসের ডাকে যে বিজেপিবিরোধী বৈঠক হয়েছিল সমমনস্ক রাজনৈতিক দলগুলোর, সেখানেও মমতা হাজির ছিলেন এবং বিজেপিকে হারাতে মমতা যে ফরমুলা বেঁধে দিয়েছেন, সেটি মোটামুটি সর্বদলস্বীকৃত রাস্তা হিসেবে গ্রাহ্য হয়েছে। মমতা যা বলেছেন, তা নিছক ভোটের অঙ্ক। বিজেপিবিরোধী ভোট যাতে ভাগ না হয়ে যায়, সেদিকেই নজর দিতে বলেছেন মমতা। তার জন্য মমতার ফরমুলা, যে দল যেখানে শক্তিশালী, বিজেপির বিরুদ্ধে সেখানে তারাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। বাকি দলগুলো এবং তাদের ভোট থাকবে সহযোগী শক্তি হিসেবে। আঞ্চলিক পর্যায়ের নির্বাচনে এই ফরমুলা সব সময় কার্যকর না হলেও, সমবেতভাবে বিজেপিকে হটানোর লক্ষ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই রণকৌশল এক রকম মেনে নিয়েছে।

মমতা ব্যানার্জি এই রকম মহাজোটের উদ্যোগ এবারই যে প্রথম নিচ্ছেন, তা নয়। ২০১৪ সালেও মমতা কংগ্রেসকে বাইরে রেখে এ রকমই একটি বিজেপিবিরোধী জোটের ডাক দিয়েছিলেন। সেই জোট সফল হয়নি। কারণ, উত্তর প্রদেশে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি এবং মুলায়ম-অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মহাজোটের সম্ভাবনাকে ঝুলিয়ে রেখেছিল। এবারও কি পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়েছে? এখনো পর্যন্ত না। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির বোঝাপড়া হওয়ায় জিততে রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছিল বিজেপিকে। এখনো ওই দুই দল কোনো স্পষ্ট সংকেত পাঠাচ্ছে না যে, লোকসভা ভোটে তারা কী করতে চলেছে। ওদিকে এই মুহূর্তে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কোনো মহাজোট গড়ার সম্ভাবনার কথা এবারে আর মমতার পক্ষে ভাবা সম্ভব নয়। তার কারণ, সদ্য হয়ে যাওয়া পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের ফলাফল এবং বিরোধী নেতা হিসেবে জাতীয় সংসদে রাহুল গান্ধীর নিজেকে ক্রমশই আরও শক্ত মাটিতে প্রতিষ্ঠা করা। রাফাল যুদ্ধবিমান চুক্তি নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুলই কার্যত একা হাতে আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছেন মোদি সরকারের বিরুদ্ধে।

এবার প্রশ্ন হচ্ছে, মমতার ফরমুলা মেনে, বিজেপিবিরোধী ভোটব্যাঙ্ক অক্ষত রেখে লোকসভা নির্বাচনে যদি সত্যিই বিজেপিকে হারানো সম্ভব হয়, তা হলে মমতা ব্যানার্জির নামই কি পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিবেচিত হবে? উত্তর হ্যাঁ এবং না। আঞ্চলিক রাজনীতি থেকে সরাসরি সর্বভারতীয় রাজনীতির প্রধান আসনটিতে উঠে আসার ঘটনা আগেও ঘটেছে এইচ ডি দেবগৌড়া এবং ইন্দ্রকুমার গুজরালের ক্ষেত্রে। জাতীয় রাজনীতিতে নেহাতই অপরিচিত নাম ছিলেন তারা, যদিও দেশের বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন গুজরাল। সেখানে মমতার রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। পশ্চিমবঙ্গে যে বামফ্রন্ট সরকারকে অপরাজেয় মনে করা হতো, ৩৪ বছরের সেই জগদ্দল সরকারকে ফেলে দিয়ে মমতা ক্ষমতায় এসেছেন। জাতীয় রাজনীতিতেও বাস্তববাদী দর্শনের কারণে নিজের জায়গা করে নিতে পেরেছেন। তিনি যদি একদিন দেশের প্রদানমন্ত্রী হন, নেহাত খারাপ হবে না বলে এমনকি তার অনেক বিরোধীও জনান্তিকে স্বীকার করছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মমতা একাধিক জনহিতকর সামাজিক প্রকল্প চালু করেছেন, যা সহজেই এবং সাফল্যের সঙ্গে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়। প্রশাসক ও জননেত্রী হিসেবেও মমতা বারবার এটা প্রমাণ করেছেন যে, ক্ষুরধার রাজনৈতিক মস্তিষ্কের পাশাপাশি তার একটি মানবিক হৃদয়ও আছে। কিন্তু প্রশ্ন অন্যত্র। যে আঞ্চলিক দলগুলোর ভরসায় মমতা মহাজোট গড়তে উদ্যোগী, তাদের নেতা-নেত্রীরাও সবাই কিন্তু ওই একটি আশা নিয়েই অপেক্ষায়। দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার। অন্ধ্রের চন্দ্রবাবু নাইডু বারবার নিজেই প্রসঙ্গটা তোলেন এবং স্বেচ্ছায় ঘোষণা করেন, কে প্রধানমন্ত্রী হবে, সেটা পরের ব্যাপার। উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী, অখিলেশ যাদব, তেলেঙ্গানায় চন্দ্রশেখর রাও, সবাই একই স্বপ্ন দেখে আসছেন। আর দল হিসেবে কংগ্রেসের যে উত্থান শুরু হয়েছে, তা যদি ২০১৯ লোকসভা ভোট অবধি বজায় থাকে, কংগ্রেসের নির্বাচনী সাফল্য আরও মজবুত হয়, তাহলে রাহুল গান্ধীর প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবি কি কংগ্রেস ছেড়ে দেবে?

কাজেই বিজেপি হারতে পারে, কিন্তু মমতা প্রধানমন্ত্রী নাও হতে পারেন। আপাতত নজর ১৯ জানুয়ারির সমাবেশের দিকে। কটা দল, কতজন নেতাকে মমতা নিজের পাশে দাঁড় করাতে পারেন।

(ঢাকাটাইমস/৮জানুয়ারি/এসআই)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

ভারতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ, শীর্ষনেতাসহ ২৯ মাওবাদী নিহত

ইরানের হামলার প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রয়োজন নেই: সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী

ভারতের কাশ্মীরে নৌকাডুবে ৬ জনের প্রাণহানি, নিখোঁজ ১৫

ইসরায়েলে হামলার পর পরমাণু স্থাপনা সাময়িক বন্ধ করে ইরান

২০ বছর পর নতুন প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে সিঙ্গাপুর

ইসরায়েলের পাল্টা হামলার ঘোষণায় উদ্বিগ্ন ইরানিরা

সাইপ্রাসে পুলিশি অভিযানে পাঁচতলা ভবন থেকে ঝাঁপ দিয়ে বাংলাদেশি নিহত 

পাকিস্তানে ভারী বষর্ণ ও বজ্রপাতে নিহত ৩৯

ইরানে সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করল ইসরায়েলি বিমান বাহিনী

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ঠেকাতে পারেনি ইসরায়েল ও তার মিত্ররা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :