শ্রমিক আন্দোলন: মজুরি কাঠামো পর্যালোচনায় কমিটি

নতুন সরকারের শুরুতে হঠাৎ করে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভে নেমেছেন তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকেরা। টানা তিন দিনের বিক্ষোভে ভোটের আগে ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

মঙ্গলবার শ্রম ভবনে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকের পর নতুন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

মন্ত্রী বলেন, ‘মজুরি কাঠামো পর্যালোচনায় একটি কমিটি করা হচ্ছে। এতে মালিকপক্ষের পাঁচজন, শ্রমিকপক্ষের পাঁচজন এবং সরকারের বাণিজ্যসচিব ও শ্রমসচিবকে নিয়ে ১২ সদস্যের একটি কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে মজুরির অসংগতিগুলো খতিয়ে দেখবে এবং সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেবে।’

সড়কে নেমে ‘বিশৃঙ্খলা না করে’ শ্রমিকদের কাজে ফেরারও আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী, যিনি নিজেও তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তা।

বৈঠকের পর বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মজুরি নিয়ে কোনো সমস্যা থাকলে তা আলোচনা করে এক মাসের মধ্যেই সমাধান করা হবে। জানুয়ারি মাসে কোনো শ্রমিককে কম বেতন দেওয়া হবে না। কোনো গ্রেডে কারও যদি বেতন কমে যায়, তবে সেটা হিসাব করে সমন্বয় করা হবে। বকেয়া আকারে শ্রমিকেরা সেই বেতন পেয়ে যাবেন।’

তিনি আরও বলেন, “কোথাও কোনো ‘ইরেগুলারিটি’ থাকলে তা তারা দেখবেন। কিন্তু কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- সরকার সহ্য করবে না। সাইবার ক্রাইম শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন রকম প্রচারপত্র, লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে অনলাইনে। আমরা বরাবর দেখেছি। প্রতিটা ঘটনার ক্ষেত্রে এ ধরনের অপকর্ম ঘটেছে। এসব কর্মকা- সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে গত রবিবার থেকে ঢাকার রাস্তায় পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক ডাকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে দুই ঘণ্টার এই বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ছাড়াও মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণ করে গত ২৫ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে তা কার্যকর করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল সেখানে।

নির্বাচনের আগে পোশাকশ্রমিকদের অসন্তোষের সুযোগে কেউ যাতে ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ নিতে না পারে, সে জন্য ডিসেম্বরে গার্মেন্ট শিল্পপ্রধান এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি নজরদারি ছিল। কিন্তু ভোটের পর নতুন সরকারের শপথের আয়োজনের মধ্যেই গত রবিবার ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখ বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পোশাকশ্রমিকেরা।

সরকার ঘোষিত কাঠামো পর্যালোচনা করে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের দাবিতে গতকালও তারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান। সাভারে গুলিতে এক শ্রমিকের প্রাণহানিও হয়েছে। শ্রমিকদের অভিযোগ, সরকার তাদের জন্য যে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে দিয়েছে, মালিকপক্ষ সে অনুযায়ী বেতন দিচ্ছে না। বরং তাদের নানাভাবে ‘অন্যায়-অবিচারের’ শিকার হতে হচ্ছে।

ঢাকাটাইমস/০৮জানুয়ারি