সাক্ষাৎকারে প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন

‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদের সর্ববৃহৎ সংগ্রহশালা’

প্রকাশ | ১১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৯:২০ | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:৩৭

দীপান্বিতা রায়
ঢাকাটাইমস

প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি)। গোপালগঞ্জে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে তিনি প্রায় চার বছর হলো এই দায়িত্বে আছেন। এ সময় দারুণ অগ্রগতি হয়েছে প্রযুক্তিমুখী এই উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। এসব নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা টাইমস। আলাপচারিতায় ছিলেন দীপান্বিতা রায়।

আপনার সময়ে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাই।

আমি যখন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিই, তখন এখানে ১৪টি বিভাগ ছিল। বর্তমানে বিভাগ হয়েছে ৩৪টি। নতুন যেসব বিভাগ চালু হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আইন, আইআর, অ্যাপ্লায়েড কেমেস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রোপ্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োকেমেস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি। আমি এখানে একটা কথা বলতে চাই, অন্য কোনো প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিন্তু আইন বিভাগ নেই।

শিক্ষার্থীর সংখ্যাও তো আগের তুলনায় বেড়েছে।

২০১৫ সালে এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৪০। বর্তমানে তা ১২ হাজারে দাঁড়িয়েছে। গত বছর এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করে। এর মধ্যে তিন হাজার ৪০০ জন ভর্তি হয়েছে। এই সংখ্যার হিসাবে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আমরা চতুর্থ অবস্থানে আছি। আরও একটি বিষয় বলতে চাই, ২০১৫ সালে এখানে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ছিল না। এখন এখানে ২৫০ জন ভিনদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।

কোন কোন দেশের শিক্ষার্থী আছে?

এখন নেপাল, সোমালিয়া ও নাইজেরিয়া থেকে বেশ কিছু শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। আরও কিছু দেশের শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে। দেশের পাশাপাশি বিদেশের শিক্ষার্থী এখানে বাড়বে, এ কথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি।

শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী বিষয়ে জানতে চাই।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ৩০০ জন, কর্মকর্তা ১০৮ জন আর কর্মচারীর সংখ্যা ৩৪২।

এখানে পাঠাগার ও গবেষণাগার কতটা সমৃদ্ধ?

আমাদের লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা ৩০ হাজার। অথচ ২০১৫ সালে ছিল মাত্র চার হাজার। এখানকার লাইব্রেরি সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অটোমেশন করে বারকোড ব্যবহৃত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আইটি কর্নারে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটসহ ১২০টি কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারছে। ২০১৬ সালে আমরা বঙ্গবন্ধু কর্নার চালু করেছি।

আমাদের ল্যাবরেটরিও অনেক উন্নতমানের। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে সর্বাধুনিক পাওয়ার গিয়ার সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া সিএসই, ইটিই, এসিসিই, ফার্মেসিসহ অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও আধুনিক ল্যাবের সুবিধা পাচ্ছে।

আপনাদের অধীনে তো ইনস্টিটিউটও আছে। এ বিষয়ে জানতে চাই।

আমাদের মোট চারটি ইনস্টিটিউট আছে। এর মধ্যে দুটি ক্যাম্পাসে। এগুলো হচ্ছে বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অব লিবারেশন ওয়ার অ্যান্ড বাংলাদেশ স্টাডিজ এবং ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ। অন্য দুটির মধ্যে শেখ হাসিনা কৃষি ইনস্টিটিউটের অবস্থান টুঙ্গিপাড়ায়। আর শেখ হাসিনা আইসিটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মাদারীপুরের শিবচরে।

মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়তামূলক কোনো কর্মসূচি রয়েছে? বৃত্তি বা অন্য কিছু?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভালদোস্টা স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশসহ দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এখানে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে। আমাদের এখানে দুই কোটি টাকার ছাত্রকল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে। ওই তহবিল থেকে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসুবিধা দেওয়া হয়। দেওয়া হয় বিশেষ বৃত্তি। এ ছাড়া ৪০ লাখ টাকার অ্যাওয়ার্ড ইনসেনটিভ তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ তহবিল থেকেও বৃত্তি ও অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়ে থাকে।

আপনাদের এখানে সবুজায়নের আলাদা সুনাম রয়েছে। বৃক্ষরোপণের ক্ষেত্রে এই আগ্রহের কারণ কী?

এ বিষয়ে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের কথা বলতে চাই। আমি যখন এখানে আসি, তখন এখানে কোনো গাছ ছিল না। অথচ এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ই হচ্ছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ উদ্ভিদ সংগ্রহশালা। আমরা বৃক্ষরোপণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৬-তে প্রথম স্থান অধিকার করেছি। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ জেলা বৃক্ষমেলা-২০১৬, ২০১৭, ২০১৮-তেও প্রথম স্থান অর্জন করেছি। আমি মূলত কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। তাই এ বিষয়ে আমার প্রচুর আগ্রহ। আমি এখানে আসতেই আমার মনে হয়েছে, বৃক্ষরোপণের ব্যাপারে ব্যতিক্রমী কিছু করব। সেই ভাবনা থেকেই আজকের এই সবুজ ক্যাম্পাস।

এ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আর কী বলতে চান?

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি সেশনজট-মুক্ত। প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর গ্র্যাজুয়েশন ও পয়লা জানুয়ারি ওরিয়েন্টেশন হয়।

এবার আপনার সম্পর্কে জানতে চাই। গোপালগঞ্জেই তো আপনার প্রাথমিক জীবন।

আমি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার রাজপাট হাইস্কুল থেকে এসএসসি, গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ময়মনসিংহ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স এবং লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছি।

শুনেছি বিদেশে চাকরির সুযোগ থাকলেও এ নিয়ে আপনার অনীহা আছে। এর কারণ কী?

আমি দেশের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। নিজ দেশেই আমি আমার সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই। বিদেশ আমাকে কী দেবে? দেশ আমাকে যতটা সম্মান দেবে, বিদেশ আমাকে কখনোই তা দেবে না।

প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে আপনার চিন্তাভাবনা জানতে চাই।

প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি শক্ত হলে উচ্চশিক্ষাও সহজ হয়ে যাবে সব শিক্ষার্থীর জন্য। এ কারণে আমি আমার গ্রাম সাতাশিয়ায় ১৯৯৫ সালে সাতাশিয়া শরিফুল মরিয়ম উচ্চ বিদ্যালয় গড়ে তুলেছি।

এই বিদ্যালয় নিয়ে আর কোনো পরিকল্পনা আছে?

ইচ্ছা আছে, এই বিদ্যালয়ে পড়–য়া দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল গড়ে তুলব। সেখানে তারা বিনা মূল্যে থাকতে ও খেতে পারবে। এ ছাড়া বৃদ্ধ, দরিদ্র ও প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য আশ্রম গড়ে তোলারও স্বপ্ন দেখি আমি। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কাজটি করতে পারব বলে আশা করছি।

আপনার জীবনের যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল, তা কি পূরণ হয়েছে?

কারোই সবটা পূর্ণ হয় না। তবু আমি বলব, আমার জীবনে কোনো অপূর্ণতা নেই। আমি আমার স্বপ্নের জায়গায় পৌঁছেছি।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনাকেও ধন্যবাদ।