আন্দোলনে যেতে বিএনপিকে ‘তৃণমূলের চাপ’

শরীফ রুবেল
| আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:৩৫ | প্রকাশিত : ১২ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৫৬

জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করা বিএনপিকে আন্দোলনে যেতে তৃণমূল চাপ দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য। তবে এই মুহূর্তে আন্দোলনে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি আছে কি না, এই বিষয়টি নিয়েই চিন্তিত বিএনপি। আর কর্মসূচি দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না নেতারা।

৩০ ডিসেম্বর ভোটের পর সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি ও তার জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। রাজপথের পাশাপাশি আদালতে মোকাবেলার ঘোষণা এসেছে। সিদ্ধান্ত এসেছে পরাজিত সব প্রার্থী মামলা করবেন। তবে রাজপথে মোকাবেলার জন্য কী কর্মসূচি দেওয়া হবে, এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না দলটি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তৃণমূলের নেতারা বারবার কেন্দ্রকে চাপ দিয়ে আসছেন। তারা বলছেন, আগামীতে ঢাকায় আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়টিতে জোর দিতে। এ ক্ষেত্রেও চেষ্টা থাকবে দলের।’

তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে নতুন করে ভোটের দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া ছাড়া আর কিছু করেনি বিএনপি বা তার জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

নেতারা বলছেন, সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর নাকি নরম কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে, সে বিষয়ে তারা এখনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। আবার দুই দফা আন্দোলনে নেমে খালি হাতে ঘরে ফেরার পর কঠোর কর্মসূচি দিয়ে ফায়দা হবে কি না, এ নিয়ে আছে সংশয়ও।

এবারের ভোটের ফল বিএনপির জন্য ছিল বিস্ময়-জাগানিয়া। বিএনপি এবং তার জোটের শরিকেরা ২৯৮টি আসনের মধ্যে পায় মাত্র সাতটি। আর স্থগিত একটি আসনের তিনটি কেন্দ্রে নতুন করে ভোট নেওয়ার পর যোগ হয়েছে আরও একটি আসন। একজন প্রার্থীর মৃত্যুতে স্থগিত বাকি একটি আসনে ভোট হবে ২৭ জানুয়ারি। তবে সেখানে বিএনপির প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছেন।

বিএনপি বলছে, আগের রাতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালটে সিল মারা, ভোটের দিন তাদের সমর্থকদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার কারণে এই ফলাফল হয়েছে।

দলটির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা জানান, ভোটে কারচুপির বিরুদ্ধে আন্দোলনে যেতে চেয়েছিলেন তারা। পুনর্নির্বাচনের দাবিতে রাজধানীসহ দেশব্যাপী বিক্ষোভ, অবস্থান ও গণসংযোগের মতো কর্মসূচির পরিকল্পনাও ছিল। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ৩১ ডিসেম্বরেই নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করতেও চেয়েছিল দলটি।

ভোটের দিনই বিএনপি ও ২০ দলের সিদ্ধান্তের আলোকে আন্দোলনের রূপরেখা কামাল হোসেনকে জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু ড. কামাল বিএনপিকে জানিয়ে দেন তারা কোনো সহিংস আন্দোলনের পক্ষে নেই। জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের কোনো অপবাদ মাথায় নেবেন না তারা। এরপর বিএনপিও আন্দোলন থেকে ফেরত আসে।

নেতারা জানান, বিএনপি আপাতত তাদের দলকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল ও শ্রমিক দলকে নতুন আঙ্গিকে সাজানোর চিন্তা করছে। জনসমর্থন নিয়ে ধীরে ধীরে মাঠে নামতে চাচ্ছেন দলটির নেতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হুট করে কর্মসূচি ঘোষণা না করে সময় নিয়েই ধীরে ধীরে কঠোর অবস্থানে যাবে বিএনপি। আমরা জনগণকে দেখাতে চাই, দেশের বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। কিন্তু সরকারই তাদের দিন দিন আন্দোলনের পথে ঠেলে দিয়েছে।’

‘ভোটে নজিরবিহীন কারচুপি হয়েছে। ভোট দিতে না পারায় অনেকের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। আন্দোলনে তাদের জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির চেষ্টা থাকবে।’

দলটির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী সামনে এগুচ্ছি। বিএনপি এখন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়েই আস্তে আস্তে জনসমর্থন নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’

নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে ভোট জালিয়াতির মামলা করে সুফল পাওয়া যাবে কি না জানতে চাইলে আলাল বলেন, ‘সরকার বিচার বিভাগকে নিজেদের হাতের মুঠোয় করে রেখেছে। সেটা দেশের সবাই জানে। আমরা মামলা করে সাধারণ জনগণকে দেখাতে চাচ্ছি তারা কতটা অস্বচ্ছতার ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে।’

ইসিকে দেওয়া স্মারকলিপির কোনো জবাব পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে বিএনপির নেতা বলেন, ‘আমরা যা কিছুই করছি সেটা জনগণকে দেখানোর জন্যই করছি, জনগণ দেখুক এই সরকার কতটা স্বৈরাচারী।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :