এত আরামের জীবন ছেড়ে জেলে থাকতে পারবেন তো?

প্রকাশ | ১২ জানুয়ারি ২০১৯, ১৫:০৬

মাহবুব কবির মিলন

ভাইরে কামাই করলেন, আপনি। দেখালেন স্ত্রীর নামে। এখন দেখি দুদক স্বামী স্ত্রী দুইজনরেই ধরছে। কী বিপদ! এত আরাম আয়েশের জীবন ছেড়ে জেলে থাকতে পারবেন তো? কোন আইডিয়া আছে জেলখানার?

মেঝের মধ্যে কাইত হয়ে শুতে পারে ৫০ জন। সেখানে থাকে ৩০০ জন। এক পাশে গণ গোসলখানা, আর এক পাশে হাফ ওয়াল দিয়ে পায়খানা। উপরে খোলা। কারো পেট খারাপ হলে তার শব্দ শুনতে পাবে এই ঘরের ৩০০ জন মানুষ।

আপনার উপর যে গা এলিয়ে দেবার চেষ্টা করছে, সেই যক্ষ্মা রোগীর কাঁশির শব্দে আপনার জীবন হারাম। বায়ের জনের দেখবেন চুলকানি, আর একজনের সিফিলিক্স, তো আর একজন এইডসের রোগী।

আপনার পায়ের উপর মাথা রাখছেন যিনি, তিনি কী কারণে একটু পরপর বমি করছেন। আপনার মাথার জনের বায়ুর গন্ধে আপনারও পেট মোচড় দেয়া শুরু করেছে। দৌড়ে ত্যাগ করতে গিয়ে দেখলেন লাইনে আগে থেকেই ১০ জন খাড়াইয়া আছে।

গোসলেও লাইন। তাও আবার খোলা জায়গা। সব খালি গতরে। টাইলস পাইবেন না। নাই হ্যান্ড শাওয়ার। নাই গিজার। এয়ার ফ্রেশনারও নাই। টুথ পেস্ট, টুথ ব্রাশের দেখাও পাইবেন না। এমনো হইতে পারে, আপনার টুথব্রাশ ৩০০ জনেই মুখে দিছে।

গরমে মিটমিট করে ঘোরা ফ্যানের গরমে নিজের গায়ের গন্ধেই আধমরা হয়ে যাবেন। শীতকালে প্রচণ্ড ঠান্ডায় ঘুম ভেঙে গেলে দেখবেন আপনার পুরাতন গন্ধওয়ালা ময়লা কম্বল পাঁচ খুনের আসামি আক্কাস মিয়া গায়ে দিয়ে আছে।

পরে শুনলেন আগের দিন রাতে এই কম্বলের নিচে সলিমুদ্দিন সারারাত মরে পড়ে ছিল। কম্বল বদলাবেন, তার উপায় নেই। গায়ের নিচের পাতলা তোষক জুড়ে কালো চটচটে দাগ। কিছু আবার ভিজে। বুঝলেন, রক্ত, কফ, থুতু সব কিছুই আছে। সারারাত লাইট জ্বলে। সকালে নাস্তার রুটি মহিষেও হজম করতে পারবে না। আপনি তো দূরের কথা।

গল্প করতে গেলে দেখবেন আপনার পাশেরটা দুইটা জবাই করে আসছে। আর একটা কাটা মাথা বস্তায় নিয়ে তিন দিন ঘুরছে। আর একটা কবরের লাশ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। এহেন প্রতিবেশীর সাথে আপনার দিন গুজরান করতে হবে।

জামাই-বৌরে ধরার এন্তেজাম শুরু করছে দুদক। কী বিপদ। অনেক দিন আগের কথা। ভয় পাবার কিছু নেই। যারা ঢুকবেন, নিশ্চয়ই তারা সাহসী।

লেখক: যুগ্ম সচিব; সদস্য, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ