পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তির হার, কী রয়েছে ব্রিটেনের ভাগ্যে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:১৯

ব্রিটেনের পার্লামেন্টে ২৩০ ভোটের বিশাল ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মের ব্রেক্সিট চুক্তি নাকচ হয়ে যাওয়ার পর এখন কি হতে যাচ্ছে দেশটির জন্য ও তার অধিবাসীদের জীবনে- সেই প্রশ্নটি ঘুরছে সবার মাথায়। ব্রেক্সিটের সময় ঘনিয়ে আসছে। ২৯শে মার্চের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার কথা। আর মাত্র ৭৩ দিন পর।

চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলে কী হবে?

এই চুক্তিতে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল- ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে গেলে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিকদের কী হবে? ব্রিটেন তাদের জন্য একটি সুবিধাজনক চুক্তি করতে চাইছে। বের হয়ে যাওয়ার জন্য কত অর্থ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে খোয়াতে হবে? ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ও কোম্পানিগুলো কি ধরনের সুবিধা পাবে, সেটিও একটি বিষয়।

কোনও চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট হওয়ার অর্থ হল ব্রিটেনকে রাতারাতি বিচ্ছেদের প্রস্তুতির কোনও সময় ছাড়াই সম্পর্ক ছেদ করতে হবে। কোন খাতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে আর তা মোকাবেলায় কী করতে হবে- সেটি বোঝার কোন সময় পাবে না যুক্তরাজ্য। আর এতে যারা ভুক্তভুগী হবে তাদের সহায়তার জন্য কী ব্যবস্থা নেয়া দরকার বা তাদের নতুন ব্যবস্থার জন্য কিছু সময় দেয়ার সুযোগ থাকবেনা। সবকিছু গুটিয়ে রাতারাতি সরে আসতে হবে।

ব্যবসায় প্রভাব পড়বে

যেমন ধরুন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোতে যারা ব্যবসা করছেন তাদের জন্য বাড়তি আমদানি রপ্তানি কর আরোপ হতে পারে। কৃষকদের জন্য কর ৬০ শতাংশ হতে পারে। তার মানে তাদের কাজের খরচ বাড়বে আর এর ফলে তাদের পণ্য বা সেবার জন্য ব্রিটিশদের বেশি অর্থ দিতে হবে। ব্রিটেন যেসব বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ইইউ দেশগুলোতে নানা সুবিধা পাচ্ছিল সব সুবিধা সে হারাবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর সবার সাথে নানা ইস্যুতে ব্রিটেনকে আবার দেন-দরবার করে নূতন চুক্তি করতে হবে। সেগুলো করতে হবে আলাদা আলাদা করে। ব্রেক্সিটের বিপক্ষের অনেকেই মনে করেন হঠাৎ এভাবে বের হয়ে গেলে ব্রিটেনে বিভিন্ন পণ্যের সংকট দেখা দেবে। পণ্যের দামও বাড়বে যেগুলো কম খরচে ইইউভুক্ত দেশগুলো থেকে আসত।

অভিবাসীদের উপর পড়বে নানা প্রভাব

ব্রেক্সিট সম্পন্নের পর অভিবাসন ইস্যুতে নিজের মতো আইন করতে পারবে যুক্তরাজ্য। এতদিন অভিবাসন বিষয়ে ইইউর যেসব নীতিমালা ছিল সেগুলো মানতে হত। ব্রিটেনে কর্মরত ইউরোপের অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের সম্পর্কে বিরূপ মনোভাবের কারণেই অনেকে ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। ওইসব নাগরিকেরা তাদের কাজ দখল করে নিচ্ছে বলে তাদের অনেকেই অপছন্দ করেন।

কিন্তু ব্রিটিশরাও ইইউভুক্ত দেশে কাজ করছেন। তাদের জন্যেও তৈরি হবে অনিশ্চয়তা। দুই পাশের যাতায়াত ভিসা আর কাজের পার্মিট পাওয়ার বিষয়টির কারণে তা সময় সাপেক্ষ হয়ে যাবে। হঠাৎ করে বদলে যাবে বহু অভিবাসীর জীবন। কিন্তু আবার ব্রিটিশদের অনেকেই সেখানে বসবাসরত অন্যান্য দেশের অভিবাসী যেমন এশিয়া বা আফ্রিকার দেশের অভিবাসী বিরোধী। লন্ডনের বার্কিং অ্যান্ড ডাগেনহ্যাম কাউন্সিলের কাউন্সিলর এবং লন্ডনে বাঙালী কমিউনিটির একজন নেতা সৈয়দ ফিরোজ গনি বলেন, একটা অনিশ্চয়তা রয়েছে সেখানকার সকল অভিবাসীদের উপরও।

ব্রিটেনের রাজনীতিতে সামনে কী আসতে পারে?

দেশটির লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিন ইতিমধ্যেই সরকারের প্রতি একটি অনাস্থা ভোটের আহবান জানিয়েছেন। ২০১১ সালের একটি আইন অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে প্রতি পাঁচ বছর পরপর সাধারণ নির্বাচন হয়। সেই হিসেবে পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২২ সালে। কিন্তু একটি অনাস্থা ভোট হলে এই সরকারকে সংসদ সদস্যরা চান কিনা- সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।

যদি অনাস্থা প্রস্তাব জিতে যায়, তাহলে সেখানকার সরকার ১৪ দিন সময় পাবে। তার মধ্যে নতুন একটি অনাস্থা ভোটে না জিতলে আগেভাগে সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করতে হবে। সেটি করা যাবে ২৫ দিন পর থেকে যেকোনো সময়। কিন্তু সরকার যদি অনাস্থা প্রস্তাব থেকে বেঁচে যায় তাহলে মূল যে বিষয় অর্থাৎ টেরিজা মে নতুন করে ব্রেক্সিট বিষয়ে সংসদে ভোটের ডাক দিতে পারবেন। নতুন করে ব্রেক্সিট বিষয়ে সংসদে ভোটেও যদি কিছু না হয়, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে দেন-দরবার করে ব্রিটেনের সুবিধামতো কোন চুক্তি ছাড়াই ইইউ অঞ্চল ছেড়ে বের হয়ে যেতে হবে।

১৯৭৩ সালে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়েছিল। ২০১৬ সালের জুন মাসে ঐতিহাসিক একটি গণভোটে সেদেশের মানুষজন এই অঞ্চলে থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এরপর থেকেই ব্রিটেনের রাজনীতিবিদরা বিতর্ক করে চলেছেন ব্রেক্সিট কিভাবে হবে। ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে কি ধরনের বিচ্ছেদে যাবে। এখন অনেকেই নতুন একটি গণভোটও চাইছেন।

ঢাকা টাইমস/১৬জানুয়ারি/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :