কোটা আন্দোলনের নেতারা

হচ্ছে না চাকরি, ব্যবসাতে ‘বাধা’

সিরাজুম সালেকীন
| আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:০৩ | প্রকাশিত : ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪৬

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া একাধিক তরুণ বেসরকারি খাতে নিয়োগ পরীক্ষা দিলেও চাকরি পাচ্ছেন না। একজন চাকরির প্রস্তুতি শিকেয় তুলে মনোযোগ দিয়েছেন টিউশনিতে। একজন টিউশনিও হারিয়েছেন।

তিনজন নেমেছেন দই ব্যবসায়। এরা হলেন কোটা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক তারেক রহমান তারেক, মোল্লা বিন আমিন ও জসিম উদ্দিন আকাশ। তবে দোকান খুলতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তারা। এ জন্য তিনি আপাতত বিক্রি করছেন অনলাইনে।

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে ৯০ দশকে আন্দোলনে নেমেছিল একটি ছাত্রসংগঠন। এরপর নানা সময় একই দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন করলেও তা আমলে নেয়নি সরকার।পরে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয় কোটা সংস্কারের দাবিতে।

সব মিলিয়ে কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনে সহিংসতাও হয় গত এপ্রিলে। আর শেষ পর্যন্ত সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে সব ধরনের কোটাই তুলে দিয়েছে।

তবে কোটা আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্ররা বিপাকে পড়েছে মূলত মামলার কারণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাড়িতে হামলার মামলায় নাম থাকায় সরকারি চাকরি পাওয়া নিয়ে সংশয়ে তারা।

মানবাধিকার কমিশনের কাজী রিয়াজুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তারা অপরাধী না। আইনগতভাবে তারা যেকোনো জায়গায় চাকরি করতে পারে। যারা দুর্বল তারা হয়তো এসব কথা বলে। যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের চাকরি দিচ্ছে না তারা আইন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই হয়তো দিচ্ছে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান ধরেই নিয়েছেন তিনি সরকারি চাকরি পাবেন না। তাই নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছেন না। মনোযোগ দিয়েছেন টিউশনিতে। ছাত্র পড়িয়েই সংসারের খরচ তুলছেন।

ঢাকা টাইমসকে রাশেদ বলেন, ‘মামলা থাকায় আমার সরকারি চাকরি হবে না শুনেছি। প্রাইভেট সেক্টরে যে ঢুকব, বেশ কয়েকজন বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা চাকরি পাচ্ছে না। তাদের বলা হয়েছে, মামলা থাকায় চাকরি দিলে বিপদে পড়তে হবে।

এমবিএর এই ছাত্রের পড়াশোনাতেও ব্যাঘাত ঘটছে। রাশেদ বলেন, ‘এমবিএ বিভিন্ন কারণে শেষ করা হয়নি। মাঝে জেলে ছিলাম। পরে আবার ভর্তি হলেও বিভিন্ন হুমকি-ধমকি পাওয়ার কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ক্যাম্পাসে ঢোকা হয়নি।’

কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় করা মামলায় হুকুমের আসামি রাশেদ। এ ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে আলাদা মামলা করা হয়েছে।

একজন হারিয়েছেন টিউশনি

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর টিউশনি হারিয়েছেন গণমাধ্যমে তার নাম আসার পর। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘নাম পরিচয় জেনে অনেকে টিউশনিতেও নিতে চায় না। এখন বাবার হোটেলে খাচ্ছি।’

গত বছরের ৩০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় আহত হন নূর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং পরে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে তাকে চিকিৎসাতেও বাধা দেওয়া হয়। পরে অন্য হাসপাতালে ভর্তি হন যেটির নাম জানানো হয়নি। মোট ছয়টি হাসপাতালে হয় তার চিকিৎসা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শেষবর্ষের শিক্ষার্থী হলেও তখন পরীক্ষা দিতে পারেনি নূর। সম্প্রতি সুস্থ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন। চেষ্টা করেছিলেন চাকরির, কিন্তু হয়নি।

নূর বলেন, ‘সরকারি বিভিন্ন পোস্টে চাকরির আবেদন করে রেখেছি। তবে সেটা পাব কিনা সেটা নিয়ে হতাশায় রয়েছি। আহত হওয়ার পর আমাকে ঢাকা মেডিকেল থেকে যেখানে বের করে দেওয়া হয়েছে, বেসরকারি হাসপাতালেও যেখানে চিকিৎসা করাতে পারিনি, সেখানে কীভাবে সরকারি চাকরি পাব? আমরা বেসরকারি চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গেলেও তো না করে দেওয়া হয়।’

কোটা আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা তারেক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে ঢাকায় বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে এসে জড়িয়ে পড়েন কোটা আন্দোলনে। তিনিও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের একজন যুগ্ম আহ্বায়ক।

দইয়ের ব্যবসায় বাধার অভিযোগ

আন্দোলন শেষে চাকরির জন্য চাকরি না পেয়ে শুরু করেন দইয়ের ব্যবসা। কিন্তু সেখানেও বাধা। বুয়েটের পাশে পলাশী মার্কেটে দিয়েছিলেন দইয়ের আউটলেট। বগুড়া থেকে দই এনে বিক্রি করতেন। কিন্তু সেটাও এখন এক প্রকার বন্ধের উপক্রম। দোকান খুলতে বাধা দিয়েছেন একদল তরুণ। এখন অনলাইনে শুরু করেছেন ব্যবসা। অর্ডার পেলে সরবরাহ করেন বাড়ি বা অনুষ্ঠানস্থলে।

তারেক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘চাকরিতে পাঁচবার লিখিত পরীক্ষায় টেকার পরও প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি হয়নি। একটি ব্যাংকে গিয়েছিলাম পরীক্ষা-ভাইবা দিলাম, কিন্তু চাকরিটা হলো না। ভূঁইয়া একাডেমিতে ডাকল, সেখানেও হয়নি।’

‘একই অবস্থা হয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে। লিখিত পরীক্ষায় পাস করি কিন্তু চাকরি হয় না। তাই কোটা আন্দোলনের নেতা মোল্লা বিন আমিন, জসিম উদ্দিন আকাশসহ কয়েকজন মিলে দইয়ের আউলেট খুলেছি। কিন্তু সেখানেও ঝামেলা চলছে। নির্বাচনের আগে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করা হয়। নির্বাচনের পর আউটলেট খুলেছি কিন্তু ছেলেরা এসে আমাদের খোঁজ করে; তাই আতঙ্কে আছি। বলেন, ‘লেখালেখি হলেই আমাদের আরও বিপদে পড়তে হয়।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :