লাঞ্ছনার বিচার পেলেন না ভিকারুননিসার ছাত্রীটি

আশিক আহমেদ
| আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:১২ | প্রকাশিত : ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:০৯
প্রতীকী ছবি

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী অদিতি বৈরাগীকে কারা লাঞ্ছনা করেছিল, তা বের করতে পারেনি পুলিশ। মিছিল থেকে লাঞ্ছনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করলেও কাউকে শনাক্ত করতে না পারায় এই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। আর আদালত সেই প্রতিবেদন গ্রহণ করায় কোনো বিচারই পেলেন না ভুক্তভোগী অদিতি বৈরাগী।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের স্মরণে ২০১৮ সালের এই দিনটিতে একই উদ্যানে ছিল আওয়ামী লীগের জনসভা। আর এজন্য আশপাশের বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত ছিল। ফলে হেঁটে চলতে বাধ্য হয়েছে মানুষ।

আশপাশের এলাকা থেকে জনসভামুখী মিছিল থেকে বেশ কয়েকজন নারীকে লাঞ্ছনার অভিযোগ ওঠে। ভুক্তভোগী একাধিক মেয়ে ফেসবুকে তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার পর তোলপারও হয় সে সময়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তখন ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

৮ মার্চ এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ওই ঘটনার ভিডিও মিলেছে। আরও তিন দিন পর বলেন, ‘ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীকে বেশ কয়েকজন ওড়না ধরে টানাটানি করেছে এ ঘটনা সত্য। ভিডিও ফুটেজ দেখেছি, সেখানে দেখা গেছে।’

মন্ত্রী সেদিন আরও বলেন, ‘সেদিন (৭ মার্চ) সমাবেশে নারী-পুরুষের ঢল নেমেছিল। কারা, কোন উদ্দেশ্যে এমন কাজ করল সেটি আমাদের বের করতে হবে।’

ঘটনার দুই দিন পর অদিতির বাবা অনাদি রঞ্জন বৈরাগী রমনা থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন রমনা মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শফিকুল ইসলাম। এর দুই দিন পর তদন্তের দায়িত্ব পান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগের পরিদর্শক বাহাউদ্দিন ফারুকী। তিনি বর্তমানে পাবনার ঈশ^রদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তাকে সে সময় মামলাটির তদন্ত সহযোগিতা করতেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার শামসুল আরেফিন।

মামলাটির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে শামসুল আরেফিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মামলাটি ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’

যেসব মামলায় পুলিশ আসামি শনাক্ত করতে পারে না বা তথ্যপ্রমাণ যোগাড় করতে পারে না, সেগুলোতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এই মামলায় ভিডিও ফুটেজ থাকার পরও কেন এমন হলো, এমন প্রশ্নে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ থেকে অভিযুক্তদের কাউকেই শনাক্ত করা যায়নি। পরে ভিকটিমও তার জবানবন্দি দিতে অনীহা প্রকাশ করেছিল। ফলে আইনের বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে দ্রুত মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে হয়েছিল।’

তদন্ত কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন ফারুকী দাবি করেন, তাদের সংগ্রহ করা ফুটেজে লাঞ্ছনার বিষয়টি ছিলই না। তিনি বলেন, ‘নারী নির্যাতন মামলায় ১২০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে হয়। আমি ছিলাম এই মামলার তৃতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা। আমরা যে ভিডিও ফুটেজগুলো সংগ্রহ করেছিলাম তাতে এ ধরনের কোনো ঘটনার চিত্র ধরা পড়েনি। আর নারী নির্যাতন মামলায় ২২ ধারায় ভিকটিমকে জবানবন্দি দিতে হয়। কিন্তু অদিতি বৈরগী কোনো ক্রমেই জবানবন্দি দিতে রাজি হয়নি। ফলে আমাকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে হয়েছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ফুটেজে লাঞ্ছনার বিষয়টি প্রমাণ পাওয়ার কথা জানানোর পরও কেন তদন্তে বিষয়টি দেখা যায়নি, তার কোনো ব্যাখ্যা অবশ্য মেলেনি এই কর্মকর্তার কাছে। আর সেটি কোন ইউনিটের মিছিল ছিল, নেতৃত্বে কারা ছিলেন, আর সেই নেতাদের কাছ থেকে পরিচয় জানার চেষ্টা হয়েছে কি না, এসব প্রশ্নেরও জবাব মেলেনি।

বিষয়টি জানানো হলে মানবাধিকারকর্মী সালমা আলী প্রশ্ন তুলেছেন তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজে কিছুই পাওয়া যায়নি, তা আমার বিশ^াস হয় না। আর মেয়েটি কেন ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয়নি, সেটা আমার জানা নেই। তবে তাকে কাউন্সিলিং করে তার কাছ থেকে জবানবন্দি নেওয়ার দায়িত্ব ছিল তার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও আইনজীবীর। কেন তারা এই দায়িত্ব পালন করেনি সেটা আমার জানা নেই।’

‘এই ঘটনা তো নতুন নয়। সেই ১৯৯৯ সালে থার্টিফার্স্ট নাইটে যৌন হয়রানির কোনো বিচার হয়নি। এ কারণেই অপরাধীরা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। এর ফলে এই মনোভাবের মানুষ মনে করে তাদের কিছু হবে না। এ কারণেই তারা এসব অসভ্যতা করতে উৎসাহী হয়ে ওঠে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :