সংরক্ষিত আসন

‘মৌসুমি’ নেত্রীদের ভিড়ে হতাশ নিয়মিতরা

তানিম আহমেদ
| আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৫:০৬ | প্রকাশিত : ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:২৯

সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে বিনোদন অঙ্গনের অনেকেই ফরম সংগ্রহ করেছেন। গণমাধ্যমে তাদের নিয়ে প্রচারণাও বেশি। অনেকটা আড়ালে পড়ে যাচ্ছেন নিয়মিত রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নারী রাজনীতিবিদেরা। এ নিয়ে অনেকের মধ্যেই হতাশা তৈরি হয়েছে।

এদিকে মনোনয়ন ফরম বিক্রির হিসাবে নিয়মিত আসনের চেয়ে সংরক্ষিত আসন নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে প্রতিযোগিতা বেশি। দলটি থেকে ৩০০ আসনের জন্য চার হাজার ২৩ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। প্রতি আসনে গড়ে প্রায় ১৪ জন করে। অথচ ৪৩টি সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন প্রায় দেড় হাজার জন। গড়ে প্রতি আসনে সরকারি দল থেকে সংরক্ষিত আসনে সাংসদ হতে চান ৩৫ জন নেত্রী।

সংরক্ষিত আসন থেকে সরকারি দলের হয়ে সংসদে বসতে চান সংস্কৃতি জগতের অনেকেই। এ নিয়ে মূলধারার রাজনীতিকদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, তৃণমূলে যেসব নারী দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, রাজনীতিতে আছেন, তারাই প্রকৃত নারী নেত্রী। তারাই সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনের দাবিদার। অথচ পরিস্থিতি অন্য রকম। শোবিজের অনেকেই মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এর মধ্যে আছেন সারাহ বেগম কবরী, তারানা হালিম, শমী কায়সার, রোকেয়া প্রাচী, জ্যোতিকা জ্যোতি, মৌসুমী, সুজাতা, ফাল্গুনী হামিদ, সুবর্ণা মুস্তাফা, অঞ্জনা, দিলারা, অরুণা বিশ্বাস, শাহনূর, অপু বিশ্বাস, তারিন ও সুমী আক্তার। তাদের মধ্যে প্রথম পাঁচজন আগে থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু বাকিরা এবারের নির্বাচনের সময়ই সামনে এগিয়ে এসেছেন।

সংরক্ষিত আসনে সরকারি দলের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী শোবিজ তারকাদের প্রসঙ্গ টেনে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন। এ বিষয়ে তিনি ফেসবুক বার্তায় লিখেছেন, রাজনীতি থেকে মনে হয় বিদায় নিতে হবে, নায়ক-নায়িকাদের এত ভিড়ে আমাদের আর দেখা পাওয়া কঠিন। আন্দোলন-সংগ্রামের রোদে পোড়া শরীর এখন কিছুটা ভালো দেখতে হলেও নায়িকাদের রূপে বিলীন। ক্ষমতায় থাকতে এত লোক, বিরোধী দলে থাকতে তো কাউকে দেখি নাই।’

এ বিষয়ে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যা বাস্তব আমি তা লিখেছি। যারা রাজনীতি করে, তাদের বাস্তবতার মুখোমুখি সব সময়ই হতে হয়। এটা আমার নিজস্ব বক্তব্য। তবে আমি দলের পক্ষে বলেই এটা লিখেছি।’

তুহিনের মতো আরও অনেকেই ক্ষুব্ধ। তবে কেউ পরিচয় দিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে চান না। মনোনয়ন ঘোষণার পর তারা মুখ খুলতে পারেন।

তবে সংস্কৃতি অঙ্গনের মনোনয়ন ফরম কেনার বিষয়টি নেতিবাচকভাবে দেখতে চান না মহিলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অভিনয়শিল্পী রোকেয়া প্রাচী। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, শেখ হাসিনা এমন এক ব্যক্তিত্বের অধিকারী, এমন মায়াময় এক চরিত্র, ওনার ছায়ায় সবাই আসতে চান।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরে কাজ করি বলেই আমার মনোনয়ন নিশ্চিত, এটা বলতে পারব না। কারণ এটার সিদ্ধান্ত আপা নিবেন, দল নিবে। সংসদ সদস্য হতে চাওয়ার ইচ্ছে থাকা দোষের কিছু নয়।’

একই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমাদের সম্পৃক্ততার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। এই অঙ্গন থেকে এমপি হতে চাচ্ছেন, এটা অন্যায় না। তবে আমি আশা করছি, যারা দীর্ঘদিন আমাদের দলের সঙ্গে কাজ করছেন তাদের মূল্যায়ন করা হবে।’

সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা বাড়ার বিষয়ে নারীনেত্রী আয়েশা খানম ঢাকা টাইমসকে বলেন, রাজনীতিতে নারীদের আগ্রহ বেড়েছে, এটা ভালো দিক। তবে উদ্দেশ্য যদি হয় দ্রুত ওপরে ওঠা, সামাজিক প্রভাব বাড়ানো, তবে তা ভালো হতে পারে না। তার মানে, ভালো ও মন্দ দুটি দিকই আছে।’

অন্য দিকে দিয়ে জনপ্রিয় কারও রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত রাজনীতিবিদেরা কিছু চাপে পড়েন। এ বিষয়ে আয়েশা খানম বলেন, তারা তো বলতেই পারে উড়ে এসে কেন? এ রকম প্রশ্ন থাকতেই পারে। তবু আমি মনে করি, রাজনৈতিক আগ্রহ সৃষ্টিটা ইতিবাচক।’

সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়ন কীভাবে দেওয়া হবে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও দলটির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ফারুক খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এলাকায় প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা, দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, যে উদ্দেশ্যে মনোনয়ন চেয়েছেন তা বাস্তবায়নের সক্ষমতাÑ এগুলো দেখে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেওয়া হবে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :