যশোর ট্রাফিক পুলিশ

যত মামলা তত ভালো সার্জেন্ট!

যশোর প্রতিবেদক
 | প্রকাশিত : ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:২৬

সড়কে ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় যশোর ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্টদের মধ্যে মামলার প্রতিযোগিতা চলছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। মামলার সংখ্যার ওপর একজন সার্জেন্টের দক্ষতা মূল্যায়ন হয় বলে জোরেশোরে চলছে মামলা। গত এক বছরে যশোরে যানবাহন ও চালকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৩৮ হাজার ৬১৫টি।

তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দাবি, তারা কাউকে অহেতুক মামলা করতে উৎসাহিত করেন না।

ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, যে যত বেশি মামলা দিতে পারেন, তিনি ঊর্ধ্বতনদের কাছে তত বেশি ভালো কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচিত হন। তাই সকাল থেকে শুরু হয় ট্রাফিক সার্জেন্টদের মামলা দেওয়ার প্রতিযোগিতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রতি মাসে ট্রাফিক পুলিশের মামলার টার্গেট থাকে। বেঁধে দেওয়া টার্গেট দায়িত্বরত সার্জেন্টদের পূরণ করতে হয়। না হলে তাকে অদক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে গণ্য করা হয়।

যশোর ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এখানে ট্রাফিক আইনে প্রতি মাসে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা। মামলা হচ্ছে দুই থেকে তিন হাজার। গত বছরের (২০১৮) জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলা করা হয় ৩৮ হাজার ৬১৫টি। এগুলোর বিপরীতে জরিমানা করা হয় ৭ কোটি ৭ লাখ ৭৭ হাজার ১০০ টাকা।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে মোটরসাইকেল, হালকা যান ও ইজিবাইকের বিরুদ্ধে। যানবাহন আটক করা হয়েছে চার হাজার ৭৭২টি। ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলমেট ও ইন্স্যুরেন্স না থাকা; চালকসহ তিন আরেহীর কারণে বেশি মামলা হয়েছে মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে।

যথাযথ কাগজপত্র না থাকা, যত্রতত্র পার্কিং, রুট পারমিট ও ফিটনেস না থাকার কারণে মামলা হয়েছে কাভার্ড ভ্যান ও হালকা যানের বিরুদ্ধে। অনেক ক্ষেত্রে একজন মোটরসাইকেলচালকের নামে একাধিক মামলা দেওয়ার নজির আছে যশোর ট্রাফিক পুলিশের।

একজন সার্জেন্ট জানান, মামলা কম হলেই দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনে করেন, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি ওই সার্জেন্ট। ফলে ছোটখাটো কোনো কারণেও মামলা দিতে হয় সার্জেন্টদের।

অহেতুক মামলা দিতে কোনো সার্জেন্টকে উৎসাহিত করা হয় না বলে দাবি করেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলেই কেবল মামলা দেওয়া হয়। মূলত সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্যই মামলা দেওয়া হয় বলে জানান তারা।

যশোরে দিনের পর দিন মামলার সংখ্যা বাড়ছে। আর জরিমানার বিপুল টাকা জমা হচ্ছে সরকারের রাজস্ব খাতে। কিন্তু মামলা দিয়ে যানজট নিরসনে কোনো উন্নতি হচ্ছে না।

যানবাহনের জরিমানার টাকা নিয়ে আছে অনিয়মের অভিযোগ। কয়েকজন চালক জানান, অনেক সময় মামলার নামে টাকা নেওয়ার পর যানবাহনের চালকদের কোনো রসিদ দেওয়া হয় না।

যশোর ট্রাফিক বিভাগ থেকে জানা যায়, বর্তমানে তাদের লোকবলের বড় কোনো সংকট নেই। প্রায় সব পদেই পর্যাপ্ত জনবল রয়েছে। যশোর ট্রাফিক বিভাগে ইন্সপেক্টরের পাঁচটি পদের সব কয়টি পূর্ণ। সার্জেন্টের নয়টি পদের বিপরীতে আছেন পাঁচজন। টিএসআইয়ের তিনটি পদের মধ্যে দুজন কর্মরত আছেন। এটিএসআইয়ের ১০টি পদের সব কয়টিতে লোকবল আছেন। এ ছাড়া কনস্টেবল কর্মরত রয়েছেন ৫১ জন।

গাড়ি ও মোটরসাইকেলচালকেরা অভিযোগ করেন, কোনো একটা সুযোগ পেলেই মামলা ঠুকে দেন সার্জেন্টরা। কখনো কখনো হয়রানিমূলক মামলাও দেওয়া হয়।

মোটরসাইকেলচালক সেলিম জানান, শহরের দড়াটানায় মোটরসাইকেল থামিয়ে কাগজপত্র চেক করেন সার্জেন্ট নিশিকান্ত। সবকিছু ঠিক থাকার পরও কাগজ তৎক্ষণাৎ দেখাতে না পারা, ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য বা সার্জেন্টের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ করে মামলা দেওয়া হয়।

একইভাবে প্রতিদিনই ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে বলে চালকদের অভিযোগ।

যশোর ট্রাফিক বিভাগের বক্তব্য, দিনে দিনে রাস্তায় গাড়ি বাড়ছে, কিন্তু সে তুলনায় পর্যাপ্ত রাস্তা নেই। যান চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে ট্রাফিক পুলিশকে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। অনেক নামী-দামি স্কুল, শপিং মলের পার্কিং নেই। রাস্তা দখল করে গাড়ি পার্কিং করা হয়। প্রতিনিয়ত এসব ঝামেলা মোকাবিলা করতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে।

শুধু মামলা দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয় বলে মনে করে সচেতন মহল। মানুষের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ ও সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। একই সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের সততা ও পেশাদারি মনোভাব দেখাতে হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থা যুগোপযোগী করতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :