ইউটার্ন প্রকল্প

অদূরদর্শিতা আর সমন্বয়হীনতার নজির

আরিফুর রহমান
 | প্রকাশিত : ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:৩০

ঢাকার যানজট আর রাস্তায় গাড়ির ধীরগতির কারণে বিপুল কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে মানুষের। যাত্রাপথে এই দুই বিড়ম্বনা মানসিক পীড়ার কারণও রাজধানীবাসীর। ফ্লাইওভার, ইউলুপ, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে ইত্যাদি নানা উদ্যোগ নিয়ে যানজট নিরসনের চেষ্টা করছে কতৃর্পক্ষ। তেমনি একটা উদ্যোগ ছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নেয়া আবদুল্লাপুর থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণ প্রকল্প।

ভাবা হয়েছিল ইউটার্নগুলো বাস্তবায়িত হলে এই পথে যানজট দূর হয়ে যাত্রা গতি পাবে। কিন্তু ১০ কোটি টাকা খরচ করার পর এখন নতুন মূল্যায়ন হলো এই ইউটার্নে কাজ হবে না। ফলে বন্ধ করে রাখা হয়েছে কাজ।

এখন বলা হচ্ছে র‌্যাপিড বাস ট্রানজিট (বিআরটিএ) বা এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়ন হলে এগুলোর আর প্রয়োজন হবে না, ভেঙে ফেলতে হবে। একেক সময় একে মূল্যায়ন স্পষ্টত আমাদের সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের অদূরদর্শিতার নজির। একই সঙ্গে সমন্বয়হীনতাকেও আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

দেশে বিভিন্ন সংস্থার এমন অদূরদর্শী কর্মকা-ের কারণে আমাদের রাষ্ট্রের বিপুল অর্থের অপচয় হচ্ছে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এক সংস্থা রাস্তা নির্মাণ করে, পিচ বসার আগেই আর এক সংস্থা মাটি খুঁড়তে শুরু করে পানির পাইপ বা কেবল বসানোর জন্য। সুদীর্ঘকাল ধরে চলছে এই সমন্বয়হীনতা ।

ইউটার্ন প্রকল্প্র নিয়ে নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত অল্প সময়ের জন্য এ রকম ব্যয়বহুল প্রকল্প হয় না। যারা এমন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন এর দায়ভার তাদেরই নিতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এ ধরনের ঘটনায় দেশের কোনো কর্তাকে দায় নিতে দেখা যায় না। ফলে যাচ্ছেতাই ভাবে প্রকল্প গ্রহণ কিংবা ওপরের ব্যক্তিকে খুশি করার জন্য প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ মত দিতে বাধে না তাদের।

যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে সব সম্ভাবনা যাচাই-বাছাই করা উচিত। ইউটার্ন প্রকল্পেও যাচাই-বাছাই হয়েছে, প্রকল্প মূল্যায়ন হয়েছে বলে সংবাদে দেখা যাচ্ছে। তাহলে এত টাকা খরচ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার পর এখন ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে কেন? ইতিমধ্যে উত্তরার র‌্যাব-১ ও কাওলায় ইউটার্ন নির্মাণ হয়েছে। সেগুলো কতটুকু কাজে দিচ্ছে তার চেয়ে এখন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে বিআরটিএ। ইউটার্ন নির্মাণের আগে কি এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা বিআরটিএর কথা আলোচনায় ছিল না? তখন কেন উদ্যোক্তাদের এগুলোর সম্ভাবনার কথা জানানো হয়নি? আর এক্সপ্রেসওয়ের কাজ তো চলছে কয়েক বছর ধরে।

আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। তাদের মধ্যে পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদান ও সমন্বয় তৈরি করতে হবে। না হলে আমাদের কেবল ভাঙা-গড়ার চক্রে ঘুরপাক খেতে হবে। অপচয় হবে রাষ্ট্রের অর্থ। নানা সংস্কার কিংবা উন্নয়নের নামে ভোগান্তি পোহাবে জনগণ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে চলা বাংলাদেশে এমনটি আর চলতে পারে না।

লেখক: সম্পাদক, ঢাকা টাইমস ও এই সময়

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজপাট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা