ফ্রি জোত পারমিটে কাঠ পাচারে কমছে বনাঞ্চল

এনায়েতুর রহিম, পার্বত্য চট্টগ্রাম
 | প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:২৭

পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘জোত পারমিটের’ আড়ালে কাঠ পাচার ও বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু জোত পারমিট দিয়ে এলেও ব্যক্তিগত জোতের মালিকদের কাছ থেকে সিএফটি-প্রতি রাজস্ব আদায়ের কোনো আইনই এ পর্যন্ত করেনি বন বিভাগ।

বন নীতিমালায় সংযোজন করে প্রতি সিএফটি পারমিটের বিপরীতে পাঁচ টাকা করে রাজস্ব আদায় করা হলেও তিন পার্বত্য বনভূমি থেকে বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হতো বলে মনে করেন পরিবেশ ও বন বিশেষজ্ঞরা।

‘ব্যক্তিমালিকানাধীন বন অধ্যাদেশ, ১৯৫৯’ এবং ‘বন আইন, ১৯৭৩’ এর মাধ্যমে বনাঞ্চল থেকে কাঠ কাটতে পূর্ব অনুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই পূর্ব অনুমতিকে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ‘জোত পারমিট’ এবং জেলার বাইরে কাঠ পরিবহনের অনুমতিকে ‘ট্রানজিট পাস’ বা ‘টিপি’ বলা হয়।

সূত্র জানায়, রাঙামাটি বন সার্কেলের মোট ছয়টি বন বিভাগের প্রতি মাসে ৭০-৮০টি জোত পারমিট ইস্যু এবং প্রতিটি জোত পারমিটে অনূর্র্ধ্ব এক হাজার সিএফটি কাঠ আহরণের অনুমতি প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে। বন বিভাগ এই নির্দেশনা মানছে না এবং যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে মাসে ৭০০-৮০০টি জোত পারমিট ইস্যু করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর সংরক্ষিত পার্বত্য বনাঞ্চলের কাঠ চুরি করে এই জোত পারমিটের নামে বৈধতা দিয়ে হাজার হাজার সিএফটি কাঠ পাচার হয়ে চলেছে।

অভিযোগে প্রকাশ, বন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্য কর্মপরিকল্পনা না করে শুধু জোত পারমিট নিয়েই শ্রমঘণ্টা নষ্ট করে আসছেন। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এলাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ অভিন্ন এই জোত পারমিট পদ্ধতিতেই পাচার হচ্ছে। অসৎ কাঠ ব্যবসায়ী ও দুর্নীতিবাজ বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরস্পরের যোগসাজশে হওয়া কাঠ পাচারের এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে জোত পারমিটের আড়ালে। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে দুই পক্ষই। কিন্তু বন বিভাগের কোষাগারে কোনো অর্থ জমা পড়ছে না। পাশাপাশি কমছে দেশের বনাঞ্চলের আয়তনও।

পার্বত্য রাঙামাটিতে ১৯২০ সালে মাত্র পাঁচ একর জায়গা নিয়ে প্রথম বনায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম পৃথক জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা বর্তমানে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানÑএই তিন জেলায় বিভক্ত। ১৯০৯ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল চট্টগ্রাম বন বিভাগ থেকে নিয়ন্ত্রিত হতো।

১৯০৯ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বন বিভাগ প্রতিষ্ঠার সময় কাসালং, রাইনখিয়াং, সীতা পাহাড়, মাতামুহুরী ও সাঙ্গু অঞ্চলের ১ হাজার ৬৫ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে বন সার্কেল গঠিত হয়।

১৯৯৪ সালে সর্বশেষ বা বর্তমান বননীতি ঘোষণা করা হয়। বনাঞ্চল ও বনজ সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে সরকারের লাভজনক অর্থনৈতিক খাত বা রাজস্ব আদায়ের খাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা অবসানের সুদীর্ঘ ৭০ বছর পরও বর্তমান ওই বননীতিতে ঔপনিবেশিক চিন্তাধারার পরিবর্তন আসেনি বলে মনে করছেন পরিবেশ ও বন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ‘ব্যক্তিমালিকানাধীন বন অধ্যাদেশ, ১৯৫৯’ সংশোধন করে ফ্রি জোত পারমিটের বদলে প্রতি সিএফটি কাঠের রাজস্ব আদায় বাধ্যতামূলক করা হলে প্রতি জেলা থেকেই প্রায় শতকোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা পড়বে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :