শিক্ষক নিয়োগে অপরাজনীতির বলি মেধাবী প্রতীক

প্রভাষ আমিন
| আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:৩৫ | প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:২৩

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শান্তা তাওহিদা আমার ফেসবুক-বন্ধু। ১৪ জানুয়ারি ২০১৯, সোমবার বিকেল থেকে ফেসবুকে তার হাহাকার ছুঁয়ে যায়নি এমন কাউকে পাওয়া যাবে না। তিনি বারবার লিখেছেন, তার কলিজার টুকরা তাকে ছেড়ে চলে গেছে। কীভাবে তিনি তাকে ছাড়া বাঁচবেন। এই কলিজার টুকরা তার ছোট ভাই সাইফুর রহমান প্রতীক। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ছাত্র ছিলেন প্রতীক।

ছিলেন বলছি, কারণ প্রতীক আর নেই। ফ্যানে ঝুলে সব চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে গেছেন। কোনো শিক্ষার্থী মারা গেলেই আমরা তাকে ‘মেধাবী’ বলি। কিন্তু প্রতীক সত্যি সত্যি মেধাবী ছিলেন। অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। এই মেধাই তার কাল হয়েছে। তিনি চেয়েছিলেন শিক্ষক হতে। কিন্তু অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া প্রতীক যাতে শিক্ষক হতে না পারেন, সে জন্য শিক্ষকরা তাকে বিভিন্ন কোর্সে নম্বর কম দিয়েছে। এমনকি ২০ নম্বরে ২ বা ১০ নম্বরে ০ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া প্রতীককে মাস্টার্সে সুপারভাইজার দেয়া হয়নি।

পরিবারের অভিযোগ, প্রতীক যাতে শিক্ষক হতে না পারেন, সে কারণে বিভাগের শিক্ষকরা ষড়যন্ত্র করেছেন। পরিবারের অভিযোগ, এই হতাশা থেকেই প্রতীক আত্মহত্যা করেছে। শান্তা তৌহিদা তার ভাইয়ের আত্মহত্যার জন্য দায়ী সাত শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তারা যাতে দেশ ছাড়তে না পারেন, সে ব্যাপারে সহায়তা চেয়েছেন। ছোট ভাইয়ের মৃত্যুতে শান্তা হয়তো অনেক বেশি ইমোশনাল। তাই তার সব অভিযোগ আমি আমলে নিচ্ছি না। অভিযুক্তদের নামও তাই লিখছি না।

বরং খোঁজ নিয়ে জানলাম, বেশ কয়েকদিন ধরেই প্রতীক মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ছিল। প্রেমসংক্রান্ত জটিলতা ছিল। তার মধ্যে একধরনের আত্মহত্যা প্রবণতাও ছিল। সবই মানলাম, অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া একটি ছেলে যে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, দেখেও শিক্ষকরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেন না কেন। বাঁচানোর চেষ্টা তো করলেনই না, বরং তারা তাকে আরো চাপে রাখলেন।

শান্তা তৌহিদা লিখেছেন, ‘গত মাসেও আমি ভাইকে জিজ্ঞেস করেছি আমি কি তোর বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করব? আমার ভাই বলছে, আপু আমি জিআরআই দিয়েছি, আমি ইউকে চলে যাব, আমার তো রেফারেন্স লাগবে! শিক্ষকরা ভয় দেখাইছে কিছু করলে রেফারেন্স লেটার দেবে না। আমার ভাইরে মেরে ফেলছে ওরা।’

প্রতীকের আত্মহত্যার পেছনে অন্য যত কারণই থাকুক, শিক্ষক হতে না পারার হতাশাও ছিল। আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের নামে নানা অনিয়ম হয়, এটা তো ওপেন সিক্রেট। শিক্ষণ নয়, আমাদের এখানে নিয়োগ হয় ভোটার। কায়দা করে নম্বর বাড়িয়ে কমিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়।

নারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পছন্দ বাড়তি গুরুত্ব পায়, এসবই সবার জানা। তবে এ নিয়ে আলোচনা হয় সবচেয়ে কম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে আমরা নৈতিকতার উচ্চমান আশা করি। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যেন মেধাটাই মুখ্য হয়। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ যেন প্রাধান্য না পায়। প্রতীকের মতো আর কোনো মেধাবীকে যেন এভাবে অকালে হারিয়ে যেতে না হয়।

প্রভাষ আমিন: বার্তাপ্রধান, এটিএন নিউজ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :