‘আল্লাহ বুলবুলের ফরিয়াদ শুনেছেন’

রুদ্র রুদ্রাক্ষ
| আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:৫৯ | প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:১৬

‘একটা সমুদ্রের গভীরতা কি মাপা যায় কখনো? একদিন সকালবেলা আমার বাসার দরজায় সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ল। আমি তখনো টের পাইনি সেই ঢেউয়ের তীব্রতা কত। বুলবুলকে চিনতাম তখন একটু একটু। কিন্তু তখনো একসঙ্গে কোনো কাজ করা হয়নি। ও এসে বলল, ‘সাবিনা আপা, আমার গান আপনি গাইবেন?’

আমি স্বাভাবিকভাবেই বললাম, ‘দেখাও দেখি লিরিক্স।’ এরপর যা ঘটল তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমি। কী সহজ সুন্দর ভাষা! কী দারুণ দৃশ্যায়ন। আমি ওর প্রতিটা শব্দে আলাদা আলাদা দৃশ্য দেখতে পাই। ওই শুরু। এরপর থেকে যা হয়েছে পুরোটাই ইতিহাস।’

সদ্য প্রয়াত সুরকার, গীতিকার ও শিল্পী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে নিয়ে এভাবেই স্মৃতিচারণা করেন দেশের জীবন্ত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন।

সাবিনা বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা কী দারুণভাবে গানের যুদ্ধে অংশ নিল। সৃষ্টি করল একের পর এক অনবদ্য গান। প্রতিটি গান একজন সংগীতযোদ্ধার কাছে স্বাধীনতার মতো। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল এত বড় মাপের একজন প্রতিভা, যাকে ছোঁয়ার মতো কেউ এ দেশে এখনো জন্মেনি। ভবিষ্যতেও নেবে বলে মনে হয় না। নিভৃতচারী এই মানুষটা কখনো কোনো প্রচারণায় গা ভাসায়নি। এই তো মহানদের চরিত্র। মহান মানুষেরা কখনো স্রোতে গা ভাসায় না। বুলবুলও ভাসায়নি।’

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল বেঁচে থাকতে যথাযথ মূল্যায়ন পাননি বলে মনে করেন সাবিনা ইয়াসমিন। ‘শেষ দিকে সে কাজ থেকে দূরে ছিল। আমি বিশ্বাস করি না যে সে ইচ্ছা করেই কাজের বাইরে চলে গিয়েছিল। ওকে সঠিকভাবে তুলে ধরার দায়িত্ব আমরা পালন করিনি। এ জন্যই মানুষটাকে ঠিকঠাক মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে তরুণ প্রজন্ম।’

বীরাঙ্গনাদের নিয়ে করা এই শিল্পীর একটা গান এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় সাবিনাকে। ‘ওকে আর করল না কেউ বিয়ে’ শিরোনামের সেই গানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সাবিনা বলেন, ‘এই গানটা এখনো আমি শুনি। যতবার শুনি চোখ ছলছল করে। এটাই বুলবুলের সার্থকতা। একটি গান লিখবে এবং সারা জীবন গানটা এমনভাবে থেকে যাবে যে স্বয়ং শিল্পীও তার প্রভাবে স্মৃতিকাতর হবেন বারবার।’

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সঙ্গে নিজের আরও অনেক কাজ করার বাকি ছিল। কিন্তু তার চেয়েও অনেক ছোট বুলবুল চলে গেলেন। এই আক্ষেপ ঝরে পড়ে সাবিনার কণ্ঠে। বলেন, ‘বড্ড অসময়ে ছেলেটা চলে গেল। অথচ আমি ওর চেয়ে বয়সে কত বড়। আমাদের একসাথে আরও কত কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু কিচ্ছু হলো না।’ ভারী হয়ে আসে শিল্পীর কণ্ঠ।

“স্বাভাবিক মৃত্যু চাইত ছেলেটা সব সময়। যুদ্ধদিনের স্মৃতি ওকে তাড়িয়ে বেড়াত সারাক্ষণ। সেই তাড়নায় একের পর এক অনবদ্য দেশের গান লিখেছে সে। কিন্তু মনের মধ্যে সব সময় এক ক্ষতবিক্ষত স্মৃতি বয়ে বেড়াত ও। আমাদের দেখা হলে প্রায়ই বলত, ‘সাবিনা আপা, আমি স্বাভাবিক মৃত্যু চাই, অস্বাভাবিক লাশগুলোর অনেক যন্ত্রণা। আমি চোখে পানি আটকে রাখতে পারি না, আপা’।”

‘আমার বুলবুল, বাংলাদেশের বুলবুল, গানের বুলবুল স্বাভাবিক মৃত্যু পেয়েছে। আল্লাহ তার ফরিয়াদ শুনেছেন...’ আবেগাক্রান্ত সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠ যেন দূরাগত ধ্বনি হয়ে চলতে থাকে।

ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/আরআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :