মানিকগঞ্জে আ.লীগ প্রার্থীর পক্ষে না থাকার খেসারত

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০১৬, ০৮:২৪

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জ পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী রমজান আলীর পক্ষে কাজ না করায় জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে ঠাঁই হয়নি আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা প্রায় এক ডজন নেতার- এমন অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে আন্দোলন-সংগ্রামে পোড় খাওয়া নেতাদের ঠাঁই না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

তবে নতুন কমিটির সভাপতি এ অভিযোগ নাকচ করে বলছেন, পৌর নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত না মানায় ওই নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে আগেই। তাই তারা কমিটিতে নেই।

জেলা আওয়ামী লীগের সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের সর্বশেষ জেলা সম্মেলনে অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিনকে সভাপতি ও গাজী কামরুল হুদা সেলিমকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর দুই বছর পর ২০০৫ সালে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া  ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা  পরিষদও গঠিত হয় তখন।

প্রায় এক যুগ পর সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত রোববার জেলা পরিষদ ভবনে জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক নতুন কমিটির সব সদস্যকে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি নিজেও এই কমিটির অন্যতম সদস্য। ২৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা পরিষদও গঠন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার স্বাক্ষরিত কমিটির তালিকা থেকে দেখা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল হুদা সেলিম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ, আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক হায়দার আলী, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসাইন খান, সাবেক প্রচার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম পুলক, সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক বাসুদেব সাহা, সাবেক সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিব উদ্দিন সেলিম, সাবেক পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল ইসলাম পুলক ও সাবেক নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত হোসেন ময়েন নতুন কমিটিতে স্থান পাননি।

নতুন কমিটিতে বাদ পড়া কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অন্য কোনো নাম না নিয়ে সাবেক মেয়র মো. রমজান আলীর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কিন্তু রমজান আলীর বিরুদ্ধে তখন পৌরসভার নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল হুদা সেলিমকে ওই নির্বাচনে তারা সমর্থন দেন। এই সমর্থন দেয়ার কারণে নবাগত কমিটিতে তাদের ঠাঁই হয়নি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান পৌর মেয়র গাজী কামরুল হুদা সেলিম বলেন, কী কারণে বর্তমান কমিটিতে তাদের রাখা হয়নি সেটা মানিকগঞ্জের মানুষ জানে। তিনি এ ব্যাপারে আর কোনো মন্তব্য না করে নতুন প্রজন্মের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সাফল্য কামনা করেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ বলেন, ‘শেখ হাসিনার দুর্দিনে এক-এগারোর সময় যাদের মাঠে দেখা যায়নি, বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়ে ভোটের অধিকার আন্দোলনের সময় যাদের পাওয়া যায়নি, তারাই নতুন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। বিশেষ কোনো মহলকে খুশি করতে পারার যোগ্যতার কারণে হয়তো তারা কমিটিতে এসেছেন। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। তাই নতুন কমিটির শুভ কামনা করি।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, গত পৌর নির্বাচনে বিদ্রোর্হী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ কারণে নতুন কমিটিতে তাদের নাম নেই।

গোলাম মহিউদ্দিন দাবি করেন, ‘অনেক ত্যাগী ও পোড় খাওয়া নেতাদের নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়েছে। যেসব নেতা দলের নির্দেশ অমান্য করে, তারা কমিটিতে না থাকলে দলের কোনো ক্ষতি হবে না।’

(ঢাকাটাইমস/১৯অক্টোবর/মোআ)