১৯৮১-২০১৬: নট আউট শেখ হাসিনা

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০১৬, ২০:৫৫ | আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৬, ২১:০০

মোসাদ্দেক বশির, ঢাকাটাইমস

দলের নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়ার প্রস্তাব দিলেও মানেননি কাউন্সিলররা। আওয়ামী লীগের গত সাতটি জাতীয় সম্মেলনে মতো অষ্টম সম্মেলনেও একই চিত্র। সভাপতি হিসেবে একক প্রার্থী বঙ্গবন্ধু কন্যা, আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাস তিনি।

এই নিয়ে অষ্টমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তার দলের পদে আসা ছিল এক বিয়োগাত্মক পরিণতির ফসল। তবে রাজনীতিতে এসে দলকে ফিরিয়েছেন মূল স্রোতে, বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে ফিরিয়ে এনেছেন ক্ষমতায়। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিচার শুরু করেছেন যুদ্ধাপরাধীদের।  

বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় বেলজিয়ামে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরে বেলজিয়াম হয়ে তারা আশ্রয় পান ভারতে। এরপর বারবার দেশে আসার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেননি। সে সময়ের জিয়া সরকারের বাধায় মাতৃভূমিতে ফেরা হয়নি তাঁর।

এই পরিস্থিতিতে ১৯৮১ সালে তার অনুপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। দলের অন্য কোনো পদে না থাকা কাউকে এই প্রথম সভাপতি বানায় আওয়ামী লীগ। এরপর ওই বছরের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। এক করেন ভাঙন ধরা আওয়ামী লীগকে।

শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর গণতান্ত্রিক আন্দোলন জোরদার করে আওয়ামী লীগ। জানায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবি। এক পর্যায়ে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। এরপর আবারও দুই বছরের মধ্যে সামরিক শাসনের যাতাকলে পড়ে দেশ। এবার রাষ্ট্রপক্ষতায় আসেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

এরপর এরশাদবিরোধী আন্দোলন, ওই সরকারের পতন, দেশ গণতন্ত্রে ফেরার পর নির্বাচনে হেরে যাওয়া, আবার বিএনপি সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলন, সেই আন্দোলনে সাফল্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা, পাঁচ বছর পর আবারও নির্বাচনে পরাজয় এবং আবারও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারবিরোধী আন্দোলন, আবারও সেনা সমর্থিত সরকারের ক্ষমতায় আসা, পরে নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ে ক্ষমতায় ফেরা এবং বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংস আন্দোলন মোকাবেলা করে টানা দুইবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছেন শেখ হাসিনা। 

সব মিলিয়ে মোট ৩৫ বছর আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এর মধ্যে ১৯৮১, ১৯৮৭, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০২, ২০০৯, ২০১২ সালের কাউন্সিলে তিনি সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এবার অষ্টমবারের মতো নির্বাচিত হলেন।

এই ৩৫ বছরে দুই বার দলের নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা বলেছিলেন শেখ হাসিনা। প্রথমবার ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অপ্রত্যাশিত পরাজয় এবং সব শেষ ২০তম জাতীয় সম্মেলনের আগে। কিন্তু দুই বারই কাউন্সিলররা জানিয়ে দিয়েছেন তারা চান না তা।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১২ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বাংলাদেশে এর আগে কেউ এত বছর সরকারপ্রধান হতে পারেননি। এর বাইরে ১১ বছরেরও বেশি সময় তিনি ছিলেন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা।

১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি তিনটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর আবার জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন। তিনি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা পরিবর্তন করে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনে বিএনপিকে চাপ দিয়ে তাদেরকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবিতে ১৯৯৪-১৯৯৬ সালে বিএনপিবিরোধী তীব্র আন্দোলন শুরু করেন শেখ হাসিনা। তার আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচিত হয় এবং ২৩ জুন ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে দূরে সরা আওয়ামী লীগ আবার ফেরে ক্ষমতায়।

সভাপতি হিসেবে আওয়ামী লীগে রাজনীতি শুরু করলেও রাজনীতিতে শেখ হাসিনার হাতেখড়ি সেই ছাত্রজীবনেই।  তিনি সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/এমএবি/জেবি)