শেরে বাংলার প্রতি অবহেলা, মুছে যাচ্ছে স্মৃতিচিহ্নটুকুও

প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ০৮:১৮ | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ০৯:২১

মো. নজরুল ইসলাম, ঝালকাঠি

অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ও ‘বাংলার বাঘ’ খ্যাত শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ১৪৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৮৭৩ সালের এই দিনে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়ার মিয়াবাড়িতে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শেরে বাংলার জন্মস্থানে তার বহু জন্মস্মৃতি থাকলেও তা এখন বিলুপ্তপ্রায়। প্রায় শত বছর ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে শেরে বাংলার জন্মভবনটি।

সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে তার জন্মভবনটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে তা দায়সারা বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের।
বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে শেরে বাংলার জন্মস্থান ও তার জন্মস্মৃতি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন বহু পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন। তবে তারা হতাশ হয়ে ফিরে যান তার জন্মস্মৃতি জরাজীর্ণ ধ্বংসস্তূপ দেখে।

শেরে বাংলা বাবা ওয়াজেদ আলী একজন প্রখ্যাত আইনজীবী ছিলেন। মা বেগম সৈয়েদুন্নেছা ছিলেন গৃহিণী।

মিয়াবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম হযরত আলী জানান, শেরে বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হক শৈশবের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন তার এই নানাবাড়িতে। এখানে ঘাট বাঁধানো পুকুরে গোসল করা, পাশের নদীতে সাঁতার কাটাসহ অনেক স্মৃতি পড়ে আছে তার।

হযরত আলী আরো জানান, শেরে বাংলা অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরও একাধিকবার এই বাড়িতে আসেন। তার জন্মস্থান সাতুরিয়ায় মিয়াবাড়ির সেই আঁতুড়ঘর ও দালান এখন জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। কয়েক বছর আগেও শেরে বাংলার ব্যবহৃত বহু আসবাবপত্র এই বাড়িতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে, কিন্তু মূল্যবান ওই সব জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে।

এ কে ফজলুল হক প্রতিষ্ঠিত সাতুরিয়া এম এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফজলুল হক আকন জানান, শেরে বাংলা ১৯৪১ সালে তার খালার নামে মেহেরুন্নেছা মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সেটির এখন বেহাল অবস্থা। ভবন, শিক্ষক, বেঞ্চ সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।

তবে খুলনা বিভাগীয় প্রতœতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে সাড়ে চার লাখ টাকা ব্যয়ে শেরে বাংলার জন্মভবনটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে এ সংস্কার শুরু হলেও তা দায়সারা বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

এম এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোলায়মান হোসেনের ভাষ্য, ‘আমরা নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা এখানে বেড়াতে আসি শেরে বাংলার জীবন-ইতিহাস সম্পর্কে দেখতে, শুনতে, জানতে। কিন্তু তার বাংলার ব্যবহারিক কোনো জিনিসপত্র এখানে নেই। ফলে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি শেরে বাংলার জীবন সম্পর্কে জ্ঞানার্জন ও অনুপ্রেরণা পাওয়া থেকে।’

তাই এখানে শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের দাবি স্থানীয় বাসিন্দাসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজাপুর উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, শেরে বাংলার জন্মস্মৃতি রক্ষা ও এখানে জাদুঘর নির্মাণের ব্যাপারে তাদের আন্তরিক চেষ্টা থাকবে। ভবন সংস্কারে প্রত্নতত্ত্ব¡ অধিদপ্তর কাজ শুরু করেছে। বাকি কাজগুলোও অচিরেই হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।  

এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেরে বাংলার জন্মস্মৃতি রক্ষার নামে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। তবে ওই প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি। এখন যে সংস্কার হচ্ছে তা দায়সারা কাজ। শেরে বাংলার স্মৃতি রক্ষার জন্য কার্যকর পদক্ষেপের দাবি করছেন বিভিন্ন মহল।

(ঢাকাটাইমস/২৬অক্টোবর/মোআ)