‘সরকারকে রক্ষা নয়, আমরা জনগণের পুলিশ হতে চাই’

প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০১৬, ২০:৫৮ | আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৬, ১০:৫৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার পুলিশ আইনের পরিবর্তন চেয়ে বলেছেন, ২০০৭ সাল থেকে আইনটি পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছে পুলিশ। বর্তমান আইনে সরকারকে রক্ষা নয়, আমরা জনগণের পুলিশ হতে চাই।

শনিবার দিনব্যাপী চট্টগ্রাম মহানগর বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওয়াজেদিয়া এলাকায় কমিউনিটি পুলিশিং সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘১৮৬১ সালে পুলিশ আইন প্রণীত হয়েছিল যার আলোকে পুলিশ বাহিনী পরিচালিত হচ্ছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, পুলিশ আইন যখন তৈরি হয়েছিল তখন এতে লেখা ছিল, সরকারকে রক্ষা করার জন্য একটি বাহিনী করা হলো- যার নাম পুলিশ। তখনকার প্রেক্ষাপটের কারণে হয়তো এটি যথার্থ ছিল। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে এই আইনটির পরিবর্তন দরকার। আর জনগণের পুলিশ হতেই আমাদের এই কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা।’ 

‘জনতাই পুলিশ, পুলিশই জনতা’ কমিউনিটি পুলিশিংয়ের এই স্লোগান তুলে ধরে ইকবাল বাহার বলেন, ‘স্লোগানটি আমাদের বর্তমান আইজিপি শহীদুল হক তৈরি করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমার নিজের একটি স্লোগান আছে। সেটা হচ্ছে জনগণের জন্য পুলিশ, জনগণের জন্য জনগণ।’

কমিউনিটি পুলিশিং নিয়ে নিজের মত তুলে ধরে ইকবাল বাহার বলেন, ‘কমিউনিটি পুলিশের প্রথম বিষয়টি হলো অংশীদারিত্ব। আরেকটি বিষয় হলো পুলিশের সাথে জনগণের একটি সেতুবন্ধন রচনা করা। পুলিশ ও সমাজের প্রতিটি মানুষ মিলে যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে আমাদের পরাস্ত, পরাভূত করা যাবে না।’

নারীদের ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সরকারের সাড়ে ১৭ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে। এরমধ্যে চার লাখ ২৩ হাজার অর্থ্যাৎ ২৪ ভাগ নারী। যা পৃথিবীর বহু উন্নত দেশেও নেই। নারী যতই উপার্জন করতে পারবেন, ততই ক্ষমতায়িত হবেন।’

নারীদের প্রতি অনুরোধ রেখে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আপনারা নিজেদেরকে ক্ষমতায়িত করুন। পুরুষদের প্রতি অনুরোধ- নারীদের ক্ষমতায়িত করতে সহায়তা করুন। এতে আপনার ক্ষমতা কমে যাবে না। বরং আপনি গর্ববোধ করবেন।’

ইভটিজিং নিয়ে নারীদেরকে সচেতন হতে হবে। সাহসের সাথে ইভটিজিং প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে আস্তে আস্তে ইভটিজিং আর থাকবে না।- বললেন পুলিশ কমিশনার।

মাদক ব্যবসা প্রতিরোধে জনগণকে তাদের দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, আপনারা যারা সমাজে বসবাস করেন, প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু দায়িত্ব আছে। আপনার এলাকায় কে মাদক খায়, কে মাদক ব্যবসা করে, কে মাদকের সাথে জড়িত- আপনাদের চাইতে তো থানার পুলিশ ভালো জানার কথা নয়।

ইসলামে আছে- যদি আপনার সামনে কেউ খারাপ কাজ করে তাহলে তাকে বিরত করুন, যদি বিরত করতে না পারেন তাহলে তাকে নিষেধ করুন, তাও না পারলে তাকে ঘৃণা করুন। এখন এই তিন স্তরের কোনটিকে আপনি বেছে নেবেন সেটা ঠিক করুন। -বলেন পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার।

পুলিশকে তথ্য দিতে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন সিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, ফোনে পুলিশকে তথ্য দিতে পারেন। নগর পুলিশের ফেসবুক পেইজের মাধ্যমেও অপরাধের তথ্য দিতে পারেন। তথ্য দেয়ার জন্য অনেকেই আমাকে রাত ১টা, ২টা, ৩টায় পর্যন্ত ফোন করে। আমি কখনো বিরক্ত হই না। হবোও না ইনশাআল্লাহ।

পুলিশ কমিশনার বলেন, ৭০ লাখ মানুষের এই নগরীতে পুলিশের সংখ্যা মাত্র ছয় হাজার ৭০০। সে হিসেবে এক হাজার ৫০ জনের জন্য একজন পুলিশ। অথচ ৩৮ বছর আগে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের জন্ম হয়েছিল। তখন তিন হাজার জনবল নিয়ে ১০ লাখ মানুষের নিরাপত্তা দিয়েছিল পুলিশ। অর্থ্যাৎ ৩৩০ জন মানুষের বিপরীতে একজন পুলিশ ছিল। আজকে এক্ষেত্রে আমরা আরো পিছিয়েছি। তবে প্রাপ্তিটা যেন কম না হয় সেজন্য আমরা কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম শুরু করেছি।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরীকে ১৪৫টি বিটে ভাগ করে প্রতিটিতে একজন এসআই ও এএসআই এবং দুইজন কনস্টেবল নিয়োগ করা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে বিট পুলিশিংয়ের তথ্য সংগ্রহ শেষ হবে। এরপর জানুয়ারি থেকে বিট পুলিশিংয়ের সুফল মানুষ দেখতে পাবে। বর্তমান সময়ের চেয়ে আরও ভালো পুলিশি সেবা মানুষ পাবে।

পুলিশ কমিশনার ঘোষণা দিয়ে বলেন, আগামী ১ ডিসেম্বর লালদিঘীর ময়দানে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে কমিউনিটি পুলিশের বিশাল সমাবেশ হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আমাদের মাননীয় আইজিপি। আমি আশা করবো কমিউনিটি পুলিশের সবাই লালদিঘী ময়দানে গিয়ে নতুন করে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের শপথ নেবেন।

পুলিশ কার বন্ধু ও কার শক্রু হবেন তা সুনির্দিষ্ট করে বলে দিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, পুলিশ তারই বন্ধু হবে, যিনি শান্তিপ্রিয়, যিনি আইনমান্যকারী। পুলিশ চরম শক্রু হবে তার, যে আইন অমান্যকারী, যে অপরাধী। অপরাধী যেই হোক, তার কোন পরিচয় নেই।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর সিকান্দার খান, নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান, পাঁচলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম, ৩নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কফিল উদ্দিন প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/০৫নভেম্বর/আইকে/জেবি)