‘চুড়ি লইয়া যান’

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৬, ১৭:৩৩

লেখা ও ছবি : শেখ সাইফ

‘আফা চুড়ি লইয়া যান। ভালো ভালো চুড়ি আছে। নতুন নতুন চুড়ি আছে।’ এভাবেই পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন লক্ষ্মী।

টিএসসি থেকে শাহবাগের দিকে আসতেই রাস্তার পাশে চুড়ির পসরা সাজিয়ে বসে আছেন জনাকয়েক নারী। শুক্রবার বিকেল থেকেই এই এলাকায় বিনোদনপিয়াসী নাগরিকদের আনাগোনা বেশি থাকে। তাই ক্রেতার সংখ্যাও কম নয়।

বেচাবিক্রি কেমন হচ্ছে- জানতে চাইলে লক্ষ্মী বললেন, ‘মামা বিক্রি হয় ভালাই, তয় পুলিশের জন্নি তো ঠিকমত বসতে পারি না। মাঝেমইধ্যে পুলিশ আমাগো খেদায়া দেয়। ভার্সিটির আফারা আমাগোর থেইক্যা চুরি কেনে। শুক্রবার হওনে আজ বিক্রি একটু বেশি।’

কয় রকমের চুড়ি আছে? ‘রেশমি, খাজকাটা, কিরণমালা, জোনাকি, জয়পুরী, রংধনু, মেটালের চুড়ি বিক্রি করি।’ দেখিয়ে দেখিয়ে বলতে লাগলেন লক্ষ্মী।

তার চুড়ির দাম ৪০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। এক ডর্জন রেশমি চুড়ি ৪০-৫০ টাকা, খাজকাটা প্রতি ডর্জন ৫০-৬০টাকা, জোনাকি চুড়ির সেট ৭০-৮০টাকা, জয়পুরী চুড়ির সেট ১০০-১৫০টাকা, রংধনু ১০০-১২০টাকা, কিরণমালা সেট ৫০-৬০টাকা, মেটালের চুড়ি ৮০-১০০টাকা পর্যন্ত।

আরেক চুড়ি বিক্রেতা উম্মে হানী জানালেন, এখানকার চুড়ি বিক্রেতাদের তালিকা করেছে প্রশাসন। তাদের বেচাবিক্রির জন্যে নাকি নির্দিষ্ট স্থান করে দেয়া হবে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে এখন সতর্ক থাকেন চুড়ি বিক্রেতা হানুরা বেগম। তার ভাষ্য, ‘মামা আপনারাই আমগোর ব্যবসার পেটে লাথি মারেন। আপনারা আমাগোর ছবি নিয়া পেপারে দেন। আর পুলিশ আইসা আমগোরে খেদাইয়া দেয়।’

সংসারে কে কে আছে- জানতে চাইলে লক্ষী বলেন, ‘আমার ঘরে এক ছেলে এক মেয়ে আছে। স্বামী রিকশা চালায়। পোলা মাইয়া দুইডারে স্কুলে পড়াই। কোনো রকমে সংসার চলে মামা।’

উম্মে হানীর সঙ্গে চুড়ি বিক্রি করে তার সন্তানরাও। তিনি বলেন, ‘পোলা-মাইয়ারে স্কুলে পাঠাইছিলাম। তারা পড়বার চায় না। আমার সঙ্গে থাইকা বেচাবিক্রি করে। আমার স্বামী ঝালমুড়ি বেচে।’

চুড়ি কিনতে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রাইসা। তিনি বললেন, এখানকার চুড়ি অন্যান্য মার্কেটের চেয়ে কম দামে পাওয়া যায়। এখানে আসতে কোনো ভাড়াও লাগে না। হাঁটতে হাঁটতে চলে আসা যায়।

ঢাকাটাইমস/১৯নভেম্বর/এসএস/এমএইচ