একটি জাতি, সদস্য মোটে এক হাজার

প্রকাশ | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ১১:৪০ | আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৩:১২

মনোনেশ দাস, ঢাকাটাইমস

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ডালু সম্প্রদায়। ময়মনসিংহ বিভাগের উত্তরে ভারত সীমান্ত বরাবর বসবাস তাদের। ক্রমান্বয়ে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হচ্ছে গোষ্ঠীটি। সদস্য সংখ্যা কমতে কমতে এখন দাঁড়িয়েছে এক হাজারে।

নৃবিজ্ঞানীদের মতে ডালুরা ইন্দো মঙ্গোলয়েড গোষ্ঠীর একটি শাখা। তারা নিজেদেরকে মহাভারতখ্যাত তৃতীয় পাণ্ডব মহাবীর অর্জুনের পুত্র বভ্রুবাহনের বংশধর হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে।

ডালুদের দাবি অনুযায়ী একাকি বসবাসকালে অর্জুন পরিভ্রমণ অবস্থায় প্রাচীণ মনিপুর রাজ্যে উপনীত হলে সেখানকার রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদার রুপে মুগ্ধ হয়ে তার পানি গ্রহণ করেন এবং সেখানে কিছুদিন কাটান। পরে রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদা অর্জুনের ঔরষে একটি পুত্র সন্তান লাভ করেন এবং তার নামকরণ করেন বভ্রুবাহক। এই বভ্রুবাহকের বংশধর হিসেবেই ডালুরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকে। বভ্রুবাহন দীর্ঘদিনব্যাপী প্রবল পরাক্রমে মণিপুরে রাজত্ব করেন।

তারই অধঃস্তন পুরুষ সুবলাসিং শত্রুপক্ষের আক্রমণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। পরে তিনি নিজ ভ’ম মণিপুর ছেড়ে সদলবলে বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তে ভোগাই নদীর তীরে বারেংগাপাড়া এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। এটিই বর্তমানের ডালু কিল্লা অথবা ডালুগাঁও নামে পরিচিত। সংক্ষেপে এই স্থানকে ডালু নামে অভিহিত করা হয়।

পরে এই ডালুগাঁওকে কেন্দ্র করেই উত্তরে হাড়িগাঁও হতে দক্ষিণে হাতি পাগাড়, কুমারগাতী, সংড়া, যুগলী প্রভৃতি এলাকায় এবং কংশ নদীর পাড় পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় তাদের বসতি গড়ে ওঠে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ করে ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর বাংলাদেশে বসবাসকারী ডালু জনসংখ্যা প্রায় অনুল্লেখ্য পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে।

ডালুদের বেশভুষা, আচার ব্যবহার, রীতিনীতি এবং সামাজিক ক্রিয়া প্রায় ক্ষেত্রেই হাজংদের মতোই। বৃটিশবিরোধী কৃষক আন্দোলনে শেরপুর পরগনার বীর অধিনায়ক টিপু পাগলা ডালুদের পূর্ব পুরুষ বলে অনেকেই মনে করেন।

এখনও ডালুদের মধ্যে পাগলপন্থী অনেকের দেখা পাওয়া যায় । এই পাগলপন্থীরা একেশ্বরবাদী এবং পৌত্তলিকাবিরোধী। পাগলপন্থী ডালুরা জটাধারী এবং দাঁড়িগোঁফ রাখেন। গলায় মোটা ধরনের সাদা, কালো এবং নীল রংয়ের পুঁতির মালা পরিধান করে থাকে। ডালুদের বিবাহ হিন্দুদের মতোই। আদিবাসী কল্যণ সমিতি সূত্রে জানা যায়, আগেকার দিনে ডালু মহিলারা শাঁখা সিদুর ব্যবহার না করলেও এখন করেন ।

৩০ নভেম্বর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলালুজ্জামান সরকার উপজেলায় বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিভূক্ত বিলুপ্তপ্রায় এই ডালু সম্প্রদায়ের ১৫ টি পরিবারের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। তিনি শিশুদের চকলেট উপহার দেন। তাদের কোনো সমস্যা হলে তাঁকে অবহিত করার জন্য জানান ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিহাব উদ্দিন আহমদ, হালুয়াঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কবিরুল ইসলাম বেগ, ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের নেতা ভদ্র ¤্রং প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/৪ডিসেম্বর/ডব্লিউবি)