ইটভাটায় পুড়ছে উর্বর মাটি, হুমকিতে কৃষি উৎপাদন

প্রকাশ | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৯:৪০ | আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৯:৪৭

সাখাওয়াত হোসেন হৃদয়, ঢাকাটাইমস

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় আমন ধান কাটা শেষ হতে না হতেই জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি দুই থেকে তিন ফুট কর কিনে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটার মালিকরা। দেদারছে চলছে মাটি কেচাবেচা। প্রতি একশ ফুট মাটি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকা। এতে করে দীর্ঘদিনে গড়ে ওঠা জমির উর্বরতা একবারে বিলীন হওয়ার পথে রয়েছে। এতে ফসল উৎপাদনে ক্ষমতা হ্রাস হয়ে যাবে। একই সঙ্গে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা গড়ে ওঠায় রয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা।

কৃষি বিভাগ জানায়, জমির উপরিভাগের মাটি সরিয়ে ফেলা হলে জমির উর্বরতা হারিয়ে যায়। চাষাবাদের জন্য জমি হয়ে ওঠে অনুর্বর ও অনুপযোগী। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সময় লাগে প্রায় একবছর। যার কারণে ওই এক বছর ওই জমিতে ফসল উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায়। আর উপরিভাগের মাটি প্রতিবছর কাটার ফলে পুরো জমিই চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে করে কৃষি উৎপাদন ক্ষমতা মারাত্মক হারে হ্রাস পাচ্ছে।

এখনই চাষিদের এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত পরামর্শ দিয়ে সচেতন করা না গেলে কৃষিতে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার নয়টি ইটভাটায় প্রতিবছর প্রায় ৪০লাখ ইট তৈরি হচ্ছে। এজন্য মাটি পুড়তে হচ্ছে প্রায় ৮কোটি ঘনফুট। যার বেশিরভাগ মাটিই সরবরাহ হচ্ছে কৃষি জমি থেকে। 

নয়টি ইটভাটার সবকটিতেই ইট পোড়ানোর জন্য কৃষিজমির উর্বর মাটি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ইটভাটাগুলো হচ্ছে, পুলেরঘাটের সোনালী ব্রিকস ফিল্ড, পাটুয়াভাঙার এইউবি ব্রিকস ফিল্ড, হোসেন্দি পূর্বপাড়া মেসার্স নিশাদ ব্রিকস ফিল্ড, হোসেন্দি আতকাপাড়া মেসার্স নিউ ব্রিকস, সন্মানিয়ায় মেসার্স খান ব্রিকস, ছোটআজলদীতে মেসার্স নোভা ব্রিকস, খামা একতা ব্রিকস ফিল্ড, মজিতপুরে এমআর ব্রিকস ফিল্ড, সৈয়দগাঁওয়ে এইচএমবি ব্রিকস ফিল্ড।  

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভেকু মেশিন দিয়ে জমি থেকে ওপরের মাটি কেটে ইঞ্জিন চালিত ট্রলি দিয়ে ইটভাটাগুলোতে নেয়া হচ্ছে। এজন্য জমির মালিককে প্রতি ১০০ফুট মাটির মূল্য দেয়া হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২০০০টাকা।

কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ফেলা হলে জমি অনুর্বর ও চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ে- এ বিষয়টি অনেক চাষিই অবগত নন। সেজন্য অনেক চাষিই না বুঝে স্বল্প মুনাফার লোভে টপসয়েল বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে চাষিদের পর্যাপ্ত পরামর্শ দেয়া হলে টপসয়েল বিক্রি বন্ধ হবে বলে মনে করছেন অনেকে।  

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গৌর গোবিন্দ দাশ বলেন, জমির উপরিভাগের ৬-৮ইঞ্চি চাষাবাদের জন্য কার্যকরী। কিন্তু ওই অংশ কেটে ফেলা হলে জমি চাষাবাদের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ে। যা পূরণ হতে সময় লাগে একবছর। সেজন্য টপসয়েল বিক্রি জমির মালিকের জন্যই ক্ষতিকর। এব্যাপারে কোনো আইন না থাকায় কোনো পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না। তবে টপসয়েল যেন বিক্রি না করে সে ব্যাপারে চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কবির উদ্দিন জানান, ইটভাটা মালিকদের চিঠির মাধ্যমে ভাটায় কোরো প্রকার জ্বালানী কাঠ ও ফসলি জমির উর্বর মাটি ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। যদি কোনো ভাটায় ফসলি জমির উর্বর মাটি ব্যবহার করা হয় তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

(ঢাকাটাইমস/০৯ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/ইএস)