বইঃ আমার কথা

ভিশন-২০২১

অনলাইন ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ১২:৫৬

সৈয়দ আবুল হোসেন বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আমার কথা। এই বইয়ে তিনি নিজের চিন্তা, কর্মকাণ্ড, মূল্যবোধ, নানা অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখেছেন। এটি পড়লে তাকে যারা পুরোপুরি চিনেন না তাদের সুবিধা হবে। বইটি ঢাকাটাইমস২৪ডটকম ধারাবাহিকভাবে ছাপছে। বইটির আজকের পর্বে থাকছে- ‘ভিশন-২০২১’

বিশ্বের সেরা দেশগুলোর একটি হওয়ার স্বপ্ন দেখার- সব যোগ্যতাই আমাদের আছে। আছে উচ্চাকাঙ্ক্ষা। তবে আমরা শুধু উচ্চাকাঙ্ক্ষার ওপর নির্ভর করে বসে নেই। আমরা আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা অন্যান্য উন্নত দেশগুলো থেকে পিছিয়ে নেই। আমাদের সক্ষমতা অন্যান্য মানুষের চেয়ে কম নয়। দেশের প্রতি আমাদের ভালবাসা তাদের থেকে কোনো অংশে কম নয়। উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের পর্যাপ্ত সম্পদ রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণকে বোঝা মনে না করে সম্পদ ও শক্তিতে রূপান্তর করা গেলে সফলতা আসবেই। এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

সকল কর্মকর্তার উদ্দেশে বলছি, নিজেদের ওপর এবং সরকারের ওপর আস্থা রাখুন। আমরা বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর একটি হতে পারি, সর্বদা এ বিশ্বাস রাখুন।

আয়তনে ক্ষুদ্র হলেও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে ভূমিকা, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনীতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন ও শত্রুমুক্ত হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ও অবকাঠামোবিহীন নতুন দেশটির ৪৩ বছরের অর্জনের পরিসংখ্যান হতবাক করে দেওয়ার মতো। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশু মৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্র্য হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের শিক্ষণীয় প্লাটফর্ম। অমর্ত্য সেনের ভাষায়, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বকে চমকে দেওয়ার মতো, বিশেষত- শিক্ষাসুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, মা মৃত্যুহার, শিশু মৃত্যুহার ও জন্মহার হ্রাস, দরিদ্র জনগণের জন্য শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান এবং টিকাদান কার্যক্রম।”৬৭

ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এ অংশে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলো উপস্থাপন করা হবে। সরকারের কার্যক্রমগুলোতে নেতৃত্বের মূল বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। তার মাধ্যমে সারাবিশ্বে সেরা হওয়ার ব্যাপারে আমাদের উচ্চাভিলাষী হতে তাড়িত করবে। আমাদের ওয়েবসাইট-এ আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

প্রতিযোগিতামূলক আর্থনীতিক জ্ঞান এ বিষয়ে আমাদের প্রচণ্ড উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে এবং এর ওপর আমাদের আন্তর্জাতিক মর্যাদা নির্ভর করে। এ বিশ্বাসের কারণ হচ্ছে, অর্থনীতির উন্নতি মানুষের জীবনকে মর্যাদাশীল করে। আর আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের আর্থনীতিক ভিতকে শক্তিশালী করে তোলা। একটি সরকারের মৌলিক কাজ হচ্ছে, দেশের জনগণকে সুখে রাখা, কারণ তার মাধ্যমে নাগরিকদের মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত হয়। মর্যাদাপূর্ণ জীবনের প্রধান ভিত্তি হচ্ছে ভালো আয়, যার সঙ্গে জাতীয় আর্থনীতিক শক্তির গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

বৈচিত্র্যময় আয়ের উৎস দিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে চিত্রায়িত করা যায়। আর শুরুর দিকে আমরা এই কৌশলকে সফলতার সঙ্গে সম্পাদন করতে সক্ষম হয়েছি। উদাহরণ হচ্ছে, বহু গ্যাস-সমৃদ্ধ দেশ গ্যাসকেই তাদের অর্থনীতির একমাত্র উৎস হিসাবে গ্রহণ করেছে। আমরা তা করিনি। নানা সেক্টরে উৎস তৈরি করার চেষ্টা করছি। আমাদের অর্থনীতির প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, সারাবিশ্বে নিজেদেরকে প্রতিযোগিতামূলক করে তোলা, অগ্রগতি ও উন্নয়নকে চলমান রাখা। সারাবিশ্বের প্রতিপক্ষ প্রতিযোগীদের শক্তির ওপর আমাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। যদি আমরা আমাদের শক্তি হারিয়ে ফেলি, তাহলে আমাদের পশ্চাদপসরণ শুরু হবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, ব্যবসায় ও আর্থনীতিক সূচকে বিশ^-র‌্যাঙ্কিঙে প্রথম দশটি দেশের একটি হিসাবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করা।

আমাদের অর্থনীতির দ্বিতীয় লক্ষ্য হচ্ছে, ছোট ও মাঝারি মানের ব্যবসায় উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা করা, যাতে এক্ষেত্রে বহু উদ্যোক্তা তৈরি হয়। আমি বিশ্বাস করি, নিজস্ব ব্যবসায়ের মাধ্যমে আমাদের নাগরিকরা আর্থনীতিকভাবে শক্তিশালী হবে। যে ব্যবসায়ে থাকবে সৃজনশীলতা, উদ্যোগ এবং আত্মনির্ভরশীলতা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমাদের উচিত- স্কুল, কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়কে উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্র হিসাবে গড়ে তোলা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মাত্র দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসায় শুরু করুন। কারও কাছে চাকরির জন্য যাবেন না। কারও মুখের ঝামটি খাবেন না। আজকের তরুণরাই হয়তো আগামী দিনে আরও বেশি বেশি করে ব্যবসায় করবে, দেশকে সমৃদ্ধশালী করবে।

মানবসম্পদ উন্নয়ন আমাদের সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে, একটি উন্নত চরিত্রের সমাজ গঠন করা। মানবসম্পদ উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে, বিশেষ করে- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা এবং সংস্কৃতিতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা। আমরা মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দশটি দেশের একটি দেশ হিসাবে দেখতে চাই। সম্প্রদায়ের সকল সদস্যকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি শক্তিশালী পরিবার গঠন করতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, সুখী দেশগুলোর সূচকে বিশে^র প্রথম সারির একটি দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ।

সারাবিশে^র প্রতিপক্ষ প্রতিযোগীদের শক্তির ওপর তীক্ষè দৃষ্টি রাখতে হবে। যদি আমরা একদিনের জন্যও আমাদের শক্তি হারিয়ে ফেলি, তাহলে পরাজিত হয়ে আমাদের পেছনে ফিরে যেতে হবে। আজ পৃথিবীটা চলছেই প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে। সে-দৌড়ে ধীরে চলার নীতি অনুসরণ করার কোনো সুযোগ নেই। সেটা করলে পিছিয়ে পড়তে হবে। একবার পিছিয়ে পড়লে দৌঁড়ে গিয়ে আবার তাদের সঙ্গে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। তা হবে কচ্ছপ আর খরগোশের গল্পের মতো- যেখানে পরাজয় অনিবার্য হয়ে উঠবে। তাই দ্রুত পৌঁছাব মনে করে ধীরে চললে হবে না।

আমাদের একটি পরিশ্রমী এবং প্রচ- সাহসী প্রজন্ম রয়েছে। আমাদের উচ্চাকাক্সক্ষী তরুণ সৃজনশীল উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে, যারা হবে খুবই দায়িত্বশীল। আমরা আমাদের তরুণদের ওপর আস্থা রাখছি, তারা নিজেদের অর্জনকে উপভোগ করবে এবং তাদের পরিবারের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। আমাদের সরকারের লক্ষ্য ২০২১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বেসরকারি খাতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব ১০ গুণ বৃদ্ধি করা। সরকারের জন্য চাকরির নিরাপত্তা দেওয়া খুব বড় সমস্যা নয়। অপরদিকে, এটা জাতীয় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতগুলোর অন্যতম খাত। এই খাতের আরও ব্যাপক উন্নয়ন হতে পারে।

টেকসই পরিবেশ এবং অবকাঠামো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার অবকাঠামোর উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। আর এটা দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কেননা, মানবসম্পদ উন্নয়নের চেয়ে কম সময় লাগে বস্তুগত উন্নয়নে।

টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে এমন একটা উন্নয়ন যা বর্তমান জনসংখ্যার সার্বিক প্রয়োজন শুধু মেটাবে না, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজন মেটাতেও সক্ষম হবে। টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশের প্রশ্নটি জড়িত। দারিদ্র্য, ভূমিহীনতা, অপুষ্টি, অবহেলিত মৌলিক প্রয়োজন ও সেবার অভাব প্রভৃতি সমস্যার ফলে প্রতিবেশ, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হয়। আর্থনীতিক উন্নয়ন উদ্যোগের ফলে কিছু কিছু সেক্টর লাভবান হলেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিবেশ ও আর্থনীতিক ভারসাম্য নষ্ট করে। পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয় সেটি সচেতনভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

একটি জাতিকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে সমৃদ্ধ ও স্বকীয় ধারায় সমুন্নত রাখতে হলে টেকসই উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। টেকসই উন্নয়নের ফলে শিকড়বিহীন প্রবৃদ্ধি এড়ানো সম্ভব হবে। নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয় বিসর্জন দিয়ে কোনো সমাজের উন্নয়নকে সাধারণত ‘শিকড়বিহীন প্রবৃদ্ধি’ বলা হয়। আকাশসংস্কৃতির বদৌলতে আমাদের সমাজে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটছে। একমাত্র টেকসই সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কৌশলই পারে আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষা করতে। সাংস্কৃতিক স্বকীয়তার মাধ্যমেই কেবল টেকসই উন্নয়ন ও স্বকীয় মর্যাদায় অভিষিক্ত স্থিতিশীল সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণ সম্ভব।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য টেকসই উন্নয়নের উদ্যোগ একান্ত জরুরি। যে সকল বিষয়ে এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : (১) জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি ও স্থানান্তর, (২) দারিদ্র্য ও অপুষ্টি, (৩) ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, (৪) কৃষি উৎপাদনে বিপর্যয়, (৫) পানির প্রাপ্যতা ও সুষম বণ্টন, (৬) ভূমির ওপর চাপ হ্রাস, (৭) বনাঞ্চল ক্ষয়রোধ, (৮) মৎস্যচাষের উন্নয়ন ও বাধা নিরসন, (৯) জীববৈচিত্র্য হ্রাস, (১০) শিল্পায়নের দূষণ, (১১) জ্বালানি ও পরিবহন, (১২) অপরিকল্পিত নগরায়ণজনিত দূষণ ইত্যাদি।

পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো স্কুলের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ সকল বিষয়ের ওপর কোর্স চালু করবে এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। সরকারি কর্মকর্তাদের পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। জলবায়ু সমস্যা সমাধানের জন্য জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সরকারের একটি জলবায়ু পরিবর্তন সেল থাকা উচিত, যা জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর গবেষণা কর্মকা- পরিচালনা করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাস্তুহারা লোকদের পুনর্বাসন ও সামাজিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন করে এরূপ যানবাহন বন্ধ করার জন্য এ সকল যানবাহনের ওপর কর আরোপ করতে হবে। নিউক্লিয়ার প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলের সাথে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন সম্পর্কে সমঝোতা করতে হবে।

সারাবিশ্ব টেকসই উন্নয়ন নিয়ে উদ্বিগ্ন। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যের অধীনে বিশ্বের নেতৃবৃন্দ পরিবেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তারা তাদের জিডিপির ০.৭ শতাংশ সরকারি উন্নয়ন সহায়তা হিসাবে মারাত্মক পরিবেশ সমস্যার সম্মুখীন উন্নয়নকামী দেশগুলোকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অতএব আমরা আশা করতে পারি ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও অব্যাহত রাজনীতিক অঙ্গীকার এবং সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, এনজিও, নাগরিক সমাজ এবং সাধারণ সম্পত্তির ব্যষ্টিক ব্যবস্থাপক হিসাবে এ যাবৎ কর্মরত তৃণমূল পর্যায়ের লোকজনের সহায়তায় আমরা টেকসই উপায়ে আমাদের সীমিত সম্পদের দক্ষ ব্যবস্থাপনা করতে সক্ষম হব।

শিক্ষাব্যবস্থা একটি দেশের উন্নয়নের প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার সূতিকাগার। একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থার মর্মে থাকে এই বিশ্বাস যে, দেশ, মানুষ ও সভ্যতার বিকাশ হয় শিক্ষা-দীক্ষার মাধ্যমে। দেশের ভবিষ্যৎ গঠন হয় বিদ্যালয়ে।

শিক্ষা হচ্ছে আমাদের আবেগ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও এ বিষয়ে অবগত আছেন। তাঁর নিজেরও অনেক পরিকল্পনা ও চিন্তা রয়েছে। তা বাস্তবায়নও হচ্ছে। আমাদের সরকার কাজ করছে। এর ফলে এ ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভালো শিক্ষাব্যবস্থা ব্যতীত বাংলাদেশের অগ্রগতির অন্য কোনো পথ নেই। শিক্ষার উন্নয়ন হচ্ছে একটি চলমান প্রক্রিয়া- যার শুরু আছে, শেষ নেই। প্রতিদিনই পৃথিবী পরিবর্তিত হচ্ছে, বিজ্ঞানের ক্ষেত্র প্রসারিত হচ্ছে, প্রতিদিন নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার হচ্ছে। আমরা প্রতিযোগী, যে প্রতিযোগিতার শুরু আছে, শেষ নেই। অধ্যবসায়, দেশপ্রেম, কঠোর শ্রম ও নিবিড় নিষ্ঠায় আমাদের এ প্রচেষ্টা চলতেই থাকবে।

“স্বপ্ন দেখলেই একদিন স্বপ্নের মহীসোপানে পৌঁছানো সম্ভব হবে। আমরা ছোট দেশ ও উন্নয়নশীল দেশ বলে স্বপ্ন দেখব না, তা তো হয় না।”

বিশ্বের অন্যতম দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখার সকল যোগ্যতা আমাদের আছে। আজ যেটা স্বপ্ন, তা আগামী দিনে বাস্তব রূপ নেবে না- এটা কে নিশ্চিত করে বলতে পারে। স্বপ্ন দেখলেই একদিন স্বপ্নের মহীসোপানে পৌঁছানো সম্ভব হবে। আমরা ছোট দেশ ও উন্নয়নশীল দেশ বলে স্বপ্ন দেখব না, তা তো হয় না।

যে-কেউ আমাদের শিক্ষাকার্যক্রমের উন্নয়নের ওপর দৃষ্টি দিলে দেখতে পাবে, গত চার দশকে আমাদের শিক্ষাখাতের বিশাল অগ্রগতি হয়েছে। শিক্ষা সকলের অধিকার- এটা আমরা নিশ্চিত করেছি। এটি আমাদের সংবিধানের মাধ্যমে স্বীকৃত একটি অধিকার। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের যাত্রার শুরু থেকে শিক্ষাখাতের অগ্রগতি শুরু হয়েছে। শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহের অন্যতম হলো- শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম। নারীশিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি ব্যবস্থা। বর্তমানে ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ করা হয়েছে।৬৮ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করা হয়েছে। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর শতকরা হার ছিল ৬১, বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে শতকরা ৯৭.৭ ভাগে। শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত গরিব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন ২০১২’ প্রণয়ন করা হয়েছে, গঠন করা হয়েছে ‘শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট’।৬৯

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার স্কুল ও বিশ^বিদ্যালয় নির্মাণের ওপর দৃষ্টি দিচ্ছে, যেখানে সকল নাগরিকদের শিক্ষা নিশ্চিত করবে। সব বয়সের লোকজন এবং সব স্থানের লোকজন শিক্ষার অধিকার সমানভাবে ভোগ করবে। আগামী বছরগুলোতে শিক্ষা প্রদানের জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করা হবে, যেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা আধুনিক প্রযুক্তির ওপর বিশেষ দক্ষতা অর্জন করবে এবং মানবিক গুণসম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠবে।

আমাদের সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত বিজ্ঞান, গণিত এবং পড়াশুনায় বিশে^র প্রথম সারির দেশের মধ্যে অন্যতম একটি দেশ হিসাবে আমাদের দেশকে গড়ে তোলা। আমাদের শিশুদের মেধার ওপর আমার প্রচণ্ড বিশ্বাস ও আস্থা আছে। তারা অন্যদের থেকে কম মেধাবী নয়। তাদের থেকে বেশি মেধা নিয়ে কেউ জন্মগ্রহণ করেনি। আমাদের সরকারের লক্ষ্য শিক্ষাখাতকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়া। আমাদের সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলোকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হিসাবে গড়ে তুলতে চাইছে সরকার। আমাদের শিক্ষকদের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। আর এগুলোই হচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষাখাতের উন্নয়নের কার্যক্রম। আমিও আমার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছি প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

কৃষিখাত ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা

কৃষিখাতে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্য সারাবিশ্বের বিস্ময়। কৃষিখাতে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য সাফল্যগাঁথা বিশ্বদরবারে বারবার আলোচিত হয়েছে। প্রায় ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম আবিষ্কার করেছেন পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং। সারাবিশ্বে আজ পর্যন্ত মাত্র ১৭টি উদ্ভিদের জিনোম সিকুয়েন্সিং হয়েছে, তন্মধ্যে ড. মাকসুদুল আলম করেছেন তিনটা। অসামান্য এ অর্জন বাংলাদেশকে বিজ্ঞানের দিক থেকেও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে।

২০১২-১৩ অর্থবছরে খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৭৫ লক্ষ মেট্রিক টন। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষির অবদান ধীরে ধীরে কমে আসছে। এ থেকে কৃষির গুরুত্বকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। ২০১১-১২ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ১৯.২৯ শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছরে কৃষির অবদান ছিল ২০.০১ শতাংশ। আর্থনীতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কৃষির অবদান কমতে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে শিল্পখাত ও সেবাখাতের অগ্রগতিতে কৃষিই অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির ৪৩.৬ শতাংশ কৃষিখাতে নিয়োজিত। ২০১১-১২ অর্থবছরে কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি হয় ৪০২.৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কাঁচাপাট, পাটজাতদ্রব্য, চা, হিমায়িত খাদ্য প্রধান কৃষিপণ্য হলেও সরকার অপ্রচলিত কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।৭০

নারী ও শিশু নারী ও শিশু উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বের আর একটি বিস্ময়। নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে “জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১”। নারীশিক্ষাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি কার্যক্রম। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করার জন্য গ্রহণ করা হয়েছে বহুমুখী পদক্ষেপ। প্রযুক্তিজগতে নারীদের কার্যকর অংশগ্রহণকে সহজ করার লক্ষ্যে ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের ন্যায় ইউনিয়নভিত্তিক তথ্যসেবায় উদ্যোক্তা হিসাবে একজন পুরুষের পাশাপাশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন নারী উদ্যোক্তাকেও।৭১ “জাতীয় শিশু নীতিমালা-২০১১” প্রণয়নের মাধ্যমে শিশুদের সার্বিক অধিকারকে সুরক্ষিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের ৪০টি জেলার সদর হাসপাতাল এবং ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপন করা হয়েছে ‘ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেল’। দুঃস্থ, এতিম এবং অসহায় পথ-শিশুদের বিকাশের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৫টি শিশু-বিকাশ কেন্দ্র।৭২

বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা ‘বাংলাদেশের ভিশন-২০২১’-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা খাত। আমরা সব অঞ্চলে শতভাগ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকি। আমাদের যুদ্ধ বা প্রতিযোগিতা স্বাস্থ্যসেবায় নয়, বরং স্বাস্থ্যসেবার মান আরও উন্নত করায়। সরকার যদি স্বাস্থ্যসেবাকে উচ্চমানসম্পন্ন করতে চায় আমাদেরকে শুধু স্বাস্থ্যখাতকে মানসম্পন্ন করলেই চলবে না, বরং সরকারি এবং বেসরকারি কর্মকর্তাদের একত্রিত করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মী, স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ, প্রতিষেধক, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্যখাতের অন্যান্য শাখার গুণগত মানোন্নয়ন এবং দেশের প্রতিটি হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে ভিশন-২০২১-এর উদ্দেশ্য কার্যকর পরিমাত্রায় অর্জিত হবে।

স্বাস্থ্যখাতে আমরা ইতোমধ্যে অনেক অগ্রসর হয়েছি যা আমাদের প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের অনেকের কাছে ঈর্ষণীয় ও অনুকরণীয়। শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদর্শ দেশ হিসাবে স্থান করে নিয়েছে। স্বাস্থ্যখাতকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে “জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা-২০১১”। তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক। ৩১২টি উপজেলা হাসপাতালকে উন্নীত করা হয়েছে ৫০ শয্যায়। মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালগুলোতে ২ হাজার শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাতৃমৃত্যু ও শিশু-মৃত্যুহার এবং জন্মহার হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে নবজাতকের মৃত্যুহার ১৪৯ থেকে নামিয়ে ৫৩-তে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। এটি একটি অবিশ্বাস্য অর্জন। স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ১২টি মেডিকেল কলেজ, নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৪৭ হাজারেরও বেশি জনশক্তি।৭৩

শিল্প ও বাণিজ্যখাত বাংলাদেশের পোশাকশিল্প সারাবিশ্বে আজ অদ্বিতীয়। পোশাকশিল্পের পাশাপাশি প্রসার ঘটেছে আবাসন, জাহাজ, ওষুধ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্যশিল্পের। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় যুক্ত হয়েছে জাহাজ, ওষুধ এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী। বাংলাদেশের আইটি শিল্প বহির্বিশ্বে কুড়িয়েছে অভূতপূর্ব সুনাম। ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের আইটি শিল্প ২২ কোটি মার্কিন ডলারেরও অধিক রপ্তানি-আয় করেছে।

প্রবাসী শ্রমিকদের উন্নয়ন বর্তমানে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে বাংলাদেশের ৮৬ লাখের অধিক শ্রমিক কর্মরত আছে। বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ স্থাপন করেছে অবিস্মরণীয় মাইলফলক। স্বল্প সুদে অভিবাসন ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে প্রবাসী-কল্যাণ ব্যাংক স্থাপন করে দেশের ৭টি বিভাগীয় শহরে শাখা স্থাপন করা হয়েছে। এ ব্যাংকের মাধ্যমে এপ্রিল ২০১৪ পর্যন্ত ২০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা অভিবাসন ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে বিদেশ-গমনেচ্ছু জনগণকে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণকেও এ সেবা গ্রহণের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এর অনিবার্য ফলস্বরূপ মধ্যস্বত্বভোগীদের হয়রানি ছাড়াই স্বল্প ব্যয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের জনসম্পদের প্রবাহ অবারিত হয়েছে।৭৪

বিদ্যুৎখাত বিদ্যুৎখাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে- জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত ৬ হাজার ৩২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযোজন। ফলে বিদ্যুতের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ২২০ কিলোওয়াট/ঘণ্টা থেকে বেড়ে ৩৪৮ কিলোওয়াট/ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। নতুন বিদ্যুৎসংযোগ প্রদান করা হয়েছে ৩৫ লক্ষ গ্রাহককে। নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ৬৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে প্রতিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।৭৫

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে বাংলাদেশ সরকার যুগান্তকারী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে দেশের ৪,৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে- ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজার। দেশের সবকটি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়। টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৪০ লাখ এবং ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৫০ লাখে উন্নীত হয়েছে। সেবাপ্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করার অভিপ্রায়ে চালু করা হয়েছে ই-পেমেন্ট ও মোবাইল-ব্যাংকিং পদ্ধতি। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পাদন করার বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে। ৩-জি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্কের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে পুরোদমে। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ডিজিটাল বাংলাদেশের কার্যক্রমকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিদ্যালয়সমূহের পাঠ্যসূচিতে আইসিটিকে যথাগুরুত্বে স্থান দেওয়া হয়েছে। গ্রাম পর্যন্ত গড়ে তোলা হয়েছে আইসিটিভিত্তিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র।৭৬

নিরাপদ ও বিপদমুক্ত জাতি গঠন সরকারের ভিত্তি হচ্ছে ন্যায়বিচার। বাংলাদেশ টিকে আছে ন্যায়বিচারের ওপর। পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এই গুণটি বজায় রাখার সকল প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। বিচারব্যবস্থায় ন্যায়বিচার শুধু ভালো রায় থেকেই আসে না, আইনি প্রক্রিয়ার সহজ প্রয়োগ ও গতিশীলতা এবং কোর্ট কেসের দ্রুত সমাধানেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায়। আর এগুলো কেবল সম্ভব হয় কার্যপ্রণালির গতিশীলতায়, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে এবং স্বচ্ছতা ও দায়িত্বের সর্বোচ্চ মান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।

সরকার বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার উন্নয়ন করে যাচ্ছে। আমাদের অতীত ঐতিহ্য ও ইতিহাস প্রদর্শিত পথের ওপর ভিত্তি করে এই বিচারব্যবস্থার উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা ও ঝুঁকিমুক্ত করার সম্বন্ধে, আমি ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ট্রাফিক দুর্ঘটনায়- যে কারণে বহু তরুণকে দুর্ভাগ্যবশত হারাতে হচ্ছে। আমি যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালীন সবচেয়ে ভালো রাস্তা, ব্রিজ এবং মেট্রোরেলের কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছি। বেশিরভাগ তরুণ খুব সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালায়ও বটে। তবে দুর্ঘটনার পিছনে মূল কারণ হচ্ছে- দ্রুতগতি, রাস্তার পরিসর, জনাধিক্য এবং গাড়ি চালানোয় চালকের অসাবধানতা।

“উন্নয়নের দায়িত্ব হচ্ছে ভারী একটি কাজ। রাস্তা পরিষ্কার, ঘড়ি টিকটিক করছে, অতএব, একদিন আমাদের দেশ আমাদের কাজের সাক্ষ্য দেবে। জনগণ আমাদের যে ম্যান্ডেন্ট দিয়েছিল তার কী করেছি, সেটার জবাবদিহি করতে হবে। জবাবদিহির কথাটি সবাই মাথায় রাখলে সমস্যা হবে না।”

সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের এখানে একটি বড় সমস্যা। প্রতিবছর অনেক লোক মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর ১২ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করে এবং ৩৫ হাজার লোক মারাত্মকভাবে আহত হয়। উন্নত বিশ্বে প্রতি ১০ হাজার গাড়িতে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত গাড়ির সংখ্যা দু’শ, বাংলাদেশে তা ৫০-এর ঊর্ধ্বে। ভারত ও পাকিস্তানে তা যথাক্রমে ২০ এবং ১৭.৩।৭৭

ব্র্যাকের ‘প্রমোটি সেফ রোড অ্যান্ড সেফ রোড কোড’ প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে মোট ১৮১৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২৩৫১ জন। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে ১৩১৩টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৮৪৫ জন। এসব দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা ৫৪০৮ জন।৭৮

এ সমস্যাটির সমাধান দরকার। আমি যখন যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলাম তখন কাজ করেছি। আমার সময়ে একটা দুর্ঘটনা ঘটলে আমার পদত্যাগ চাওয়া হয়। শহিদ মিনারে অনশন হয়। কিন্তু এখন তো দুর্ঘটনা আরও বেশি হয়; কোনো দায়-দায়িত্ব কারও আছে বলে মনে হয় না। কেবল তাই নয়, এখন কোনো মন্ত্রীরও পদত্যাগ করার দাবিও করা হয় না। এ ব্যাপারে জনগণকেই ঠিক করতে হবে- তাঁরা আসলে কী চান। একজন মন্ত্রীর পদত্যাগই সব সমস্যার সমাধান, নাকি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যদিও আমার লক্ষ্য ছিল, ট্রাফিক সংশ্লিষ্ট মৃত্যুর হারের দিক দিয়ে সবচেয়ে কম মৃত্যুর হারের দেশগুলোর র‌্যাঙ্কিঙে, প্রথম ১০টি দেশের একটি দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ। কারণ, মানুষের জীবনের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই। যাই হোক, কোনোভাবে ট্রাফিক সংশ্লিষ্ট মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।

যুগোপযোগী ভূমি-ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত ভূমিকেন্দ্রিক। বিশ্ব-অর্থনীতির ক্ষেত্রেও একথা বহুলাংশে প্রযোজ্য। ভূমি-ব্যবস্থাপনা একটি জাতির আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। তাই সরকার বাংলাদেশের প্রাচীন ভূমি-ব্যবস্থাপনায় আধুনিক সংস্কার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ভূমি-ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করতে ৫৫টি জেলায় বিদ্যমান মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ান কম্পিউটারাইজেশনের কাজ শুরু করা হয়েছে। ভূমির পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মোট ২১ জেলার ১৫২ উপজেলায় ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ সংবলিত প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রণীত হয়েছে “কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন- ২০১২”। অচিরে এ কাজ শেষ হবে। তখন বাংলাদেশের ভূমি-ব্যবস্থাতেও আসবে গতিশীলতা। কমে যাবে ভূমিসংক্রান্ত মামলা। মানুষের ভূমিসংক্রান্ত ভোগান্তি শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে।

জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যোগদানের পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ৩৯টি দেশের ৬৪ শান্তি মিশনে খ্যাতি ও সফলতার সঙ্গে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এ যাবৎকালে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। বাংলাদেশের এ কৃতিত্ব বিশ্বের আর কোনো দেশ অর্জন করতে পারেনি। শান্তি মিশনে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের অসামান্য কৃতিত্ব জাতির একটি পরম অহঙ্কার। মিশনে অনেক বাংলাদেশি শহিদ হয়েছেন। আমরা তাঁদের পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।৭৯

মন্দা প্রতিরোধ ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধান মন্দার প্রচ- প্রকোপে বৈশ্বিক অর্থনীতির চরম বিপর্যয়কালেও বাংলাদেশ বিভিন্ন উপযুক্ত প্রণোদনা প্যাকেজ ও নীতি সহায়তার মাধ্যমে মন্দা মোকাবিলায় শুধু সক্ষম হয়েছে তাই না, সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৬ শতাংশের ওপরে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব-অর্থনীতির শ্লথধারার প্রভাবে ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশের অর্থনীতি যেখানে ঝড়ের বেগে নিচে নেমে গিয়েছে, সেখানে অসাধারণ সাফল্যে বাংলাদেশ এগিয়ে গিয়েছে। বিশ্ব-অর্থনীতির শ্লথগতির মধ্যেও বাংলাদেশ আমদানি-রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি সম্প্রসারণের পাশাপাশি রেমিট্যান্সের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।

হত-দরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা-বেষ্টনী নিবিড় ও বিস্তৃত করার লক্ষ্যে বয়স্কভাতা, বিধবা-ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুঃস্থ মহিলা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী-ভাতা, মাতৃকালীন-ভাতাসহ ভাতার হার ও আওতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে সরকার বাংলাদেশের মানুষের সামাজিক নিরাপত্তাকে সুদৃঢ় ও বিস্তৃত করেছে। ২০০৮-০৯ খ্রিস্টাব্দে এ খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, বর্তমানে এ কার্যক্রমে বরাদ্দের পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। খানা আয়-ব্যয় জরিপ, ২০১০-এর সমীক্ষা অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪.৫৭% সামাজিক নিরাপত্তা-বেষ্টনীর আওতাভুক্ত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের মতো ছোট অথচ বিপুল জনসংখ্যার একটি দেশের জন্য এক অবিশ্বাস্য সাফল্য।৮০

ভিশন-২০২১ অর্জনের জন্য, আমি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলোর ওপর খুব ছোট পরিসরেই বলেছি। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করেছি। ছোট পরিসরে এরকম একটি বড় বিষয় আমি সবিস্তারে তুলে ধরতে পারছি না। আমি বিশ্বাস করি, রোডম্যাপ, লক্ষ্যসমূহ এবং দেশের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতসমূহ সম্পর্কে মানুষের জানার অধিকার আছে। আমাদের লক্ষ্যসমূহ নাগরিকদের কাছে স্পষ্ট হলে আমরা এসব অর্জনের খুব কাছে চলে যাব।

সরকার তার লক্ষ্যসমূহ একা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। এটি কোনো দেশের সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। অবশ্যই সামাজিক শক্তিগুলোকে সরকারের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে এবং যুক্ত করতে হবে। বেসরকারি খাত এবং সমাজের সকল যন্ত্র সেখানে অংশগ্রহণ করবে। উন্নয়নের দায়িত্ব হচ্ছে কঠিন ও দায়িত্বশীল একটি কাজ। আমাদের অনেক পথ, তেমনি অনেক রথ। রাস্তা পরিষ্কার, ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করছে, অতএব একদিন আমাদের দেশ আমাদের কাজের সাক্ষ্য দেবে। পৃথিবী জানতে পারবে, বাংলাদেশ আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নয়নের ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে।

আমাদের দেশ ছোট হতে পারে। তবে আমাদের নাগরিকরা অসাধারণ। তারা নিষ্ঠাবান, পরিশ্রমী এবং নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ে নিতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করার যথেষ্ট ধৈর্যও আমাদের রয়েছে। আমাদের কৃতিত্ব এবং আমরা যা অর্জন করেছি, তা শুধু অসাধারণ নয়, বরং ঐতিহাসিক। সামনে এগিয়ে যাওয়া আমাদের ব্রত। ভবিষ্যতের বিনির্মাণের জন্য জোরকদমে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ নেই, আমাদের একমাত্র পথ হচ্ছে- যৌথ প্রচেষ্টা, ঐকমত্য এবং একত্রে কাজ করে যাওয়া। আমরা পারি- এ স্লোগানকে বাস্তবায়ন করতে।

এক্ষণে আমাদের উচিত সবাই মিলে দেশের উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস অব্যাহত রাখার মাধ্যমে জনকল্যাণমুখী কার্যক্রম পরিচালনায় নিবেদিত থাকা। সম্মিলিতভাবে অগ্রসর হলে আমাদের তরুণ প্রজন্ম উজ্জ্বল, সুন্দর এবং সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ তৈরি করতে সক্ষম হবে। আর তখনই দেশ ও জাতি সত্যিকার উন্নয়নে বিভূষিত হবে।

আগামীকাল কাল থাকছে - “ঝুঁকি বনাম সাফল্য” আরও পড়ুন -‘সৃজনশীলতা’ ‘বিনিয়োগ’, ‘বাংলার বসন্ত’, ‘সময়, শ্রম ও অধ্যবসায়’ ‘আমার আদর্শ আমার নায়ক’ , ‘ধৈর্য পরীক্ষা’, ‘খেলাধুলা ও বাংলাদেশ’ ‘অধ্যয়ন, লেখালেখি ও নেতৃত্ব’ ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশ’, ‘সাফল্যের স্বর্ণদ্বার’ , ‘ঐক্যবদ্ধ শক্তি সাফল্যের মেরুদণ্ড’ ‘পদ্মা সেতু’, `বিজয়চিহ্ন 'V' প্রকাশে ভিন্নতা', ‘উন্নয়ন ও অগ্রাধিকার’ , ​‘ইতিবাচক ভাবনা সাফল্যের চাবিকাঠি’ , ‘ভবিষ্যতের সরকার কেমন হবে’ ‘মাতৃভাষার প্রতি মমতা’, ‘সুখ ও শান্তি : আমাদের করণীয়’ , ‘নেতৃত্বের শক্তি’, ‘আদর্শ জীবন গঠনে মূল্যবোধ’, ‘আমার প্রাত্যহিক জীবন’​, 'আমার অনুভব'

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :