নরসিংদীতে পচন আতঙ্কে শিম চাষিরা

প্রকাশ | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৪:০৭

এম লুৎফর রহমান, নরসিংদী

নিরসিংদীর শিম চাষিদের নতুন দুশ্চিন্তার নাম পচন রোগ। এই পচন এখন চাষিদের কাছে আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে। নরসিংদী জেলার শিম চাষিদের অবস্থা এখন এমনই। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় কোনো কিছুতেই পরোয়া নেই তাদের। ফসল ওঠলে সুদে-আসলে কৃষকের মুখে ফুটে হাসির ঝিলিক। কিন্তু সেই ফসলই এখন নষ্টের মুখে।

আগাম ফসল বাজারে আনার যে সপ্ন ছিল, তা পুরোপুরি পূরণ করতে পারছেন না কেউই। এখন পর্যন্ত জেলার অধিকাংশ শিম চাষিই শিম বিক্রি করতে পারেননি বাজারে। ফলে চলতি বছরে লাভের মুখ আর তাদের দেখা হবে না। পাশাপাশি পাইকারি বাজারে ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে উঠেছে। অল্প যেটুকুই বা বাজারে আসে কায়দা করে তার ফায়দা লুটে নেয় ফড়িয়ারা। আর স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ তো রয়েছেই শিম চাষিদের।

নলডোক, ইরশা-১, ইরশা-২ ও বারি এই চার জাতের শিম চাষ হয় নরসিংদীতে। এ বছর জেলায় দুই হাজার ৬৪১ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। রায়পুরা, শিবপুর, বেলাব ও পলাশ এই চার উপজেলায় সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয় শিম। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় উপজেলাগুলোতে আগাম শিম চাষ করা হয়েছে। প্রতি বছরই উৎপাদিত শিম জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিবছর এই জেলার চাষিরা আশ্বিন মাসের মধ্যেই প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার আগাম শিম বিক্রি করত। কিন্তু চলতি বছর একদিকে অনাবৃষ্টি, অন্যদিকে গরম আবহাওয়া থাকায় শিমের ফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই তাতে পচন দেখা দেয়। যার কারণে এখন পর্যন্ত কোনো চাষিই বাজারে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকার বেশি শিম বিক্রি করতে পারেনি।

রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ গ্রামের বন্দে আলী মিয়া জানান, এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। স্প্রে করেও এবার ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এখন পর্যন্ত শিম বিক্রি সম্ভব হয়নি।

একই উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ন অভিযোগ করেন, চাষিদের বিভিন্ন সহযোগিতা বা পরামর্শ দেয়ার সরকারের সার্বক্ষণিক নির্দেশ থাকলেও কৃষি বিভাগ সবজি বা শিম চাষিদের তেমন সহযোগিতা করে না। এ কারণে অধিকাংশ সবজি চাষিদের লোকসান গুণতে হয়। পচন রোগে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা কৃষি বিভাগের হাতে নেই বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক লতাফত হোসেন বলেন, ‘আমরা শিম চাষিদের ভাল বীজ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েও বারবার ব্যর্থ হচ্ছি। কৃষকরা তাদের ঘরে থাকা ফাংগাসযুক্ত বীজ ব্যবহারের ফলে এই পচন রোগ দেখা দেয়।

তিনি চাষিদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে সার্বক্ষণিক শিম বা সবজি চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ কারণে আগাম শিম চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে শিমের দামও ভাল পাচ্ছেন চাষিরা।

(ঢাকাটাইমস/১৮ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)