বিজিবির সহায়তায় চোরাচালানিরা এখন মাছচাষি

প্রকাশ | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৩:১৯ | আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৪:০৮

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঢাকাটাইমস

সংসারের অভাব অনটন মেটাতে ভারতীয় গরু, ফেনসিডিল আনার জন্য জীবনবাজি রেখে সীমান্ত পাড়ি দিতেন। অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে তাদের অনেক সঙ্গী বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। আবার কেউ কেউ গুলিবিদ্ধ হয়ে সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করে পরিবারে বোঝা হয়েছেন। কিন্তু বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর বিকল্প কর্মসংস্থানের আওতায় এখন অনেক চোরাকারবারি পুরোদস্তুর মাছচাষি বনে গেছেন। ইতোমধ্যে মাছ বিক্রি করে লাভের টাকাও ঘরে তুলেছেন।  

অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে হতাহত না হয়ে বৈধভাবে জীবিকা নির্বাহের জন্য এ ‘বিকল্প কর্মসংস্থান’ প্রকল্পে সহায়তা করছে ৩০-ব্যাটালিয়ন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

ঠাকুরগাঁও জেলায় ১২৫ কিলোমিটার সীমান্ত জুড়ে রয়েছে নাগরনদী। জেলার বালিয়াডাঙ্গা, রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের একটি বিরাট অংশ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় তারা অতি সহজে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

এ অবস্থায় ঠাকুরগাঁও-৩০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের চোরাচালান হতে বের হয়ে আসতে বিকল্প আয়ের পথ দেখায়।

এর অংশ হিসেবে হরিপুর উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের ধুকুরিয়া গ্রামের কয়েকজন চোরাকারবারিকে নিয়ে সীমান্তবর্তী নাগরনদীতে “আলোকিত স্বনির্ভর সীমান্ত” নামে ভাসমান খাঁচায় মাছচাষ প্রকল্প হাতে নেয়। উপজেলা মৎস্য অফিসের আওতায় মৎস্যচাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের অর্থায়নে এবং জেলা মৎস্য অফিসের সহযোগিতায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে ৪টি খাঁচায় মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের চাষ করা হয়েছে। চলতি বছরের ১৮ আগস্ট প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করা হয়। ইতিমধ্যে মাছ বিক্রি করে তারা টাকা ঘরে তুলেছেন।

ধুকুরিয়া, রুহিয়া, সিংহারি গ্রামের বাসিন্দা সৈয়ব আলী, জয়নুল হক, হাফিজুল ও  আব্দুল কাদের জানান, কর্মসংস্থানের অভাবে একসময় আমরা চোরাকারবারির কাজে জড়িয়ে পড়ি। এখন বিজিবির সহায়তায় নাগর নদীতে মাছচাষ করছি। ইতোমধ্যে ১৯ কেজি মাছ বিক্রি করেছি। এখন সৎপথে থেকে সন্তানদের নিয়ে ভালভাবে বেঁচে থাকতে চাই।

ঠাকুরগাঁও-৩০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল তূষার বিন ইউনূস ঢাকাটাইমসকে জানান, বেতনা বিওপির সীমান্তবর্তী ধুকুরিয়া গ্রাম একটি অতিদরিদ্র এলাকা। এ সীমান্তে চোরাচালান খুব বেশি ছিল। বেতনা সীমান্তে অপরাধ রোধ করার জন্য খাঁচায় মাছচাষ প্রকল্প শুরু করা হয়। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় জীবন বাজি রেখে চোরাচালানের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা।

তিনি  আশাবাদ  ব্যক্ত করে বলেন, এ পাইলট প্রকল্পে সফলতা এলে জেলার সমস্ত নাগরনদীতে দরিদ্র লোকজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এতে সীমান্ত বাসিন্দারা অবৈধ পেশা থেকে সরে এসে বৈধ পেশায় নিয়োজিত হবে।  সেই সঙ্গে সীমান্ত অপরাধ একসময় বন্ধ হয়ে যাবে।

(ঢাকাটাইমস/১৯ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/ইএস)