বইঃ আমার কথা

প্রেরণা ও উৎসাহঃ কর্মক্ষমতা বাড়ায়

অনলাইন ডেস্ক
| আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:২১ | প্রকাশিত : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৪:২৮

সৈয়দ আবুল হোসেন বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আমার কথা। এই বইয়ে তিনি নিজের চিন্তা, কর্মকাণ্ড, মূল্যবোধ, নানা অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখেছেন। এটি পড়লে তাকে যারা পুরোপুরি চিনেন না তাদের সুবিধা হবে। বইটি ঢাকাটাইমস২৪ডটকম ধারাবাহিকভাবে ছাপছে। বইটির আজকের পর্বে থাকছে- ‘প্রেরণা ও উৎসাহ : কর্মক্ষমতা বাড়ায়’

একটা কথা সব সময় সবার মনে রাখা দরকার। তা হলো, কেউ ভালো কাজ করলে তাকে উৎসাহিত করা। ভালোকে উৎসাহিত করলে অন্যরাও উৎসাহ পাবে। তারাও ভালো হতে চাইবে। আমাদের উচিত মানুষকে সবসময় ভালো হতে উৎসাহিত করা। প্রেরণা ও উৎসাহ কর্মস্পৃহার উৎসমূল। এর মাধ্যমে কর্মীকে তার পূর্ণশক্তিকে বিকশিত করা সম্ভব।

আমরা দেখি, সমাজ বা রাষ্ট্র ভাল কাজকে উৎসাহিত করতে পদক বা সম্মাননা প্রদান করনে। এটা ভাল উদ্যোগ। পদক বা সম্মাননা একজন মানুষের ভাল কাজের স্বীকৃতি। এ স্বীকৃতি ব্যক্তিকে বা প্রতিষ্ঠানকে আরো ভাল কাজ করতে সহায়তা করে। অন্যকে ভাল কাজে উদ্বুদ্ধ করে। তাই আমি মনে করি, একজন মানুষকে যদি সমর্থন জানাতে হয়, স্বীকৃতি দিতে হয়- তাহলে তাঁর জীবদ্দশায় তা দেয়া উচিত। তার মৃত্যুর পর এ জাতীয় স্বীকৃতির তেমন গুরুত্ব থাকেনা। তবে দেরীতে হলেও কাজের ‘মরনোত্তর’ স্বীকৃতি অন্য মানুষকে ভাল কাজে অনুপ্রাণিত করে।

কোনো ব্যক্তি থেকে সর্বোচ্চ ভালো কাজটি আদায়ের জন্য ব্যক্তির ক্ষমতায়ন হচ্ছে অনুপ্রেরণার প্রথম ও প্রধান উৎস। অনুপ্রেরণা ছাড়া একজন কর্মচারীর অন্তর্নিহিত সক্ষমতা পূর্ণতা পায় না। ক্ষমতা দেওয়া হলে একজন কর্মচারী বিশ্বাস ও মর্যাদার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। মাঝে মাঝে আমি আমার ই-মেইলে অনেক কর্মচারীর কাছ থেকে অভিযোগ পাই, তাদের তেমন কর্তৃত্ব দেওয়া হয়নি অথচ প্রকৃত ক্ষমতা ছাড়াই কর্তৃত্বপ্রাপ্তদের তুলনায় ভালো কাজ করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। সুতরাং তাঁদের কোনো প্রকার প্রকৃত অর্জন বা সফলতা নেই, এ অভিযোগ তাঁরা করতেই পারেন। অতএব, আমি আমার সহকর্মী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা কর্মচারীদের প্রকৃত ক্ষমতা দিতে ভয় পাবেন না। কেননা, তাদের নিরন্তর পরিশ্রমের ওপরই নির্ভর করে আমাদের মান-সম্মান ও মর্যাদা।

বাংলাদেশের মানুষের শক্তি ও ক্ষমতার ওপর আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে। আমাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে অসাধারণ দক্ষতা, অনুধাবন-ক্ষমতা ও পরিচালনার যোগ্যতা। একজন দক্ষ পরিচালক হচ্ছে সে, যে তার দলের প্রকৃত শক্তি ও ক্ষমতা বের করার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারে এবং করে। একজন দক্ষ পরিচালক বহু যোগ্য পরিচালক তৈরি করে এবং একজন ব্যক্তির কারণে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমিয়ে ফেলে না। পরিশেষে, যোগ্য ব্যক্তির হাতে তুলে দিন পরিচালনার দায়িত্বভার। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়- ভিন্ন কিছু। প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের পরিচালকদের প্রতি লক্ষ্য করলে উল্লেখযোগ্য কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাবে না। কেননা তাদের কাউকে পর্যাপ্ত কর্তৃত্ব দেওয়া হয়নি এবং পরিচালনা করার জন্য তাদের যোগ্য করে গড়েও তোলা হয়নি। এমনটি উচিত নয়। এটি হচ্ছে অদূরদর্শী কাজ এবং তা হচ্ছে নিজের জীবনাবসানের পর আর কিছু না থাকার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করে যাওয়া। আমি বিশ্বাস করি, একজন মহান ব্যক্তির মাধ্যমে তৈরি হয় আরও মহান ব্যক্তি এবং তিনি নিজের কাছে সবকিছু আবদ্ধ করে রাখেন না। মহান ব্যক্তিরা নিজে যা শেখেন এর বেশিরভাগটাই তাঁরা অন্যের জন্য বিলিয়ে দেন। কারণ তিনি মনে করেন- এতে তাঁর কাজ টিকে থাকে।

অনুপ্রেরণা ও উদ্দীপনার দ্বিতীয় উৎস হচ্ছে, প্রতিশ্রুতিশীল এবং সৃজনশীল কর্মচারীদের পুরস্কৃত করা। তাদের পুরো প্রতিষ্ঠানের আদর্শ হিসাবে গণ্য করা উচিত। আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের মূলে রয়েছে মানবিক প্রতিযোগিতা। এমনকি আমাদের ধর্মও বলে, ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করতে। আপনি কখনও প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে পারবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত সৃজনশীলতার প্রশংসা ও পুরস্কৃত করতে না পারবেন। কর্মচারীদের প্রশংসার অর্থ শুধু নিজের কৃতিত্ব নয়, তাদেরও সফলতার কৃতিত্ব রয়েছে। এর মানে, অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের সম্মান এবং আপনাদের আস্থা ও বিশ্বাসই হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের সফলতা। আর এ সফলতার পেছনে প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মচারীর অবদান রয়েছে। যদি কর্মচারীরা দেখে, তাদের নেতা কাজের পুরো কৃতিত্ব নিজে না নিয়ে কর্মীদেরও কৃতিত্ব দিচ্ছেন, তাহলে তারা তাদের নেতাকে সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা দেবে। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে আরও দীপ্ত হবেÑ দৃপ্ত শপথে। তখন তারা তাকে শুধু তাদের বস্ বা চাকরিদাতা ভাববে না, বরং তাদের নায়ক বা আদর্শও মনে করবে।

অনুপ্রেরণার তৃতীয় উৎস, যা বইয়ের শুরুতেই বলা হয়েছে। সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে, সমাজে সুখ, শান্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর কর্মচারীরা এ সমাজেরই অংশ। সুতরাং সবচেয়ে বড় প্রয়োজন তাদের জীবনে সুখ, শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কেননা তারা অন্যদের জীবনে সুখ, শান্তি ও নিরাপত্তা আনতে নিরন্তর কাজ করে যায়।

“একজন পরিচালক কত বিচক্ষণ ও কত সফল তা তার মন দিয়ে পরিমাপ করা যায়। ক্ষুদ্র পুকুরে যেমন বড় মাছ বাঁচতে পারে না, তেমনি ছোট মনের অধিকারী লোক হতে পারে না মহান কেউ।”

একজন সুখী কর্মচারী হয় আরও উৎপাদনশীল, আরও শক্তিশালী এবং আরও সৃজনশীল। তাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের উচিত আনন্দময় পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্ব দেওয়া, যাতে কর্মচারীরা সুখে ও শান্তিতে থাকতে পারেন। আমাদের অবশ্যই উচিত তাদের আনন্দ, দুঃখ এবং কষ্ট ভাগ করে নেওয়া, তাদের জীবনকে ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলা এবং তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা এবং প্রেরণা ও উৎসাহ দেওয়া। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, তারা কী বলে, তা মনোযোগ সহকারে শোনা।

একজন সফল পরিচালক তাঁর অধস্তনদের কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন, সম্মান করেন এবং মূল্যায়ন করেন। বস্তুত এটাই একজন পরিচালকের মহৎ ও বিচক্ষণ হয়ে ওঠার অন্যতম শর্ত। আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে : One’s attitude determines one’s altitude. একজন পরিচালক কত বিচক্ষণ ও কত সফল তা তার মন দিয়ে পরিমাপ করা যায়। ক্ষুদ্র পুকুরে যেমন বড় মাছ বাঁচতে পারে না, তেমনি ছোট মনের অধিকারী লোক হতে পারে না মহান কেউ।

আমি আশা করি, কর্মকর্তৃবৃন্দ এভাবেই কাজ করে যাবেন এবং এভাবে তাঁদের অধীনস্থদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেবেন। সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য আনয়নে একজন মানুষের জীবনে তার কর্ম বা চাকরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানুষ কর্মস্থলে আসার সময় তাঁর মনটা বাসায় কিন্তু রেখে আসেন না, তাই তাঁর সঙ্গে এমন ব্যবহার করা উচিত যেন তিনি বাসায় আছেন, পরিবারের সঙ্গে অনিন্দ্য হাসিখেলায়। জীবন খুবই মূল্যবান, তাই একে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। অবশ্যই কর্মচারীদের সুখ নিশ্চিত করতে হবে, কেননা তাঁরা অন্যদের সুখ নিশ্চিত করতে নিরন্তর কাজ করে যান। তাঁদের এখন অনেক সুবিধাই দেওয়া যাচ্ছে না। এই কারণেই তাঁদের কারও কারও মনে কষ্টও আছে। কিন্তু সেটাও দূর করা প্রয়োজন।

বিলি পোর্টারের বিখ্যাত বাণী দিয়ে শেষ করছি অধ্যায়টি :

For me,

Life is about being positive and hopeful,

Choosing to be joyful,

Choosing to be encouraging,

Choosing to be empowering.101

আগামীকাল কাল থাকছে - জাতিগত ঐক্য : অপরিমেয় শক্তির আধার আরও পড়ুন -‘​​কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছে প্রত্যাশা’ বৈশ্বিক সহায়তা, বাংলাদেশের সফলতা, ​প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের গুরুত্ব,সরকারি কাজের পর্যবেক্ষণ, ব্যবসায়ীদের বিশ্বসমাবেশ, ‘‘অসম্ভব’: একটি ভৌতিক শব্দ’ 'বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া', ‘ক্যারিয়ার গঠনে প্রতিযোগিতা’ ঝুঁকি বনাম সাফল্য, ভিশন-২০২১, ‘সৃজনশীলতা’ ‘বিনিয়োগ’, ‘বাংলার বসন্ত’, ‘সময়, শ্রম ও অধ্যবসায়’ ‘আমার আদর্শ আমার নায়ক’ , ‘ধৈর্য পরীক্ষা’, ‘খেলাধুলা ও বাংলাদেশ’ ‘অধ্যয়ন, লেখালেখি ও নেতৃত্ব’ ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশ’, ‘সাফল্যের স্বর্ণদ্বার’ , ‘ঐক্যবদ্ধ শক্তি সাফল্যের মেরুদণ্ড’ ‘পদ্মা সেতু’, `বিজয়চিহ্ন 'V' প্রকাশে ভিন্নতা', ‘উন্নয়ন ও অগ্রাধিকার’ , ​‘ইতিবাচক ভাবনা সাফল্যের চাবিকাঠি’ , ‘ভবিষ্যতের সরকার কেমন হবে’ ‘মাতৃভাষার প্রতি মমতা’, ‘সুখ ও শান্তি : আমাদের করণীয়’ , ‘নেতৃত্বের শক্তি’, ‘আদর্শ জীবন গঠনে মূল্যবোধ’, ‘আমার প্রাত্যহিক জীবন’​, 'আমার অনুভব'

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :