পাঠ্যপুস্তক তামাশা নিয়ে একটি সংক্ষেপিত পর্যালোচনা

প্রকাশ | ০৪ জানুয়ারি ২০১৭, ০৯:৫০

আরিফ রহমান

পরপর কিছু ঘটনা পর্যালোচনা করি আসুন-

১)নতুন পাঠ্যপুস্তকে ও তে ওড়না এসেছে।

২)নতুন পাঠ্যপুস্তকে জনপ্রিয় কবিতায় শব্দ আগেপিছে হয়েছে।

৩)নতুন পাঠ্যপুস্তকের পেছনে ভুল বানানের ইংরেজি উপদেশ।

৪)নতুন পাঠ্যপুস্তকে প্রধানমন্ত্রীর ছবি লজ্জাজনক ভাবে হাইলাইট করার চেষ্টা।

২)চরমোনাই পীর পাঠ্যপুস্তক দেখে গদগদ বিবৃতি দিয়েছে। সরকার পাঠ্যপুস্তকে পীর সাহেবের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সংশোধন এনেছে।

প্রথমত,

পাঠ্যপুস্তকে এমন সব হাস্যকর ভুলের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে যারা পুস্তক প্রণয়ন করেন তারা সতর্ক ভাবে প্রুফ দেখেন না। অর্থাৎ তারা উপযুক্ত নন। না হলে কুসুমকুমারী দাসের ‘আদর্শ ছেলে’র মত কবিতা কেমন করে ভুল হয়? একটা সামান্য ‘HURT’ শব্দের ইংরেজি বানান কেমন করে ভুল হয়?

তার মানে পরিস্কার যারা এই কাজটা করছেন তারা যোগ্য নন।

দ্বিতীয়ত.

প্রতিটা বইয়ের পেছনে প্রধানমন্ত্রীর ছবি আর প্রধানমন্ত্রীর স্তুতিমূলক উক্তির উপস্থিতি এই ইঙ্গিত করছে যে  যারা এই পুস্তক গুলো প্রণয়ন করেছেন তারা সরকারি দলের কাছ থেকে কোনভাবে সুবিধাভোগী অথবা সুবিধা লাভের আশা করছে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে এই সন্দেহ করতে হয় যে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে যারা জড়িত তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও হয়তো প্রশ্ন তোলার সুযোগ আছে, যদি সেই প্রশ্ন তোলাটাও মনে হয় বাড়াবাড়ি তাহলে এটুকু নিশ্চয়ই খোঁজ করা উচিত যে প্রধানমন্ত্রীর ছবি আর ছবির নিচে ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ টাইপ স্তুতিমূলক বাক্য সংযুক্ত করার আইডিয়াটা কার সেটাও খোঁজ করা উচিত।

তৃতীয়ত,

এক শ্রেণীর উগ্রবাদী পাঠ্যপুস্তক থেকে মুসলমান ব্যাতিত অন্য সকল ধর্মের মানুষের লেখা বাদ দেয়ার জন্য নোংরা অপপ্রচার চালাতে থাকে অনলাইনে। এই উগ্রবাদিরাই যে নারায়ণগঞ্জ কিংবা নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উস্কে দিয়েছিল সেটা বলে দিতে হয় না।

পাঠ্যপুস্তক থেকে এসমস্ত জিনিস বাদ দেয়ার দাবি অনলাইনে যেসব উগ্রবাদীরা তুলেছিল তাদের দাবিটিকে মাঠের আন্দোলনে রূপ দেন চরমোনাই পীর সাহেব। সেই পীরের বিবৃতি থেকে জানা যায় নতুন পাঠ্য-পুস্তকে তাদের দাবি নাকি মেনে নেয়া হয়েছে। যেটা প্রমাণ করে যে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের সাথে জড়িতরা হয় উগ্রবাদের ভয়ে ভীত নতুবা উগ্রবাদ সমর্থন করে।

চতুর্থত,

যেহেতু ও-তে ওড়না শব্দটির প্রয়োগের দাবি কোন উগ্রবাদী সংগঠন তোলেনি সুতরাং এটা তো পরিস্কার যে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নকারীদের ভেতরেই এই ভুতের বসবাস। তা না হলে শিশু পর্যায়ে বাচ্চাদের মাথায় এমন উগ্রবাদী চিন্তা ঢুকিয়ে দেয়ার কথা তারা কেমন করে ভাবতে পারে।

পুরো আলোচনা থেকে বোঝা গেলো পাঠ্যপুস্তক বোর্ড যথাক্রমে অদক্ষ, অযোগ্য, অশিক্ষিত, সরকারের দালালি করে এবং উগ্রবাদী আচরণের উস্কানি দেয়। পাঠ্যপুস্তক বোর্ড যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠান সুতরাং এই দায় সরকারের কাঁধেই বর্তায় অথচ জানি সরকারের নীতি এখন জঙ্গিবাদ এবং উগ্রবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স।

জঙ্গিবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখিয়ে আবার জঙ্গি সমর্থকদের দাবি পূরণ করে সরকার পরিস্কার ভুল পথে হাঁটছে। সরকারের একটা ভুল সিদ্ধান্ত পাঁচ বছরে হয়তো একবার ঠিক হলেও হতে পারে কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে একটা ভুল পাঠ একটা প্রজন্মের চিন্তা করার ক্ষমতাকে সঙ্কুচিত করে সংকীর্ণমনা করে গড়ে তুলতে পারে।

লেখক: অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট