অশিক্ষিতের হাতে দেশ পড়লে কী হয় টের পেয়েছি

প্রকাশ | ২৪ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:৩৮ | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৭, ২২:২৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অশিক্ষিতের হাতে দেশ পড়লে দেশের কী হয় তা পঁচাত্তরের পর হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মিরজাফর মোস্তাক  ক্ষমতায় গিয়ে তিন মাসও টিকতে পারেনি। তার পেছন থেকে এসে ক্ষমতা নিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি ছিলেন মেট্রিক পাস।  স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করেছেন তিনি। তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ছিলেন মেট্রিক ফেল। তার সময়ে শিক্ষার হার কমেছিল, সাক্ষরতার হার কমেছিল।

মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পুনর্মিলনীতে এ কথা বলেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করা ছাত্রলীগের মতো আদর্শিক সংগঠন থাকলে কেউ বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে পারবে না বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু আন্দোলন-সংগ্রামে প্রথম নির্দেশ দিতেন ছাত্রলীগকে। বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে আর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রলীগ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা চেয়েছেন একটি স্বাধীন দেশে সব মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক সে সময় যুদ্ধাপরাধীরা, যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি, তারা তাদের পরাজয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে।’

বঙ্গবন্ধু একটি আদর্শের ওপর ভিত্তি করে ছাত্রলীগকে গড়ে তুলেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাই ছাত্রলীগের ওপর অনেক আঘাত এলেও তারা সংগঠিত রয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর স্বাধীনতাবিরোধীরা স্বাধীনতা বিকৃত করতে চেয়েছিল, কিন্তু সেটা তারা পারেনি। তারা ভেবেছিল আওয়ামী লীগ কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি পড়ার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেখান থেকে তাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগকে বলব জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়তে। ধনসম্পদ চিরদিন থাকে না। কিন্তু একটা আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করলে দেশকে, জাতিকে কিছু দিতে পারলে সেই সম্পদটাই থাকে।’

আর শিক্ষা ছাত্রদের জন্য সবচেয়ে বড় সম্পদ বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষাই পারে একটি দেশকে একটি জাতিকে দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে।’

ছাত্রলীগের নীতির কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যদিও আওয়ামী লীগ করি, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, কিন্তু ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম, তাই ভুলতে পারি না। রাজনীতির হাতে খড়ি তো ছাত্রলীগ থেকেই। সেখানে আমরা সব সময় শিখেছি- শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি ছাত্রলীগের মূল নীতি। কাজেই ছাত্রলীগের প্রতিটা নেতাকর্মীর মনে রাখতে হবে রাজনীতি আমরা করব, কিন্তু শিক্ষা গ্রহণ করাই হলো ছাত্রলীগের সবচেয়ে বড় কাজ।’

অশিক্ষিত ব্যক্তিদের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কারো বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাই না, কিন্তু অশিক্ষিতদের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পড়লে দেশের কী দুরবস্থা হয়, আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি ১৯৭৫ সালের পর থেকে। ১৯৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যা করে খুনি মোসতাক দালালি করে মন্ত্রী হয়েছিল, কিন্তু টিকতে পারেনি তিন মাসও। তার পেছনে ছিল জিয়াউর রহমান, সে সামনে এসে গেয়েছিল। সংবিধান লঙ্ঘন করে সেনা আইন লঙ্ঘন করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতায় এসেছিল। সে তো শুধু মেট্রিক পাস ছিল। ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতার সমস্ত চেতনা নস্যাৎ করে। যার ফল দাঁড়ায় কষ্ট পায় বংলাদেশের মানুষ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরপর এল খালেদা জিয়া। একের পর এক যারা এসেছে তারা তো দেশকে পেছনে ঠেলেছে। দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছে।’

জঙ্গিবাদে যে শিক্ষার্থীরা জড়াবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলাম আমাদের শান্তির ধর্ম, এখানে জঙ্গিবাদের স্থান নেই। ইসলাম মানুষ খুন করার কথা বলেনি। আত্মঘাতী হলে দোজখে যেতে হয়, কেউ বেহেশতে যেতে পারে না।’

 শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুব অবাক লাগে, যখন দেখি ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলেমেয়েও এই জঙ্গিবাদের পথে চলে যাচ্ছে। একটা ভালো অর্থশালী পরিবারের সন্তান হয়ে, উচ্চশিক্ষা নিয়ে কীভাবে জঙ্গিবাদের পথে যেতে পারে? কিসের আশায়? জঙ্গিবাদের পথে তারা বেহেশতে যাবে? এ পর্যন্ত যারা গেছে, তারা কি বেহেশতে গিয়ে খবর পাঠিয়েছে যে তারা বেহেশতে গেছে। সেই খবর তো তারা দিতে পারেনি। তাহলে তারা এই পথে কেন যাবে?’ বাংলাদেশের কোনো সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদের স্থান হবে না বলে হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রী।

সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে পারলে সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব না কেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জনের সঙ্গে ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে। আমরা যদি বাংলাদেশের আন্দোলন-সংগ্রামের দিকে তাকাই, প্রতিটিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রলীগ। প্রতিটি আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু প্রথম নির্দেশ দিতেন ছাত্রলীগকে। বঙ্গবন্ধু যে নির্দেশ দিতেন ছাত্রলীগ তা বাস্তবায়ন করত।’

প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের নতুন-পুরনো সব নেতাকর্মীকে অভিনন্দন জানান।

ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরো বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেইন প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/২৪জানুয়ারি/জেআর/মোআ)