এমপি লিটন খুন নিয়ে স্বজনদের সাত প্রশ্ন

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:০৭ | আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:০১

গাইবান্ধা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

সুন্দরগঞ্জের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার ২৬ দিন পরও তদন্তে উল্লে¬খযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। লিটনের স্বজনরা বলছেন, এটি  ভাড়াটিয়া খুনির মাধ্যমে সংঘটিত পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।  এই অভিযোগের পেছনে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় সাতটি প্রশ্ন তুলেছেন তারা। 

প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বুধবার গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রশ্ন তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন এমপি লিটনের বড় বোন আফরুজা বারী, হত্যা মামলার বাদী ছোট বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী, চাচাতো ভাই তৌফিকুর রহমান আইনী মুকুট, ফুফাতো ভাই আনিসুর রহমান, ভাগ্নি মেহের নিগার মমি, চাচাতো বোন শিবলী আকতার।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন আফরুজা বারী। তাতে তিনি অভিযোগ করেন, লিটন হত্যা ভাড়াটিয়া খুনি দ্বারা সংঘটিত পরিকল্পিত একটি হত্যাকা-। এর পেছনে রয়েছে মদদদাতা, পৃষ্ঠপোষক, পরিকল্পনাকারী, অর্থের জোগানদাতা এবং সর্বশেষ হত্যাকারীরা। এরা হতে পারে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, দল বা কোনো আদর্শিক অপশক্তি।’

আফরোজা বারী বলেন, নির্মম এ হত্যাকা-ের আগে ও পরে কিছু প্রশ্নের সৃষ্টি  হয়েছে।  গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এমপি লিটন প্রায় এক ঘণ্টা সচেতন ও সজ্ঞানে বেঁচে ছিলেন। সে সময় কেন খুনিদের পরিচয় নেয়া হলো না।

গত ৩১ ডিসেম্বর এমপি লিটন সুন্দরগঞ্জে তার নিজ বাসায় হামলার শিকার হন। খুনিরা ঘরে ঢুকে লিটনের গায়ে পাঁচটি গুলি করে সটকে পড়ে। সাধারণত সব সময় লিটনের বাড়িতে নোকর্মীর ভিড় থাকে। তার প্রিয় দুটি কুকুরও সব সময় আশপাশে থাকে। কিন্তু সেদিন এর কিছুই ছিল না।

সংবাদ সম্মেলনে লিটনের বড় বোন প্রশ্ন তোলেন, ‘তার (লিটন) বাড়িটিই খুনিদের কাছে নিরাপদ বিবেচিত হলো কেন? কীভাবে খুনিরা পরিচয় না দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ার সুযোগ পেল? লিটনের অতন্দ্র প্রহরী জার্মান শেফার্ড কুকুর দুটো ওই সময় কোথায় ছিল? কেন গিয়েছিল? দুর্বৃত্তরা রিভলবারের ৫টি গুলি করার পরও কেন তার নিকটজনরা লিটনের কাছে এল না? লিটন গুলিবিদ্ধ হবার পর কাউকে কাছে না পেয়ে তাকে দৌড়ে বাড়ির ভেতরে আঙিনার দিকে ছুটে যেতে হলো কেন?’

আফরুজা বারীর প্রশ্ন, কেন লিটনের ঘনিষ্ঠজন, দলীয় নিবেদিত নেতাকর্মী এবং পরীক্ষিত সহযোদ্ধারা কেউই তার পাশে ছিল না? তাদের কি দূরে সরে দেয়া হয়েছিল?’

লিটন হত্যা মামলার এজাহার ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে রয়েছে, তার স্ত্রী ও স্ত্রীর ভাই ঘটনার সময় দোতলায় ছিলেন। গুলির শব্দ শুনে তারা নিচে নেমে আসেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা লিটনের স্ত্রীর দিকে গুলি ছোড়ে। তবে সংবাদ সম্মেলনে লিটনের স্ত্রীকে দেখা যায়নি।    

লিটন আওয়ামী লীগের একজন অকুতোভয় কর্মী ছিলেন উল্লেখ করে আফরুজা বারী বলেন, সুন্দরগঞ্জ এলাকায় তিনি সততা, নিষ্ঠা, উন্নয়ন, শান্তি ও প্রগতির ঝা-া উড়িয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই সময় লিটন তার সঙ্গে সহযোদ্ধা হিসেবে সুন্দরগঞ্জের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু দুর্বৃত্তরা এমপি লিটনকে হত্যার মাধ্যমে এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের পথকে রুদ্ধ করে দিতে চেয়েছে।

এই হত্যাকা-ে সন্দেহভাজন হিসেবে সুন্দরগঞ্জের আওয়ামী লীগ, জামায়াতের বেশ কজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু লিটন হত্যার কোনো কিনারা হয়নি এখনো। মূল খুনিরা রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
এ অবস্থায় তারা হতাশ নাকি আশাবাদী, এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে লিটনের বোন বলেন, ‘আমরা এখনো হতাশ নই। প্রধানমন্ত্রী হত্যাকা-ের বিষয়টি দেখছেন। যারা তদন্ত করছে বা অন্য কাউকে দিয়ে তদন্ত করাতে হবে কি না, তিনিই সেটি ঠিক করবেন। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। আমরা আশায় বুক বেঁধে আছি- শিগগির প্রকৃত খুনিদের মুখোশ উন্মোচিত হবে।’

লিটনের শূন্য আসনে উপনির্বাচনের ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মামলার বাদী ছোট বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী বলেন, ‘এই মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমরা আমাদের ভাইয়ের হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, তা দেখতে চাই।’

(ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/মোআ)