ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেন সেই চেয়ারম্যান

প্রকাশ | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২৩:৩৬

শওকত আলী, চাঁদপুর প্রতিনিধি

চাঁদপুরে শিক্ষার্থীদের বানানো ‘মানব সেতুতে’ হাঁটার ঘটনায় ‘ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন’ হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারী।

গত সোমবার হাইমচরের নীলকমল স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ছাত্রের পিঠের ওপর নূর হোসেনের হাঁটার ছবি ও ভিডিও নিয়ে ফেইসবুকে সমালোচনার ঝড় বইছে।

এই ঘটনা তদন্ত করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশ দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সারোয়ার জাহান এর তদন্ত করছেন।

বৃহস্পতিবার নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ২৪ জন এবং শুক্রবার সার্কিট হাউজে আরও ২৮ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।

সারোয়ার জাহান বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেনকে সাক্ষ্য দিতে ডাকা হলেও তিনি নিজে না এসে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভাইস চেয়ারম্যানের মাধ্যমে লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন।

তিনি বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভাইস চেয়ারম্যান একটা প্যাকেটে করে এনে আমাকে দিয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যে নূর হোসেন বলেছেন, ‘উনি বলেছেন, আমি যেটা করেছি আমি ভুল করেছি, ওরা (ছাত্ররা) আমাকে জোর করায় আমি ওদের গায়ের উপর উঠেছি। সেটা আমার ভুল হয়েছে, এজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’

কী লেখা আছে নূর হোসেনের চিঠিতে

‘গত ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ হাইমচর উপজেলাস্থ ঐতিহ্যবাহী নীলকমল ওচমানিয়া হাইস্কুলের বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠানে শরীরচর্চা প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে বিদ্যালয়ের ছাত্ররা মানবসেতু তৈরি করে। সেখানে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে আমাকে সেই মানবসেতু হেঁটে পার হতে স্কুল কর্তৃপক্ষ, আয়োজক ও ছাত্রদের পক্ষ থেকে উপর্যুপরি অনুরোধ জানানো হয়। গত অনেক বছর ধরে এই স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এ রীতি প্রচলিত রয়েছে। অতীতে ছাত্রদের তৈরি এ রকম মানব সেতু হেঁটে পার হয়েছেন স্থানীয় একজন সংসদ সদস্য, একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আরো অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও বিদ্যালয়টির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতার প্রচলিত রীতি অনুযায়ী প্রধান অতিথি হিসেবে আমাকে এই ছাত্রদের তৈরি মানব সেতু হেঁটে পার হতে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং ছাত্ররা বিশেষভাবে অনুরোধ করে। প্রথমে আমার আপত্তি থাকলেও তাদের বারংবার অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমি এ মানব সেতু হেঁটে পার হই। পরবর্তীতে এ বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। আমি বিষয়টির আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। এ পুরো বিষয়টি নিয়ে আমি অত্যন্ত লজ্জিত, দুঃখিত এবং সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।

আমি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নসহ এলাকার সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছি। এই স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠানে ছাত্রদের শরীরচর্চা প্রদর্শনীর একটি বিশেষ অংশ হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান অতিথিদের ছাত্রদের নির্মিত মানব সেতুর উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া একটি রীতিতে পরিণত হয়েছে। তবুও এ বিষয়টি যে বৃহত্তর পরিসরে অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে তা তাৎক্ষণিক আমি অনুধাবন করতে পারিনি। স্কুল কর্তৃপক্ষ, অনুষ্ঠানের আয়োজকবৃন্দ এবং অংশগ্রহণকারী ছাত্রদের উপর্যুপরি অনুরোধে আমি যে মানব সেতুর উপর দিয়ে হেঁটে গেছি, জনমনে সে বিষয়টির অগ্রহণযোগ্যতা অনুধাবন করতে না পারার ভুল আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে স্বীকার করছি এবং আবারো সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আশা করি আমার এই অনিচ্ছাকৃত ভুলটিকে সকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’

(ঢাকাটাইমস/৩ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএ)