মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম তুলতে এসে দুই রাজাকার ধরা

প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:৩৬ | আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:৫৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
কুড়িগ্রামের উলিপুরে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে ধরা পড়া রাজাকার খন্দকার ইউসুফ

নিজেদেরকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম তুলতে চেয়েছিলেন কুড়িগ্রামের উলিপুরের দুই জন। কিন্তু বিধি বাম, মুক্তিযোদ্ধাদের কড়া জিজ্ঞাসাদের এক পর্যায়ে ধরা পড়ে যায় তাদের প্রতারণা। প্রকাশ হয় তারা মুক্তিযোদ্ধা নন, ছিলেন পাকিস্তানের দোসর রাজাকার বাহিনীর সদস্য।

বরিবার কুড়িগ্রামের উলিপুরে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের সময় এরা ধরা পড়েন। এই ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

এই দুইজন হলেন খন্দকার ইউসুফ ও আব্দুস সামাদ। তাদের দুইজনেরই বাড়ি বিজয়রাম তবকপুর গ্রামে। ধরা পড়ে যাওয়ার পর তাদেরকে পুলিশে দিতে দাবি উঠে। তবে সুযোগ বুঝে দুইজন গোপনে ঘটনাস্থল ছেড়ে যান। 

মু্ক্তিযোদ্ধার তালিকায় বিপুল পরিমাণ অমুক্তিযোদ্ধা ঢুকে পড়েছেন-এমন অভিযোগ উঠার পর গত ১৭ জানুয়ারি থেকে তালিকা যাচাই-বাছাই শুরু হয়েছে। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের উপজেলা, জেলা, মহানগর পর্যায়ে বাছাইয়ের কাজ চলবে।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করতে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সারা দেশে মোট ৪৭০টি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। নতুন তালিকাভুক্তির আবেদন করেছেন, এমন ব্যক্তিদের পাশাপাশি তালিকায় নাম আছে এমন ব্যক্তিদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

উলিপুরে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই চলছে।

কুড়িগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার ও যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘আজ দুপুরের উলিপুর উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাচাই বাছাই কমিটির সামনে প্রথমে আসেন আব্দুস সামাদ। তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে কিছু কাগজপত্র দাখিল করে দাবি করেন তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন।  এরপর জিজ্ঞাসাবাদ ও উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের চাপের মুখে স্বীকার করেন তিনি রাজাকার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি মুক্তিবাহিনীর কাছে ধরাও পড়েন। এরপর বন্দী অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে ফুট ফরমাশের কাজ করেন। এজন্য তাদের প্রাণ ভিক্ষা দেওয়া হয়ে ছিলো বলে এই রাজাকার।

একইভাবে বোর্ডের সামনে সামনে আসেন খন্দকার ইউসুফ। তিনিও জেরার এক পর্যায়ে স্বীকার করে তিনি রাজাকার ছিলেন। উলিপুর রেল স্টেশন সংলগ্ন সিন্দুরমতি ব্রিজ পাহারত অবস্থায় মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন।

একপর্যায়ে তাদেরকে যাচাই বাছাই কমিটি কক্ষ ত্যাগ করতে বলেন। বাইরে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভের মুখে পড়ে দ্রুত সটকে পড়েন দুই রাজাকার।

মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা করতে এ দেশীয় দোসরদের দিয়ে গঠন করা হয় রাজাকার বাহিনী। খুলনায় জামায়াত নেতা এ কে এম ইউসুফের নেতৃত্বে প্রথম রাজাকার প্লাটুন শপথ গ্রহণ করে। এরপর সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয় এই বাহিনীটি।

রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মতই এ দেশের মানুষদের অত্যাচার, নির্যাতন, লুট, অগ্নিসংযোগে জড়িত ছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে তারাই পথ দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িঘরে নিয়ে যেতো। মুক্তিযুদ্ধের পর পর বিপুল সংখ্যক রাজাকারকে গ্রেপ্তার করা হয়। বছর দুয়েক পর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা হলেও মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল তাদের বিচার চলছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দালাল আইন প্রত্যাহার করে সবাইকে মুক্ত করে দেয়া হয় কারাগার থেকে।

ঢাকাটাইমস/০৫ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি