খালেক মন্ডলসহ চারজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত

প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:৩০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এমপি সাতক্ষীরার মোহাম্মদ আব্দুল খালেক মন্ডলসহ (৭২) চারজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

বুধবার ধানমন্ডিস্থ তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক খানও উপস্থিত ছিলেন। 

আব্দুল খালেক মন্ডল ছাড়া অন্য তিন আসামি হলেন-  সাতক্ষীরা সদর থানার বাসিন্দা এম আব্দুল্লাহ-আল-বাকী (১০২), খান রোকনুজ্জামান (৬৪), জহিরুল ইসলাম ওরফে টেক্কা খান। আব্দুল খালেক মন্ডল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। বাকি তিনজন পলাতক। আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

তদন্ত সংস্থা জানায়, ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট এ মামলার তদন্ত শুরু হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষ হয়। এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৬০ জনকে। এর মধ্যে মানীত সাক্ষী ৩৩ জন এবং জব্দ তালিকার সাক্ষী আটজন। ৫২ পৃষ্ঠা প্রতিটিতে ছয় খণ্ডে এ তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

অভিযোগ-১: ১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট সকাল ৮ ঘটিকার দিকে বুধহাটা খেয়াঘাটে বেতনা নদীর পাড়ে আফতাবউদ্দিন ও সিরাজুল ইসলামকে রাজাকার কমান্ডার ইছাহাক (মৃত) ও তার সহযোগীরা গুলি করে  হত্যা করে। অপর চারজন খলিলুর রহমান, মো. ইমাম বারী,  মো. মুজিবর রহমান ও ইমদাদুল হককে রাজাকার সদর দফতর ও নির্যাতন কেন্দ্র ডায়মন্ড হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করে।

অভিযোগ-২: ১৯৭১ সালেরর ১ ভাদ্র ভিকটিম কোমরউদ্দিন ঢালীকে তৎকালীন সাতক্ষীরা মহাকুমার রাজাকার কমান্ডার এম আব্দুল্লাহ আল বাকী, খান রোকনুজ্জামান ১০/১২ জন রাজাকার তার বাড়ি থেকে ধরে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে ধুলিহর বাজার থেকে সাতক্ষীরা জেলার দিকে নিয়ে যায়। পরে তাদের মৃতদেহ বেতনা নদীর পাড়ে পাওয়া যায়।

অভিযোগ-৩:  ১৯৭১ সালের ১ ভাদ্র বেলা তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার দিকে রাজাকার কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল বাকী, রোকনুজ্জামান খানসহ চার থেকে পাঁচজন মিলে সবদার আলী সরদারকে চোখ বেঁধে পিকআপে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ-৪: ভিকটিম মৃত সোহেল উদ্দিন সানা তার বড় ছেলে আব্দুল জলিল সানাকে সাথে নিয়ে ওই একই তারিখে বুধহাটা বাজার অতিক্রম করাকালে রাজাকার কমান্ডার মৃত ইছাহাক ও তার সঙ্গীয় রাজাকারদের হাতে আটক হয়। পরে তাকে ডায়মন্ড হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরবর্তী সময়ে সোহেল সানার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ-৫: ১৯৭১ সালে আষাঢ় মাসের ৭ তারিখ বেলা সাতটার দিকে ভিকটিম আবুল হোসেন ও তার ভাই গোলাম হোসেন তাদের বাড়ির দক্ষিণ পাশে হালচাষ করতেছিলেন। গোলাম হোসেন ৯টার দিকে বাড়িতে নাস্তা খেতে এলে আসামি আব্দুল খালেক মন্ডল তার সঙ্গীদের নিয়ে রাজাকার জহিরুল ইসলাম টেক্কা খানসহ ১০/১২ জন রাজাকারকে সাথে নিয়ে আবুল হোসেনকে জমিতে চাষরত অবস্থা থেকে ধরে নিয়ে পেছনের পাটক্ষেতে গুলি করে হত্যা করে।

অভিযোগ-৬: ১৯৭১ সালের ২ ভাদ্র  সকাল ৯টার দিকে ভিকটিম মো. বছির আহমেদ ডিফেন্সে ডিউটি করাকালীন বাশদহ বাজারের ওয়াপদার মোড় হতে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে ও তার বুড়ো আঙ্গুলের রগ কাটিয়ে দেয়।

অভিযোগ-৭: ১৯৭১ সালের জ্যেষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি সময়ে বেলা ১০টার দিকে আসামি আব্দুল খালেক মন্ডল একদল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও আসামি রাজাকার কমান্ডার জহিরুল ইসলাম টেক্কা খান কাথন্ডা প্রাইমারি স্কুলে স্থানীয় গ্রামবাসীদের ডেকে মিটিং করে ঘোষণা দেন যারা আওয়ামী লীগ করে, যারা মুক্তিযুদ্ধে গেছে তারা কাফের।

এরপর তারা কাথন্ডা ও বৈকারী গ্রামের আওয়ামী লীগ করা মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া লোকদের বাড়িঘরের মালামাল লুট করে ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। সেই সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দুই সদস্য মৃত গোলাম রহমানের স্ত্রী আমিরুনকে তার বসতবাড়ির রান্নাঘরের পেছনে আটক করে ধর্ষণ করে। এ ছাড়া বৈকারী গ্রামের ছফুরা খাতুনকে মৃত শরীয়তউল্লাহর ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে চার পাকিস্তানি সৈন্য ধর্ষণ করে। 

(ঢাকাটাইমস/০৮ফেব্রুয়ারি/এমএবি/জেবি)