পাবনায় নিরাপদ রক্ত সংকটে ৫৪৫ জন থ্যালাসেমিয়া রোগী

প্রকাশ | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৮:৫৬

খাইরু ইসলাম বাসিদ, পাবনা থেকে

পাবনা জেলায় থ্যালাসেমিয়া রোগের ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। নিরাপদ রক্ত সংকটে পড়েছেন শ শ থ্যালাসেমিয়া রোগী। থ্যালাসেমিয়া একটি ঘাতক ব্যাধি। এ রোগের ওষুধ আজও বের হয়নি। এ রোগের হাত থেকে বাঁচতে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের প্রতি মাসে অন্যের রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। যা খুবই দুষ্প্রাপ চিকিৎসা ও কষ্টদায়ক। নিরাপদ রক্ত সংকটে পড়েছে পাবনা জেলার ৫৪৫ জন থ্যালাসেমিয়া রোগী।

পাবনা জেলায় থ্যালাসেমিয়া নিয়ে প্রায় নয় বছর কাজ করছে চাটমোহরস্থ বেসরকারি সংস্থা মানব সেবা উন্নয়ন সংস্থা। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলু বলেন, থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা কঠিন কিংবা ঝুঁকিপূর্ণই নয়, অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশের বেশির ভাগ মানুষের পক্ষে এই চিকিৎসা চালানো দুঃসাধ্য। বিশ্বে বর্তমানে প্রতি বছর যে এক লাখ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে তার প্রায় ৭ শতাংশই বাংলাদেশের। বিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর দেশে ১২ হতে ১৫ হাজার থ্যালাসেমিয়া-আক্রান্ত শিশু জন্মগ্রহণ করে এবং তাদের অধিকাংশই মারা যায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে জনসচেতনতা থাকা দরকার, এমনকি চিকিৎসকদের মধ্যেও যে সেই সচেতনতার অভাব আছে।

চাটমোহরস্থ মানব সেবা উন্নয়ন সংস্থা সূত্রে জানা যায়, পাবনার ৯টি উপজেলায় ৫৪৫ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীর তথ্য পাওয়া গেছে। সংস্থাটি বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের (বিএনএফ) সহায়তায় পাবনা জেলায় ২০০৮ সাল থেকে প্রতিটি থ্যালাসেমিয়া রোগীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে বেজলাইন সার্ভে করে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৫৪৫ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীর সন্ধান পেয়েছে। এর মধ্যে ২৯৬ জন মহিলা ও ২৪৯ জন পুরুষ থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী রয়েছে। এসকল অসহায় থ্যালাসেমিয়া রোগীদের মানব সেবা উন্নয়ন সংস্থা থেকে প্রতি মাসে ব্লাড ব্যাগ, ব্লাড সেট, ওষুধ, পরামর্শসহ সবধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে বলে জানা গেছে। তবে এসব সহযোগিতা রোগীরা পেলেও নিরাপদ রক্ত সংকটে ভুগছে তারা। অনেক সময় নিজের আতী¡য়-স্বজন/পরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে না পাওয়ায় ব্লাড ব্যাংক বা বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে যে সব রক্ত কিনে থ্যালাসেমিয়া রোগীর শরীরে দেয়া হচ্ছে তাতে ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে মারাত্মক আকারের। এই সংস্থাটি স্কিলিং টেস্ট (ছয়টি রোগ) করাতে পারে না আর্থিক সংকটের কারণে। সরকারিভাবে ২৫০ টাকা করে নেয়া হয়। 

পাবনা জেলার ২৫০ শয্যার হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মঞ্জুরা রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি ভয়াবহ ব্যাধি যে রোগের ওষুধ নেই। এ রোগের চিকিৎসাও দুষ্প্রাপ, প্রতি মাসে রক্ত নিয়ে বাঁচতে হয়। রক্ত নেয়ার খরচটাও বেশি যা মধ্যবিত্ত-গরিবদের পক্ষে একেবারেই অসাধ্য। তবে এজন্য গণসচেতনতা খুবই দরকার। অন্যান্য চিকিৎসকরাও অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, থ্যালাসেুময়া রোগের বিষয়ে জনসচেতনতা দরকার।

চাটমোহর উপজেলার কাটাখালি গ্রামের হতদরিদ্র অসহায় থ্যালাসেমিয়া রোগী মোছা. তন্নির পিতা আবু সামা বলেন, আমার দুটি মেয়েকে প্রতিবার রক্ত প্রদানের সময় রক্তের ব্যাগ, সেট, প্রয়োজনীয় ওষুধসহ রক্ত স্কিলিং টেস্ট করতে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। যা আমাদের পক্ষে খুব কষ্টসাধ্য।

জগতলা গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে দিলদার, শাহ আলমের মেয়ে সানু থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলেও তার আর্থিক সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। তবে গত আট বছর ধরে মানব সেবা উন্নয়ন সংস্থা থ্যালাসেমিয়া রোগীদের রক্তের ব্যাগ, সেট ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা এগিয়ে এসেছে। সংস্থাটির সহযোগিতা না পেলে অর্থের অভাবে বাঁচাতে পারতো না।

থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত দিলদার হোসেন জানান, এক মাস পর পর রক্ত নিতে খুবই কষ্টে পরতে হয়। আত্মীয়-স্বজনের রক্ত না পেলে নিরাপদ রক্ত পাওয়া যায় না। 

এ ব্যাপারে মানব সেবা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলু ঢাকাটাইমসকে বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি ঘাতক ব্যাধি যার ওষুধ আজও বের হয়নি। চিকিৎসাও ব্যয়বহুল, তাই আমরা এই অসহায় থ্যালাসেমিয়া রোগীদের বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের সহায়তায় বিভিন্ন সহযোগিতা বিনামূল্যে দিয়ে আসছি। তবে নিয়মিত নিরাপদ রক্ত যোগার করতে পারলে এসব রোগী বিপদমুক্ত হবে। এ মুহূর্তে রোগীদের যাতায়াতের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স জরুরি। একটি হাসপাতাল পাবনাতে করা হলে এসব রোগী উপকৃত হবে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা পাবনাতে করা দরকার।

তিনি আরও জানান, বিয়ের পূর্বে প্রত্যেকের রক্ত পরীক্ষা করা জরুরি। তিনি এ ব্যাপারে সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা কামনা করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/০৯ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/জেবি)