দাদির কুলখানিতে যাওয়ার পথে নিজেরাই লাশ

প্রকাশ | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৭:৩২ | আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৮:৪৩

রাজীবুল হাসান, ভৈরব প্রতিনিধি

দাদির কুলখানিতে অংশ নিতে কিশোরগঞ্জ যাচ্ছিলেন হালিমা বেগম। সঙ্গে স্বামী, সন্তান ও ছোট বোন। পথে দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসে থাকা আরো তিন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রাণ হারায় এই চারজনও। কুলখানির বদলে তারা বাড়ি গেলেন লাশ হয়ে।

হালিমা বেগমের স্বামী হাসান রিকশা চালান ঢাকায়। কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ছাতিরচর গ্রামের হাসান (৩৫) ঢাকায় থাকেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। গত শুক্রবার তার দাদিশাশুড়ি এংরেজ বানু বার্ধক্যজনিত রোগে মারা যান। আজ রোববার তার কুলখানি। দাদিশাশুড়ির সেই দোয়ায় অংশ নিতে স্ত্রী হালেমা বেগম (২৬), শ্যালিকা ঝুমা বেগম (১৫) ও একমাত্র ছেলে ঈশানকে (৮) নিয়ে অন্য আরো তিন পরিবারের সঙ্গে একটি মাইক্রোবাসে কিশোরগঞ্জ যাচ্ছিলেন।
হাসানের শ্যালক বাছির বলেন, একটি শোক (দাদির মৃত্যু) কাটিয়ে না ওঠার আগেই আরো বড় এক শোক এসে ঝাঁপটে ধরল। এক কবরের পাশে আমাদের এখন আরো চার কবর খুঁড়তে হবে।’

বাছিরের চাচাতো ভাই আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমরা অপেক্ষায় ছিলাম ওদের জন্য। আরো আত্মীয়স্বজন আসবে। আজ দাদির জন্য খতম পড়ানো হবে। কিন্তু সব তছনছ হয়ে গেল। এখন আবার দাফন-কাফনে ব্যস্ত হতে হবে আমাদের।’
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, রোববার সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার দড়িকান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হবিগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী অগ্রদূত পরিবহণের যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে হাসানদের মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসে থাকা কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ছাতিরচর এলাকার চারটি পরিবারের ১১ জন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। হাসানের পরিবারের সদস্যরা ছাড়া অন্যরা হলো- মানিক মিয়া (৩৮), মানিকের স্ত্রী মফিয়া খাতুন (২৫), মানিকের ছেলে অন্তর আলম (১২) এবং নাজমুল (৩৫), সাধনা বেগম (৪০), হিরা মিয়া (৩৭) ও নজমুল (৩৪)। দুর্ঘটনায় বাস ও মাইক্রোবাসের আরো কমপক্ষে ১০ যাত্রী আহত হয়। তাদের মধ্যে মাইক্রোবাসের নিহত যাত্রী নিকলীর ছাতিরচরের মানিকের ছেলের বউ শারমিন (২৭) ও নাতি রাব্বি (এক বছর) এবং বাসের যাত্রী ভৈরবের চন্ডিবের এলাকার সিরাজ মিয়া (৪০), একই এলাকার কাওসার মিয়াকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় পাঠোনো হয়েছে।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ভৈরব হাইওয়ে থানা পুলিশ এবং নরসিংদী ও ভৈরব ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকাজ চালান। এ সময় নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ভৈরব হাইওয়ে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক সুরৎহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তে জন্য লাশগুলোর কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

ভৈরব হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম মিজানুল হক জানান, দুর্ঘটনার পর বাসের চালক ও হেলপার পালিয়ে যাওয়ায় আটক করা যায়নি। তবে তাদের গ্রেপ্তারে হাইওয়ে পুলিশের দুটি দল মাঠে কাজ করছে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১২ফেব্রুয়ারি/মোআ)