ভালোবাসার ছোঁয়া বইমেলায়ও

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২২:৩৯ | আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১০:৩১

জহির রায়হান, ঢাকাটাইমস

আজ ছিল বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আর এই ভালোবাসা দিবসের ছোঁয়া ছিল বইমেলায়ও। আজ বইমেলায় আগত বেশির মানুষের পোশাকে ছিল লালের প্রাধান্য। লাল শাড়ি, হাতে গোলাপ ফুল, খোঁপায় গাঁদা ফুলের মালা পরে আসেন মেয়েরা। আর বেশিরভাগ ছেলের গায়ে ছিল পাঞ্জাবি। এক হাতে ভালোবাসার প্রতীক ফুল আর অন্য হাতে বই এ যেন অন্য এক মুগ্ধতা ছড়ানো দৃশ্য।

মঙ্গলবার মেলা প্রাঙ্গণ মুখরিত ছিল তরুণ তরুণীদের ভিড়ে। আজ মেলার গেইট খোলার সঙ্গে সঙ্গে লাইন লেগে যায় বইপ্রেমিদের। বিকালে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে দোয়েল চত্বর ও টিএসসি পর্যন্ত দেখা যায় দর্শনার্থীদের ঢল।

শব্দশিল্প প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী শরিফু রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, মেলায় ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। আশা করি, সামনে আরও বাড়বে।’

আজ অন্বেশা, চারুলিপি, সিসিমপুর, আগামী, মাওলা ব্রাদ্রার্স, তাম্রলিপি, অনন্যা, রোদেলা, বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্র, অন্য প্রকাশ, সেবা প্রকাশনী, প্রথমা, আদর্শ, ঐতিহ্য, সময় স্টলে ক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়।

তবে বেশ বিছু স্টলে দেখা গেল দোকানিরা বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। তারা জানালেন, আজ মেলায় ভিড় থাকলেও সেই তুলনায় বিক্রি কম। সবাই শুধু সেলফি তোলায় ব্যস্ত। বিশেষ কিছু লেখকের বই বিক্রি হচ্ছে। নতুন লেখকদের বই তেমন কিনছে না কেউ।

সন্ধ্যায় অন্বেশা প্রকাশনীতে আসেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। এ প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে তার প্রথম বই ‘আন্দোলনে- সংগ্রামে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’। এসময় বইটি কিনতে ভিড় লেগে যায়।

লাল রঙের শাড়ি পরে মেলায় বান্ধবীদের নিয়ে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রোদেলা। ঢাকাটাইমকে তিনি বলেন, ‘মেলার মাঝামাঝিতে সাধারণত সব ভালো বই প্রকাশিত হয়। আমি তাই মাঝামাঝি সময়ই মেলায় আসি। এতদিন পত্রিকা থেকে যে বইগুলোর নাম সংগ্রহ করেছি আজ সেগুলো কিনবো।’

ভালোবাসা বলতে তো আর নারী ও পুরুষের প্রেমই নয় বইয়ের সঙ্গেও ভালোবাসা হয়। সেটা বোঝা গেল মিরপুর থেকে আসা কলেজপড়ুয়া মারুফকে দেখে। দুই হাতে বইয়ের ব্যাগ। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘বইমেলার জন্য এক বছর অপেক্ষায় থাকি। আর আমার ভিড়ের মধ্যে বই কিনতে ভালো লাগে।’

তবে আজ মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরেফিরে বেড়াতেও দেখা গেছে অনেককে। আড্ডা দেবার জন্যেও বেশ সুন্দর খোলামেলা জায়গা বইমেলা। আর এজন্য তরুণ-তরুণীরা দল বেঁধে এসেছেন মেলায়। তাদের দেখা গেছে সেলফি তুলতে ব্যস্ত।

ডিএমপি কমিশনারের পরিদর্শন

বিকালে মেলা পরিদর্শনে আসেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বইমেলায় এখন পর্যন্ত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে, এমন কোনো বই প্রকাশিত হয়নি। এমন বই এলে আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

নিরাপত্তার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পোশাকে ও সাদা পোশাকে নিরাপত্তাবাহিনী নিয়োজিত রয়েছে। বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার অধীনে রয়েছে। ডিএমপি ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করছে।

পাইরেট বইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান

পাইরেট বইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে এর জন্য গঠিত টাস্কফোর্স। মঙ্গলবার তারা নয়টি প্রতিষ্ঠানকে মৌখিকভাবে সর্তক করেছে। মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, শিশুদের কর্নারে বড়দের বই, পাইরেট বই, অননুমোদিত বিদেশি লেখকদের বই এসব স্টল থেকে জব্দ করা হয়েছে। প্রকাশনাগুলো সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এ কাজ করলে তাদের স্টল বন্ধ করে দেয়া হবে।

সতর্ক করা প্রকাশনা সংস্থাগুলো হলো, হলি প্রকাশনী, রেজা প্রকাশনী, শিশুসাহিত্য, বইপড়ি, রাতুল গ্রন্থপ্রকাশ, মেলা, প্রিয়প্রকাশ, পিপিএমসি ও জোনাকী প্রকাশনী।

বাংলা একাডেমি থেকে জানানো হয়, মেলার ১৪ দিনে তাদের বিক্রয়কেন্দ্রে ৫০ লাখ ৯০ হাজার টাকার বই বিক্রি হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চাশ ও ষাট দশকের একুশের সংকলন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাবন্ধিক-গবেষক ড. ইসরাইল খান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন ও সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত। সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী।

বুধবারের অনুষ্ঠানসূচি

বুধবার বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সমর সেনের জন্মশতবার্ষিকী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত, অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান এবং কবি পিয়াস মজিদ। সভাপতিত্ব করবেন ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

(ঢাকাটাইমস/১৪ফেব্রুয়ারি/জেআর/জেবি)