বইমেলায় একুশের ছোঁয়া

প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:০১ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:১২

জহির রায়হান, বইমেলা থেকে

বইমেলায় অমর একুশের ছোঁয়া লেগেছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস শুরুর পর থেকেই বইমেলায় আসতে শুরু করেছে হাজারো মানুষ। মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর পর মেলায় আসতে শুরু করেন বইপ্রেমিরা। তাদের পদারণায় মুখর হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। লেখক, পাঠক, প্রকাশক, বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে বইমেলা পরিণত হয়েছে মিলনমেলায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মেলায় ঢোকার প্রবেশ পথে হাজারো বইপ্রেমিদের দীর্ঘ সারি। লাইনে দাঁড়িয়ে এক এক করে তারা বইমেলায় ঢুকছেন। শিশু-বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন মেলায় ঢোকার জন্য। সকাল আটটায় মেলা খুলে দেয়া হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে বইপ্রেমিদের সংখ্যা। দুপুর গড়িয়ে যাওয়া আগেই মেলা প্রাঙ্গণ কানায় কানায় পরির্পূর্ণ হয়ে ওঠে।

অনেক শিশু শরীরে আলপনা ও মাথায় ফুল দিয়ে বইমেলা ঘুরতে এসেছেন। তরুণীদের অনেকের পরনে আছে কালো রঙের শাড়ি। কেউবা সাদা-কালো আবার কেউবা বর্ণমালাখচিত কালো শাড়ি পড়ে এসেছেন। এছাড়া ছেলেদের অনেকে শরীরে শোভা পাচ্ছিল সাদা-কালো রঙের পাঞ্জাবি।

বইপ্রেমিরা মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে তাদের পছন্দের বই কিনছেন। শিশুরাও কিনছেন তাদের পছন্দের বই। অনেকে মেলার ডিজিটাল তথ্য কেন্দ্রে গিয়ে বিভিন্ন তথ্য নিচ্ছেন।

সন্তানকে নিয়ে মেলা ঘুরতে এসেছেন হেমায়েত উদ্দিন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘সকালে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সোজা মেলায় চলে এসেছি। মাতৃভাষার ইতিহাস নিয়ে লেখা বই সন্তানকে কিনে দেব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনাই ধারণ করে বইমেলা। বিশ্বে আর কোনো দেশ নেই যেখানে এক মাসজুড়ে এমন মেলা হয়।

দর্শনার্থীদের এমন ভিড়ে উজ্জীবিত লেখক, প্রকাশক ও বিক্রেতারাও। তারাও সকাল থেকেই হাজির হয়েছেন বইমেলায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রিও বাড়ছে বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা।

মেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন জনপ্রিয় লেখক ইমদাদুল হক মিলন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, অন্যান্যবারের চেয়ে এবারের মেলার পরিবেশ অনেক ভালো। বইপ্রেমিদের সংখ্যাও অন্যান্য বারের বেশি।যেসব বইপ্রেমি এসে বাংলা ভাষাকে জানছেন এটা ভা্ষা শহীদদের জন্য অন্যরকম শ্রদ্ধা জানানো।

বই বিক্রি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তাম্রলিপির প্রকাশক তরিকুল ইসলাম রনি। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, বইমেলায় বিক্রি অনেক ভালো। পরবর্তীতে আরও যে কয়দিন আছে তাতে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তবে মেলার প্রবেশ পথ নিয়ে কিছুটা অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, সোহরাওয়ার্দীতে ঢোকার জন্য চারটি পথ থাকলেও অনেকের জানা নেই। তারা মনে করেন শুধুমাত্র বাংলা একাডেমির বিপরীত দিকের গেটটি দিয়েই মেলায় ঢোকা যায়। এজন্য ওই গেলে লম্বা লাইন হয়। অন্যান্য গেটগুলোতে তুলনামূলক মানুষ থাকে না। সব গেটই যেন দৃশ্যমান হয় সেজন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

এদিকে বিকাল চারটায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘ধর্মীয় বহুত্ববাদ: বাঙালির গৌরবময় উত্তরাধিকার’ শীর্ষক বক্তৃতানুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. আবদুল মমিন চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেবেন- বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করবেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। এছাড়াও সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

(ঢাকাটাইমস/২১ফেব্রুয়ারি/জেআর/এমআর)