‘কোনো অপরাধ করিনি, আল্লাহ সহ্য করবেন না’

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ থেকে
| আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৮:৪৭ | প্রকাশিত : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৮:৩৬

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের মামলায় বাসচালক জামির হোসেনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া তার পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এই রায় ঘোষণার আগে বাসচালক ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপকালে দাবি করেছেন, তিনি কোনো দোষ করেননি। তাকে এই মামলায় সাজা দিলে আল্লাহ সহ্য করবেন না।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জামির বলেন, ‘সেদিন ছিল বৃষ্টির দিন। আমার গাড়িটি ৪০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার গতিতে ছিল। মহাসড়কটি ছিল প্রায় ফাঁকা। আমি ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা যাবার পথে ঘিওর উপজেলার জোঁকা এলাকায় হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস আমার গাড়িকে সজোরে ধাক্কা দেয়। আমি মাইক্রোবাসটি সাইট দিতে গিয়ে আমার যাত্রীবোঝাই গাড়ি নিয়ে মহাসড়কের বাম পাশের নিচে চলে যাই। এ সময় বড় একটি গাছের সাথে আমার গাড়িটি ধাক্কা লাগে। এরপর আমি সেখান থেকে চলে যাই।’

বাসচালক বলেন, ‘পরে টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পারি দুর্ঘটনায় যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং সাংবাদিক মিশুক মুনীর। টেলিভিশনের মাধ্যমে দুর্ঘটনার চিত্র দেখে আমার খারাপ লেগেছে। এই ঘটনায় আমার গাড়িটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা ঘটাতাম আর আমার গাড়ির গতি বেশি থাকলে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি ছিটকে অনেক দূরে চলে যেত।’

জামির হোসেন বলেন, ‘আমার আইনজীবী মাদব সাহা আদালতকে অনেকবার এ কথাগুলো বলেছেন। কিন্তু আমাকে এসব কথা বলার সুযোগ আদালত দেয়নি।’ তিনি কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, ‘এই ঘটনায় মামলা হওয়ার পর আমি এ পর্যন্ত কোর্টে কোনো হাজিরাই মিস করিনি। হাজিরার দিন আসলেই চুয়াডাঙ্গা থেকে আগের দিন মানিকগঞ্জ এসে রাত্রী যাপন করে পরের দিন হাজিরা শেষ করতাম। কাজকর্ম বাদ দিয়ে হাজিরা দিতে মানিকগঞ্জ এসেছি আবার মানিকগঞ্জ থেকে হাজিরা শেষ করে চুয়াডাঙ্গা চলে গেছি।’

চালক বলেন, ‘আমি ১৯৭৮ সালে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স করেছি। তারা (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) বলেছেন আমার লাইসেন্স নাকি ভুয়া। আমি ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালাই না। আমার লাইসেন্স সঠিক। আমি কোনো অপরাধ করিনি। আদালতের কাছে সঠিক রায় আশা করি।’

জামির বলেন, ‘আপনারা যদি আমার ওপর জোর করে অপরাধ চাপিয়ে দেন সেটা আল্লাহ দেখবেন। আল্লাহ সহ্য করবেন না।’ তিনি বলেন, ‘আমি আদালতের কাছে ন্যায়বিচার আশা করি।’

রায় বিপক্ষে গেলে কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে বাসচালক জামির হোসেন বলেন, ‘রায় বিপক্ষে গেলে বাধ্য হয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করতে হবে। আমি সেটা করবো।’ তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা তো শিক্ষিত মানুষ আপনারাই বলেন, আমি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা ঘটাতাম তাহলে হয়তো মাইক্রোবাসটি আমার গাড়ির নিচে যেত। অথবা ছিটকে দুড়ে চলে যেত। সেটা তো যায়নি। তাদের গাড়ির ড্রাইভার আমার গাড়িকে আঘাত করে রাস্তায় উপর মধ্যে ছিল।’

বাসচালক বলেন, ‘এই দুর্ঘটনার পর থেকে আমি মানসিক চাপে আছি। আমাকে কোনো মালিক গাড়ি চালাতে দেন না। আমি গাড়ি চালাতে পারছি না। চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে পরিবহনের সিরিয়াল কেটে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকম আমার সংসার চলছে। গাড়ি চালাতে না পারায় আমার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আমি মানবেতর জীবনযাপন করছি।’

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শালজানা গ্রামে ‘কাগজের ফুল’ চলচ্চিত্রের দৃশ্যায়নের স্থান দেখে মাইক্রোবাসে ঢাকায় ফিরছিলেন তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ তাঁদের সহকর্মীরা। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় তাঁদের বহনকারী মাইক্রোবাসটির সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এতে আহত হন ওই মাইক্রোবাসে থাকা আরও কয়েকজন। প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর এই মামলার রায় হয়।

(ঢাকাটাইমস/২২ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :