কাজী আলিম-উজ-জামানের ‘সন্ধ্যায় ফেরার সময়’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:৪৯

কাজী আলিম-উজ-জামানের গল্পগ্রন্থ ‘সন্ধ্যায় ফেরার সময়’-এর তাবৎ বিষয় যেন গণমানুষেরই মনের কথাকে অম্লমধুর রম্য ভাষায় গল্পের জাল বোনে পাঠক-পাঠিকার জন্য। এটি এক অর্থে লেখক হিসেবে গল্পকারের সামাজিক দায়িত্ববোধ তথা বিপুল জনগোষ্ঠীর সার্বিক মুক্তির ভাষা চিত্ররূপ দান করেছে।

গণমানুষের প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির বিস্তর ব্যবধানকে তিনি যেমন ফুটিয়ে তুলেছেন তেমনি জুতসই শ্লেষের মাধ্যমে করেছেন তীব্র প্রতিবাদ। এ গ্রন্থের প্রতিটি গল্পের তাৎপর্যে নিয়মিত পাঠকের স্ব-স্বপ্নের সমর্থন রয়েছে। এর ভাষা তথা প্রকাশভঙ্গি চিত্তাকর্ষক। আর এর বিষয়বস্তু, বুননকৌশল তথা সার্বিক মালমসলা পাঠকপ্রিয়তার দাবি রাখে নিঃসন্দেহে। কেননা দুই মলাটের মধ্যে আবদ্ধ এ-গল্পগুলো যুগপৎ গল্প হয়েও সত্য আর সত্য হয়েও গল্প। কথায় বলে সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়।’ এ গল্পগ্রন্থ যেন সময়ের একফোঁড় হিসেবেই প্রতিভাত হয়েছে।

উত্তম পুরুষে বলা ‘এই রোদ এই ছায়া’ গল্পে স্মৃতি-অনুষঙ্গের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে বাস্তব-অবাস্তবের এক অদ্ভুত দোলাচলের মধ্যে থাকে প্রধান চরিত্রটি। স্ত্রী দরজায় দোরঘণ্টি বাজালে সেই শব্দও বিভ্রম মনে হয় তার।

‘ছায়াদের ঘর-সংসার’ গল্পের বাস্তব ও কল্পনা যেন একাকার। বন্ধু-দম্পতির সঙ্গে পথে দেখা হয়েছিল লেখকের। তারা তাকে বাসায় যাওয়ার নিমন্ত্রণ করেছিল। কিন্তু তারা পৌঁছার আগে সে পৌঁছে গেল তাদের ফ্ল্যাটে। ফ্ল্যাটে কীভাবে প্রবেশ করল সেই প্রশ্ন যেন অবান্তর। সেখানে অপেক্ষা করতে করতে চা বানিয়েও খেল। পরে বন্ধু দম্পতি এলে তাদের সঙ্গে আড্ডাও হলো খানিকটা। কিন্তু একই সময়ে আবার বাংলা একাডেমির বইমেলাতেও ঘুরে বেরিয়েছে সে। ঘরে ফেরার পর বন্ধুর স্ত্রী যখন ফোনে জানাল যে, মোবাইল ফোনটা ফেলে এসেছে তাদের ফ্ল্যাটে। তখন এক অদ্ভুত বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যায় সে। পাঠ শেষ করে পাঠক যেন অনুভব করে গল্পের চরিত্রের বিভ্রান্তি সঞ্চারিত হয়েছে তার নিজের মধ্যেও।

‘সন্ধ্যায় ফেরার সময়’ নিখাদ একটি প্রেমের গল্প। শুধুই নস্টালজিয়া, শুধু একটি দীর্ঘশ্বাস বেশ কিছুটা সময় আলোড়িত করে রাখে পাঠককে।

প্রকাশের আগে সবগুলো গল্প পড়েছেন কবি, ছোটগল্পকার বিশ্বজিৎ চৌধুরী। তাঁর একটি সংক্ষিপ্ত মন্তব্য জায়গা পেয়েছে বইটিতে। এতে তিনি মন্তব্য করেছেন ‘বিষয়ের দিক থেকে নানা বৈচিত্র্য আছে এই অনতিপরিসর গল্পগ্রন্থে। ‘জনজীবনমন্ত্রী’, ‘যাপিত জীবন’ ‘দুই সাহিত্যিক’ বা ‘জীবন যখন আনন্দময়’ গল্পগুলোতে কিছুটা রূপকের আশ্রয় নিয়ে আমাদের সমসাময়িক সমাজব্যবস্থার অসঙ্গতিকে তুলে ধরেছেন গল্পকার। উইট ও হিউমারের ব্যবহারে আমাদের সিস্টেমের তথাকথিত ‘সিরিয়াস’ বিষয়গুলো কতটা হাস্যকর। তা-ই যেন তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি। কাজী আলিম-উজ-জামানের গল্প পাঠককে রসে মজিয়ে রাখবে না শুধু, কিছুটা ভাবাবেও এই আমার ধারণা।’

এটি তাঁর দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ। প্রকাশ করেছে অ্যাডর্ন পাবলিকেশনস। প্রচ্ছদ মাসুক হেলাল। দাম ১৭০ টাকা। বইমেলায় অ্যাডর্নের স্টল নম্বর ২৬৬-২৬৯।

কাজী আলিম-উজ-জামান পেশায় সাংবাদিক। দৈনিক প্রথম আলোর সহকারী বার্তা সম্পাদক। জুন ২০১৬ থেকে প্রথম আলোয় তিনি লিখছেন ধারাবাহিক প্রতিবেদন ‘ঢাকার পাঠাগার’, যা অদ্যাবধি চলছে।

কাজী আলিম-উজ-জামানের জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৭৮, বাগেরহাটে। লেখাপড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে।

লেখকের প্রকাশিত গ্রন্থ:

জোছনার মেয়ে বৃষ্টির বোন (কবিতা, রোদেলা প্রকাশনী ২০১৫)

ভালোবাসার হরেক রং (গল্প, রোদেলা প্রকাশনী ২০১৫)

ভাঙা কাঠের সেতু (কবিতা, অ্যাডর্ন পাবলিকেশনস ২০১৬)

সন্ধ্যায় ফেরার সময় (গল্প, অ্যাডর্ন পাবলিকেশনস ২০১৭)

(ঢাকাটাইমস/২৩ফেব্রুয়ারি/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :