‘আপা’ ডাক জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:৪৬ | আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২০:১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বগুড়ায় একটি সরকারি হাসপাতালে আপা ডাকায় রোগীর স্বজনের ওপর শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের হামলার অভিযোগের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, তিনি এই ডাক উপভোগ করেন। তিনি বলেন, সবাই তাকে ভয় না পেয়ে আপা বলে ডাকেন, এটাই তার জীবনের বড় অর্জন।

শনিবার রাজধানীতে পোশাক শিল্প নিয়ে আয়োজন ঢাকা অ্যাপারেলস সামিটে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বক্তব্য রাখার আগে ডায়াসে বসে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেখানেও তিনি তাদের সংগঠনের নানা দাবি তুলে ধরেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে পোশাক শিল্পের উন্নয়নে তার ব্যক্তিগত পরামর্শ, সরকারের নানা উদ্যোগের পাশাপাশি তার সঙ্গে সিদ্দিকুর রহমানের কথোপকথনের বিষয়টিও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের নেতা তো আপা, আপা বলে সব কথাই আমাকে বলে দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাকে যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভয়ে ভয়ে কথা না বলে আপা বলে কথা বলেন, এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আর্জন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বসে বসে আনেক আবদারই শুনেছি। পোশাকশিল্পে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।’

বাংলাদেশে বড় বোনকে আপা নামে সম্বোধন করার রীতি আছে। অপরিচিত নারীদেরকেও এই নামে ডাকা হয়। তবে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে আপা ডাকা নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড বেঁধে যায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী এক রোগীর স্বজন ওই নারী চিকিৎসককে আপা বলে জানতে চান ফ্যানের সুইচটা কোথায়। এতে তাকে অপমান করা হয়েছে অভিযোগ তুলে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা একজোট হয়ে ওই রোগীর স্বজনকে বেদম পারপিট করেন। তারা তাকে হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে ধরে নিয়ে পিটুনির পাশাপাশি, কান ধরে উঠবসও করায়। পরে তাকে পুলিশে দেয়া হয়। এরপর আবার শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে যায়।

এই ঘটনার ভিডিও প্রকাশের পর শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের ইন্টার্নশিপ বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। জানিয়েছেন, রোগীর স্বজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহারকারী চিকিৎসকদের তালিকা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এই পরিস্থিতিতে ‘আপা’ ডাককে জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছুঁয়ে যায় উপস্থিত শ্রোতাদেরকে। মঞ্চে থাকা ব্যবসায়ী নেতা এবং উপস্থিত দর্শক সবাই হাততালি দিয়ে উঠেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে দেশের উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ২০১৮ সালে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলবে। সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। বিজিএমইএ চাইলে তাদের দুই থেকে তিনটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দেওয়া হবে।

চারলেনের ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ককে ৬ লেনে উন্নীত করা বিষেয়টিও সরকারের পরিকল্পনায় আছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়ন নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। কারখানার সংস্কার কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে বিভিন্ন ব্রান্ড ও ক্রেতাদের আহ্বান জানান তিনি। বলেন, ‘সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। এ ব্যাপারে বিভিন্ন ব্রান্ড ও ক্রেতারা সহায়তা করতে পারেন। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’

অনুষ্ঠানে ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মাদ নাসির।

(ঢাকাটাইমস/২৫ফেব্রুয়ারি/জেআর/ডব্লিউবি)