লিটন হত্যা: স্বীকারোক্তি দিতে রাজি কাদের খান

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৯:৫৬ | আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২২:০৬

গাইবান্ধা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলায়  গ্রেপ্তার কাদের খান পুলিশের কাছে খুনের ঘটনা সম্পর্কে তার পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও বাস্তবায়ন সম্পর্কে স্বীকারোক্তি দিতে সম্মত হয়েছেন। রিমান্ডে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদে ইতিমধ্যে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এবং বারবার শুধুই বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন।
পুলিশের বিভিন্ন সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র আরো জানায়, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় গত বছর হিন্দু মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরেও তার সংশ্লিষ্টতার তথ্য জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া গেছে।

এমপি লিটন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ জোগানদাতা হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর ২১ ফেব্রুয়ারি কাদের খানকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন আদালতের মাধ্যমে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ২২ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে পুলিশ কাদের খানের ছাপড়হাটীর গ্রামের বাড়ির উঠানের মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করে লিটন হত্যায় ব্যবহৃত একটি পিস্তল, ম্যাগজিন ও ৬ রাউন্ড গুলি।

নব্য জেএমবির নামে মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর
সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় গত বছরের অক্টোবর মাসে নব্য জেএমবির নামে একাধিক মন্দির ও দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা কাদের খানের নির্দেশ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী সংঘটিত হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

৯ অক্টোবর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুরের কামারপাড়া সড়কসংলগ্ন কালিমন্দিরের কালিপ্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ এ অভিযোগে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপড়হাটি ইউনিয়নের মন্ডলেরহাট থেকে তখন চারজনকে নব্য জেএমবি সদস্য হিসেবে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন কাদের খানের ভাতিজা সুন্দরগঞ্জের ছাপড়হাটি ইউনিয়নের খানপাড়া পশ্চিম ছাপড়হাটী গ্রামের ইউসুফ খানের ছেলে ফয়সাল খান ফাগুন (১৭) এবং কাদের খানের সুন্দরগঞ্জের পশ্চিম ছাপড়হাটি খানপাড়া গ্রামের বাড়িতে কর্মরত আব্দুল ওয়াহাবের ছেলে নজরুল ইসলাম খান (৩৫), আব্দুল হামিদ মিয়ার ছেলে আশিকুল ইসলাম (১৬) ও আদর আলীর ছেলে শহিদ মিয়া (১২)। তারা মোটরসাইকেলে এসে মন্দিরের কালিপ্রতিমা ভেঙে সেখানে  নব্য জেএমবির দায়স্বীকার সংক্রান্ত হাতে লেখা একটি চিঠি রেখে যায়।

পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে তারা বলেছে, এর আগে ৮ অক্টোবর রাতে মোটরসাইকেল যোগে গিয়ে পশ্চিম ছাপড়হাটি ডুরামারি গ্রামে নরেন্দ্র চন্দ্র বর্মণের বাড়ির কালিমন্দির আগুন দিয়ে পুড়ে দেয়। এ ছাড়া ২২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে সাদুল্যাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব কেশালী ডাঙ্গা সর্বজনিন মন্দিরেরও মূর্তি ভাঙচুর করে। একই দিনে আরেকটি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরেরও পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু তার আগেই তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ভাঙচুর করার পরে প্রতিটি মন্দিরেই নব্য জেএমবির নামে চিঠি ফেলে আসা হয়।

সুন্দরগঞ্জ জেএমবি প্রভাবিত এলাকা তা প্রমাণ করতেই কাদের খান সুপরিকল্পিতভাবে তার নিজের ভাতিজা ফয়সাল খান ফাগুনসহ নিজস্ব কাজের লোকদের ব্যবহার করেন। মন্দিরের ভাঙচুরের সম্পৃক্ততার সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা ইতোমধ্যে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের ভোটের নিশ্চয়তা
কাদের খান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ছাড়াও বিএনপি-জামায়াতের ভোট পাবেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে আশাবাদী ছিলেন। সে কারণেই তিনি মরিয়া হয়ে এমপি লিটনকে তার পথের কাঁটা মনে করে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এ ছাড়া কাদের খান বিগত নির্বাচনে তার পরাজয় এবং তার আগে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের জাপার সাংসদ থাকালে সংগঠিত বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত বিষয়ে তিনি এমপি লিটনকে দায়ী করেন। সেজন্য এক বছর আগে থেকেই এমপি লিটনকে  হত্যার পরিকল্পনা করে আসছিলেন।

গত ৩০ ডিসেম্বর এমপি লিটনকে তার বাড়িতে খুন করার পরিকল্পনা ছিল তার। কেননা ৩১ ডিসেম্বর এমপি লিটনের ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিমানের টিকিট না পাওয়ায় তিনি ওই দিন ঢাকা যেতে পারেননি। উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক চন্দন সরকার এবং তার অন্য অনুসারীদের কাছ থেকে পাওয়া এই সংবাদের ভিত্তিতে ৩১ ডিসেম্বর এমপি লিটনকে তার বাড়িতে হত্যা করতে সক্ষম হন।

(ঢাকাটাইমস/২৫ফেব্রুয়ারি/মোআ)