মেলায় বই বিক্রিতে রেকর্ড

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২০:২৪ | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২২:৫৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

শেষ হয়েছে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা। এবারের মেলা বই বিক্রির ক্ষেত্রে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এবারের বইমেলায় ৬৫ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে বলে বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে। গত বছর বই বিক্রি হয়েছিল ৪০ কোটি টাকার কিছু বেশি। এ হিসাবে প্রায় ২৫ কোটি টাকার বই বেশি বিক্রি হয়েছে মেলায়।  

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বইমেলার সদস্য সচিব জালাল আহমেদ জানান, ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্টল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং আজকের সম্ভাব্য বিক্রি যুক্ত করলে বলা যায় এবার বইমেলায় মোট ৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। গতবার মেলায় ৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছিল।

জালাল আহমেদ বলেন, এবারের বইমেলা সুন্দর হয়েছে বলে সবাই আমাদের  প্রশংসা করেছেন। বইমেলাকে প্রতিবারই একাডেমি সুন্দরভাবে সাজাতে চায়। প্রতিবারই মেলা সুন্দর হয়। প্রতিবারই আমরা আগেরবারকে ছাড়িয়ে যাই। এবার আঙ্গিক সৌন্দর্য ও সামগ্রিক পরিকল্পনায় কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়।

সদস্য সচিব বলেন, গতবারের তুলনায় এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে পূর্ব দিকের চেয়ে পশ্চিম দিকে বেশি স্টলের ব্যবস্থা করা হয়। এর ফলে মেলা বড় রাস্তার আরও কাছাকাছি আসে। ৮০ হাজার বর্গফুট জায়গায় ইট বিছানো হয়। অনেক জায়গা মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়। প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করা হয়। বৃষ্টির কারণে যাতে ক্ষতি না-হয় সেজন্য স্টলে ত্রিপলের বদলে টিনের ছাউনি দেয়া হয়।

জালাল আহমেদ জানান, নতুন বই প্রদর্শনের জন্য এবার নতুন বইয়ের স্টল বানানো হয়। এই স্টলে প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত যতো নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। এই ব্যবস্থা দর্শক-ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায়। টিএসসি ও দোয়েল চত্বরে দুইটি এলইডি মনিটর স্থাপন করা হয়। এসব মনিটরে মেলা সম্পর্কিত প্রাথমিক তথ্য প্রদর্শিত হয়। শিশু কর্নারে ‘মাতৃদুগ্ধ সেবাকেন্দ্র’ স্থাপন করা হয়। তিনি বলেন, এছাড়া দুই প্রাঙ্গণে পর্যটনের দুইটি খাবারের স্টল ছিল। একাডেমিতে ছিল কর্মচারী ইউনিয়নের পরিচালনায় একটি খাবারের স্টল। পুলিশের পক্ষ থেকে উভয় অংশে বিনামূল্যে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। শারীরিক প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে হুইল চেয়ারের সংখ্যা গতবারের চেয়ে আরও বাড়ানো হয়েছিল।

জালাল আহমেদ আরও বলেন, এবারের বইমেলায় কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল আমাদের। যেমন, (১) দোয়েল চত্বর ও টিএসসি-র দিক থেকে মূল প্রবেশ পথে পরিকল্পনা অনুযায়ী দৃষ্টিনন্দন গেইট নির্মাণ করা যায়নি। অন্য গেইটগুলোও আমাদের স্বপ্নের মতো সুন্দর আমরা করতে পারিনি। (২) এলইডি মনিটর স্থাপিত হয়েছিল বটে তবে তা মেলা শুরুর বেশ কয়েকদিন পরে। ফলে এটি খুব কার্যকর হয়েছে এটা বলা যাচ্ছে না। (৩) প্রত্যেক চত্বরে আমরা স্টল নম্বরযুক্ত ইলেকট্রিক বোর্ড লাগাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা করতে পারিনি। (৪) পূর্বদিকের শৌচাগারটি যতো উন্নত আমরা করতে চেয়েছিলাম, ততো উন্নত সেটি ছিল না। (৫) মোড়ক উন্মোচনের জন্য যে মঞ্চটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমরা তৈরি করেছিলাম সেটি আকারে ও উচ্চতায় আরও বড় হলে খুব ভালো হতো। (৬) বসার ব্যবস্থা যা করা হয়েছিল তা পর্যাপ্ত ছিল না।

আয়োজক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য বলেন, গভীর বিশ্লেষণে আরও সীমাবদ্ধতা হয়তো আমরা বের করতে পারবো। কিছুদিন পরেই এই মেলার বিভিন্ন দিক নিয়ে সংস্কৃতিমন্ত্রী ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের নির্দেশে আমরা যে মূল্যায়ন-সভা করবো তাতে এসব দিক নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করা হবে। এসব আলোচনা থেকে পরামর্শ ও নির্দেশনা নিয়ে আগামী বইমেলা আরও সুন্দর, আরও উন্নত করার পরিকল্পনা ও কার্যক্রম আমরা শুরু করবো। 

৩৬৪৬টি নতুন বই প্রকাশ

এবারের মেলায় ৩৬৪৬টি নতুন প্রকাশিত হয়েছে। তবে অনেক প্রকাশক তাদের নতুন সব বইয়ের তথ্য দেয়নি বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমি।

সদস্য সচিব জালাল আহমেদ জানান, বইমেলায় বাংলা একাডেমির গতকাল ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক কোটি ৫৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩০৬ টাকার বই বিক্রি করেছে। ২০১৬ সালের তুলনায় এই বিক্রি ২২ লাখ টাকা বেশি বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৮ফেব্রুয়ারি/জেআর/জেবি)